আল্পস পর্বতে বিপর্যয় এড়াতে গবেষণা ও প্রতিরোধ পরিকল্পনা
পাহাড় আর পর্বতের মধ্যে অপেক্ষাকৃত নিচুগুলোকে পাহাড় এবং সবচেয়ে উঁচুগুলোকে পর্বত বলা হয় আর আরো নিচু জায়গাগুলোকে টিলা বলা হয়। আল্পস পর্বতমালা হচ্ছে ইউরোপের সর্বোচ্চ এবং সবচেয়ে বিস্তৃত পর্বতমালা।
আল্পস পর্বতমালা (ইংরেজি Alps অ্যাল্প্স, মূলতঃ লাতিন Alpes আল্পেস্ থেকে এসেছে) যার পূর্বে অস্ট্রিয়া ও স্লোভানিয়া এবং পশ্চিমে ইতালি, সুইজারল্যান্ড, লিশ্টেনস্টাইন হয়ে জার্মানি থেকে ফ্রান্স পর্যন্ত বিস্তৃত। ধারণা করা হয় আল্পস পর্বতমালা একসময় সাগর ছিল কেননা এর চূড়া থেকে পাওয়া প্রবাল, মাছের আশ, শামুকের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে।
সমুদ্র গবেষক মার্টিন নোজে ও মিউনিখের লুডভিশ মাক্সিমিলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্মবিদ অধ্যাপক ড. আলেকজান্ডার ন্যুটসেল এ বিষয়ে বলেন,আমরা এখানে মেসোজোয়িক যুগের টেথিস বা নিওটেথিস সাগরের এমন সব অবশিষ্ট পেয়েছি এবং এখানে কয়েক মিটার ব্যাসের একটি শৈলশিলাও পেয়েছি। আসলে আল্পসের উপরে যাকিছু আছে তার প্রায় সব কিছু ফসিলে ভর্তি। এখানে সেখানে ঝিনুক পড়ে রয়েছে। কোটি কোটি বছর আগে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে এত ঝিনুক মারা গিয়ে থাকতে পারে। ধারণা করা হয়, এই অ্যামোনাইট সেফালোপডগুলোর বিশ কোটি বছর আগে প্রান ছিল।
আল্পস পর্বতের একটি অংশে প্রায় চল্লিশ লাখ ঘনমিটার অংশ ভেঙে পড়েছে। সব মিলিয়ে ৮ জন পর্বতারোহী সে সময়ে ঘটনাস্থলে ছিলেন যারা আজও নিখোঁজ রয়েছেন৷ সেই ধ্বংসলীলার কিছু সময় পর কাদামাটির বন্যা বোন্ডো শহরের মধ্যে নেমে এসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়েছে যা স্বভাবিক ধারণার অনেক বাহিরে।
প্রাকৃতিক বিপর্যয় সম্পর্কে ঠিক সময়ে যদি আগাম বার্তা পাওয়া বা সতর্কতা অবলম্বন করা যায় তবে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির মাত্রা অনেক কমানো যায়। আল্পস পর্বতে বড় বড় ধস সম্পর্কে আগাম সতর্কতা অবলম্বন করতে বিজ্ঞানীরা নানারকম প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটাচ্ছেন৷
অস্ট্রিয়ার টিরোল অঞ্চলের হিন্টারহর্নবাখ বরফ ধস নামায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও কাদামাটির স্রোত সেখানেও পৌঁছতে পারে৷ সেখানকার মানুষ ও পর্বতারোহীদের ঠিক সময় সতর্ক করতে বিজ্ঞানীরা পাহাড়ের চূড়ার নড়াচড়ার উপর অবিরাম নজরদারি চালাতে চান৷ প্লাস্টিকের পাইপের মধ্যে দূরত্ব মাপার সর্বাধুনিক সব যন্ত্রপাতি রয়েছে৷ টেলিস্কোপের মতো সেগুলি আরও লম্বা বা ছোট করা যায়৷ ফাটলের মাপ বাড়লেও সেটি তা নথিভুক্ত করতে পারে এবং সাথে সাথে সেটি বেতার সংকেতের মাধ্যমে উপত্যকায় সেই তথ্য প্রেরণ ও সতর্ক সংকেত প্রদান করতে পারে৷
পাহাড়ের দক্ষিণের অংশের কোথাও ভেঙে পড়লে উত্তরে আলগয় অঞ্চলেও তার প্রভাব বা সংকেত টের পাওয়া যাবে৷ সেখানে কোনো লোকালয় না থাকলেও পর্বতারোহী ও পাহাড়প্রিয় মানুষের পছন্দের এক ট্রেল বা গিরিপথ রয়েছে৷ জিওমর্ফোলজিস্ট হিসেবে মিশায়েল ডিৎসে মনে করেন, ‘‘সেখানে এক ধাক্কায় পাহাড় ভেঙে পড়লে চূড়ার অংশেও আমূল পরিবর্তন ঘটবে৷ ভারসাম্য যত বদলাবে ধশের পরিমান ততই পাড়তে থাকবে।’’
ফ্লোরিয়ান মেডলার ও সিমন গিলিশ পাহাড়ের উপর একটি ড্রোনও ওড়াচ্ছেন৷ ড্রোনের ক্যামেরা দিয়ে ফ্লোরিয়ান এমন ছবি তুলছেন, যার সাহায্যে পাহাড়ের ত্রিমাত্রিক চেহারা ফুটে উঠছে৷ তাতে মাত্র এক থেকে দুই সেন্টিমিটার ত্রুটির অবকাশ রয়েছে৷ সেই ছবি দেখে সামান্য চিড়ও শনাক্ত করা সম্ভব৷ এই উদ্যোগের আওতায় বিজ্ঞানীরা নজরদারির বিভিন্ন প্রযুক্তি হাতেনাতে পরীক্ষার সুযোগও পাচ্ছেন৷
ক্রাউটব্লাটার ও তাঁর সহকর্মীরা বড় ফাটলগুলিতে দূরত্ব মাপার ডাণ্ডাও বসাচ্ছেন৷ তবে তাতে সমস্যা দেখা যাচ্ছে৷ সন্ধ্যা পর্যন্ত সব পরিমাপ যন্ত্র বসানো সম্ভব হয়েছে৷ এভাবে ধস নামার কয়েক দিন আগেই উপত্যকার মানুষ ও পর্বতারোহীদের সতর্ক করার আশা করছেন তাঁরা৷
ইয়ান ক্যার্কহফ/এসবি