আপনার খাবার কতোটা পরিবেশবান্ধব ?
গবেষকগণ মনে করেন,বৈশ্বিক উষ্ণায়নের পেছনে এই খাদ্য উৎপাদন অন্যতম প্রধান কারণ। তবে এক্ষেত্রে গবেষকরা দেখেছেন যে একেক ধরণের খাবারের পরিবেশগত প্রভাব একেক রকম।
এখন অনেকেই পরিবেশ সচেতন হয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগ এবং প্লাস্টিকের স্ট্র ব্যবহার বাদ দিয়েছেন। চেষ্টা করছেন যতোটা সম্ভব ব্যবহার্য জিনিষগুলো পুনর্ব্যবহার করার, যেন উষ্ণতা কয়েক ডিগ্রী কমানো যায়।
এদিকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় গবেষকগণ বলেছেন, বিশ্বে যে পরিমাণ গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন হয় তার এক চতুর্থাংশের জন্য দায়ী খাদ্য উৎপাদন।
তবে আপনি জানেন কি আপনার সাপ্তাহিক বাজার বিশ্বের পরিবর্তনে কতোটা ভূমিকা রাখতে পারে?
আমরা বেশিরভাগ মানুষই বাড়িতে মাছ মাংস খেয়ে থাকি। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোয়। ভেবে দেখুন সপ্তাহের ওই বিশেষ দিনগুলোরতে ডিনারে আমাদের গড়ে কি পরিমাণ গ্রিল মুরগি, সসেজ, নুডুলস, গরুর মাংস ইত্যাদি খাওয়া হয়? অথচ গরুর মাংস বিশ্বের সর্বোচ্চ কার্বন উৎপাদনকারী মাংস।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশেষজ্ঞ ল্যানক্যাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাই বার্নার্স লি এসম্পর্কে বলেন,মুরগি পরিবেশের জন্য অপেক্ষাকৃত ভাল।তবে গরুর মাংস সর্বোচ্চ কার্বন উৎপাদনকারী মাংস।
তিনি আরও বলেন,মাছ খাওয়া কমিয়ে আনতে।প্রতিদিনের পরিবর্তে প্রতি সপ্তাহে এক অথবা দুই বেলায় মাছ খাওয়া সীমিত রাখা এবং প্রতিবারই বিভিন্ন ধরণের মাছ খাওয়ার চেষ্টা করা। তবে সবচেয়ে ভাল উপায় হল নিরামিষভোজী হয়ে যাওয়া।
যদি আপনি নিরামিষাশী হওয়ার কথা ভাবতেই না পারেন, তাহলে অন্তত মাংস খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দুর্দান্ত সূচনা করতে পারেন।যদি আপনার প্রতিদিন মাংস খাওয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে সপ্তাহে মাত্র একটি দিন বেছে নিন যেদিন আপনি কোন মাংস খাবেন না। এই ছোট পরিবর্তন পরিবেশে বড় ধরণের প্রভাব ফেলবে।
২০১৮ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, গ্রিনহাউজ গ্যাসের পরিমাণ অর্ধেকেরও বেশি হ্রাস করা যাবে যদি সবাই সপ্তাহে রেড মিট খাওয়ার পরিমাণ এক বেলায় নামিয়ে আনি।
তিনি ফল এবং সবজি সম্পর্কে বলেন,‘ফল এবং সবজি সবসময়ের জন্য সবচেয়ে ভাল এবং টেকসই খাবার।যদি শীতকাল চলে যাওয়ার পরও আপনার শীতের ফল খেতে ইচ্ছা করে তাহলে সবচেয়ে ভাল উপায় হল সেই ফল ও সবজিগুলোকে হিমায়িত সংরক্ষণ করা।’
পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতার ক্ষেত্রে অধ্যাপক মাইক বার্নার্স লি কিছু নিয়মের কথা বলেছেন, আর সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো-
- ১) জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানোর জন্য সবচেয়ে বড় প্রভাব রাখতে, মাংস এবং দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিন। প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে এই দুই ধরণের খাবার সবচেয়ে কম কার্যকর। অথচ এই খাবারগুলো কার্বন ফুটপ্রিন্টের মূল কারণ।
- ২) আপনি যদি সম্পূর্ণ মাংস-মুক্ত থাকতে না চান তাহলে আপনি বেছে নিতে পারেন গরু বা খাসির মাংসের পরিবর্তে মুরগি বা মাছ । কিন্তু অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, সেই মুরগি ও মাছের কোনটাই যেন খামারে উৎপাদন না হয়।
- ৩) যতো বেশি ফল ও সবজি খাবেন ততোই ভাল। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেটা আপনি খাচ্ছেন সেটা মৌসুমি ফল/সবজি কিনা। যদি সেই খাবার ওই ঋতুতে উৎপাদিত খাবার না হয় ও তা হওয়ার পরেও খাবার চেহারাটা যদি টাটকা থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে যে এটি আকাশ বা নৌপথে আমদানি করা হয়েছে।