আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস’ ২০২২
৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ তারিখ হল আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস। ২০০৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর প্রথমবার শকুন সচেতনতা দিবস পালিত হয়।
এর পর, প্রতি বছর, সেপ্টেম্বরের প্রথম শনিবার, শকুনের জনসংখ্যা হ্রাস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং শকুনের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করার জন্য আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শকুন পঁচা আবর্জনা, ময়লা এবং মৃত জীবজন্তুর পঁচে যাওয়া দেহ খেয়ে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশকে দূষণমুক্ত করে। তাদের পাকস্থলীতে নি:সৃত অ্যাসিড অত্যন্ত ব্যতিক্রম ক্ষয়কারী, যার ফলে তারা রোগজীবানু ও ক্ষতিকর বিষাক্ত খাদ্য সহজ ও নিরাপদে হজম করতে সক্ষম।
ফলে বোটুলিনাম টক্সিন (botulinum toxin), হগ কলেরা ব্যাকটেরিয়া (hog cholera bacteria) এবং অ্যানথ্রাক্স ব্যাকটেরিয়ার (anthrax bacteria) এর মতো রোগজীবাণু খেয়ে আমাদের পরিবেশকে রোগমুক্ত করতে সহায়তা করে।
ভৌগলিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে শকুনকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। পুরাতন বিশ্বের (Old world) দেশগুলো যেমন, ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকার অবস্থিত শকুনগুলো অ্যাক্সিপিটারডাই (Accipitridae) পরিবারের অন্তর্গত।
ঈগল, চিল এবং বাজপাখিও পুরাতন বিশ্বের শকুন প্রজাতির অর্ন্তভূক্ত। আরেকটি হল নতুন পৃথিবীর (New World) শকুন, যা ক্যাথারটিডি (Cathartidae) পরিবারের অন্তর্গত, আমেরিকার উষ্ণ ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে অবস্থিত . ওল্ড ওয়ার্ল্ড এবং নিউ ওয়ার্ল্ড শকুন একই বংশ (Clade) এর অন্তর্গত না হলেও অভিন্ন বিবর্তন দ্বারা দুটি গোষ্ঠীকে চেহারায় আরও কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।
উভয় প্রজাতির শুকুনই পঁচা আবর্জনা, ময়লা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে, তবে মৃত জীবজন্তুর দেহই এদের প্রধান খাদ্য। ওল্ড ওয়ার্ল্ড শকুনগুলি একচেটিয়াভাবে চোখের সাহায্যে মৃতদেহ খুঁজে পায়। অনেক শকুনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল একটি আধা-টাক মাথা, কখনও কখনও মাথা ও গলাও পালক শুণ্য থাকে এবং এদের গলাও বেশ লম্বা হয়।
এর কারণ হিসাবে ঐতিহাসিকভাবে মনে করা হচ্ছে যে, এদের খাওয়ার অভ্যাসের কারণেই এরকম হয়েছে। মৃতদেহ খাওয়ার ফলে মৃতদেহের কাঠামোর ভিতরের মাংশ টেনে বের করে খাওয়ার জন্য মাথা ও গলা যতসম্ভব লম্বা করার চেষ্টা এবং এর ফলে মাংস ও রক্ত দিয়ে আঠালো হয়ে ক্ষপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে পালকগুলি ঝড়ে গিয়ে এ পরিবর্তণ হয়েছে।
১৯৯০ -এর দশকের গোড়ার দিক থেকে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালসহ সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় শকুন ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। একইভাবে আফ্রিকা এবং ইউরেশিয়ায় শকুন বিপন্ন। কৃষিতে অতিমাত্রায় কীটনাশক ( Pesticides), ইঁদুর ও পোঁকামাকর জাতীয় জীবজন্তু মারার জন্য বিষ মিশ্রিত খাদ্য প্রয়োগ, বায়ু শক্তি উৎপাদনের যন্ত্র (Windmill) এর পাখার সাথে সংঘর্ষে এবং উঁচু গাছ/বৃক্ষ ক্রমাগত কেটে ফেলায় প্রজননের স্থানের মারাত্বক হ্রাস পাওয়ার কারণসহ মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কর্মের জন্য শকুন বিপন্ন প্রাণিতে পরিনত হয়েছে।
টাকমাথা ও গলা লম্বা শকুন (Condor) সহ বিশ্বে ২৩ টি বিভিন্ন প্রজাতির শকুন পাওয়া যায়। ২০১৬ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, “২২ টি শকুন প্রজাতির মধ্যে নয়টি মারাতত্বকভাবে বিপন্ন (Critically Endangered), তিনটি বিপন্ন হতে চলেছে ( Endangered,) চারটি বিপন্ন হওয়ার হুমকির কাছাকাছি (Threatened) এবং ছয়টি অন্তত উদ্বেগজনক অবস্থা রয়েছে (Least-concern)।”
ওল্ড ওয়ার্ল্ড এর অধীনে গলদেশ সাদা রঙের পালকের শকুনেরা ভারতীয় উপমহাদেশের। এদের সংখ্যা মারাত্মকভাবে হ্রাস পাওয়ায় এটি ২০০০ সালের পর থেকে আইইউসিএন (IUCN) এর লাল তালিকায় মারাতত্বকভাবে বিপন্ন (Critically Endangered) তালিকাভুক্ত।
এই ধরনের শকুন ডাইক্লোফেনাক বিষক্রিয়ার কারণে কিডনি বিকল হয়ে মারা যায়। ডাইক্লোফেনাক (diclofenac) হলো একটি নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগ যা ট্রমা এবং সংক্রামক রোগের কারণে প্রদাহ কমাতে দক্ষিণ এশিয়ায় গরু এবং মহিষের উপর ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
শুধু স্বাস্থ্যকর পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য শকুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে না, মারাত্বক রোগজীবানুসহ দূষিত বস্তু খেয়ে মানব স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে শকুন।
শকুনের সংখ্যা কমে যাওয়ায় রোগের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এরা যেমন সংক্রামিত রোগের জীবানু খেয়ে, তেমনি রোগজীবানু ছড়ায় এমন ছোট ছোট প্রাণী ও কীটপতঙ্গ (Disease vector) গুলো খেয়ে আমাদের পৃথিবীর রোগজীবানু ছড়ানো প্রতিরোধে পরোক্ষ ও প্রতক্ষভাবে কাজ করছে। এছাড়াও শকুন মৃতদেহ খাওয়ার ফলে পোঁকামাকড়ের বংশবৃদ্ধি হ্রাসেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
রোগের বিস্তার রোধ করতে শকুনকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। আমাদের পৃথিবীর রোগ প্রতিরোধক ও দূষণ রোধক প্রাকৃতিক জীবস্ত মিশিনটি বিলুপ্তি কবল হতে রক্ষা করতে আমাদেরকে অত্যন্ত উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে, মানব জাতীর কল্যাণেই উপযুক্ত আইন এবং প্রবিধান প্রণয়ন করে এর বিলুপ্তি রোধ করতে হবে।
Source: Wikipedia.