আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস
ইট-কাঠ আর সুরকির বেড়াজালে একটু সবুজের অবসর কি এখন চাইলেই মেলে? সবুজ, নদীর টলটল জল কিংবা বাতাসে প্রশান্তির ছোঁয়া এখন চাইলেই মানুষ পায় না। আর এর কারণ হিসেবে দায়ী কিন্তু আমরা—মানুষ!
দিন দিন পরিবেশকে বিপন্ন করে তুলছি। বসবাসের অযোগ্য করে তুলছি প্রাণ-প্রকৃতিকে। যে সবুজের সমারোহে প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিয়ে, মাঠে-ঘাটে শীতল পরশ নিয়ে পূর্বতনরা বেঁচে ছিলেন, কৃত্রিমতায় ঠাসা জীবনে পরবর্তী প্রজন্মকে আমরা রেখে যাচ্ছি এক বিপন্ন জলবায়ুর পৃথিবীতে।
আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। ১৯৭২ সালে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) উদ্যোগে প্রতিবছর সারা বিশ্বে ৫ জুন ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে পালিত হয়।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য, পরিবেশ বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো। এর ফলে প্রতিবছরই ভিন্ন ভিন্ন প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালিত হয়। এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হলো “সলিউশনস টু প্লাস্টিক পলুশন”।
প্রাত্যহিক জীবনে আমরা যেসব পণ্য ব্যবহার করি, তার বেশির ভাগ সামগ্রীই প্লাস্টিকের তৈরি। প্লাস্টিক হচ্ছে কৃত্রিমভাবে তৈরি পলিমার, যা মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি বা প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে রাসায়নিক উপায়ে তৈরি করা হয়।
প্লাস্টিক সাধারণভাবে নমনীয়, যা সহজে বাঁকা করা যায়, ক্ষয়রোধী, দীর্ঘস্থায়ী ও কম দামি। এই সহজলভ্য প্লাস্টিক ব্যবহার করে আমরা আমাদের পরিবেশকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছি।
গত ৫০ বছরে পুরো বিশ্বে মাথাপিছু ১ টনের বেশি প্লাস্টিকের বিভিন্ন পণ্য উৎপাদিত হয়েছে। যার ৯০ শতাংশের বেশি পৃথিবীর পরিবেশকে নানাভাবে বিপন্ন করে তুলেছে।
এসব ক্ষতিকর পচনরোধী বর্জ্য পরিবেশে ৪০০ থেকে ১ হাজার বছর পর্যন্ত থাকতে পারে এবং তা মাইক্রো, ন্যানো প্লাস্টিকের কণাসহ নানা ক্ষতিকর পদার্থ নিঃসরণ করে পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যে ভয়ংকর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক কর্মসূচি (ইউএনইপি) মনে করে, যুদ্ধ, সংঘাত, মহামারি ও দুর্ভিক্ষের মতোই পরিবেশ বিপর্যয় বিশ্বের অন্যতম প্রধান বিপদ।
আগামী দিনগুলোয় পরিবেশবিষয়ক ইস্যুগুলোই পৃথিবীর সামনে প্রধান হয়ে দেখা দেবে। পরিবেশগত বিপদের কারণে পৃথিবীর ভারসাম্য ও মানুষের বসবাস বিপদাপন্ন হবে। প্রকৃতি বিরূপ ও বিরক্ত হলে বিশ্বকে কত রকমের বিপদের সম্মুখীন হতে হয়, সে উদাহরণও হাজির করেছেন পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানীরা।
আবহাওয়ার বৈরী আচরণ, উষ্ণায়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্রাণবৈচিত্র্যের ক্ষতি ইত্যাদির পেছনে প্রকৃতিকে বিনষ্ট করাকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিবেশবিজ্ঞানীরা প্রকৃতিকে সময় দিতে পরামর্শ দিয়েছেন।
পরিচর্যা করতে বলছেন। পৃথিবী ও পৃথিবীবাসীর সুস্থতা ও নিরাপত্তার জন্য দূষণ এবং আঘাতের হাত থেকে প্রকৃতির সব উপাদানকে রক্ষা করার সুপারিশ করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ৩০ শতাংশ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমাদের তো প্লাস্টিক পণ্যের বিকল্প খোঁজার দরকার নেই। দুই যুগ আগেও তো এত প্লাস্টিকের সমাহার ছিল না।
ঘরে ঘরে কাঁসার থালায় খাওয়াদাওয়া করতাম। কাঁসা কিংবা মাটির কলসে পানি থাকত। আমরা যেমন ছিলাম, তেমন জীবনে ফিরে গেলেই তো প্লাস্টিক নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় না। আমরা আমাদের সোনালি ঐতিহ্যকে মুছে ফেলে মৃৎ-কাঠ-পাটশিল্পকে ধুলায় মিশিয়ে দিয়ে প্লাস্টিককে বেছে নিয়েছি।
এখন আমরা যদি আবার আগের জীবনে ফিরে যাই, তাহলেই তো প্লাস্টিক নিয়ে এত ভাবনা থাকে না। ব্যাগ বা বহনের সামগ্রী হিসেবে পাটজাত পণ্যকে ব্যবহার করতে পারি।’