আউশ মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ ফলন দিয়েছে উচ্চ ফলনশীল স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন খরা সহিষ্ণু আউশ ধানের নতুন চারটি জাত। জাতগুলো হেক্টর প্রতি বোরো মৌসুমের মতো ফলন দিতে সক্ষম। এ জাত ছড়িয়ে দিয়ে আউশ মৌসুমে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয় ও কৃষি সম্প্রসারণের পদস্থ কর্মকর্তারা।
- ‘প্রতিটি জাতই উদ্ভাবকদের প্রত্যাশার চেয়ে অন্তত ৫০০ কেজি থেকে দেড় টন পর্যন্ত বেশি ফলন দিয়েছে’
ব্রি গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. সাইদী রহমান বলেন, “আমরা গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আমাদের কার্যালয়ের গবেষণা মাঠে গোপালগঞ্জ ও আশপাশের জেলার জন্য উপযোগী বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত আউশের নতুন জাত ব্রি হাইব্রিড ধান৭, ব্রি ধান৪৮, ব্রি ধান ৮২ ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত বিনাধান-১৯ এর মাঠ ট্রায়েল দেই। আজ (শনিবার) গবেষণা মাঠ থেকে পাকা ধান কেটে পরিমাপ করে দেখা গেছে ২০২০ সালে উদ্ভাবিত আউশের একমাত্র হাইব্রিড ধান ব্রি হাইব্রিড ধান-৭ প্রতি হেক্টরে ৭.৩৮ টন, ব্রি ধান-৪৮ হেক্টর প্রতি ৬.১৬ টন, ব্রি ধান-৮২ হেক্টরে ৫.৬৬ টন ও বিনাধান-১৯ হেক্টরে ৫.১২ টন ফলন দিয়েছে। প্রতিটি জাতই উদ্ভাবকদের প্রত্যাশার চেয়ে অন্তত ৫০০ কেজি থেকে দেড় টন পর্যন্ত বেশি ফলন দিয়েছে।”
তিনি বলেন, “বন্যার পানি সচরাচর আসে না, এমন মাঝারি উঁচু ও মাঝারি নিচু জমিতে এ ধানের চাষ করা যায়। এছাড়া এ জাতের ধানে সেচ খরচ কম লাগে। এ ধানে রোগ বালাই ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ কম হয়। তাই বাম্পার ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হবেন। খরা সহিষ্ণু এ ধান ১০০-১১০ দিনের মধ্যে কাটা যায়। ধান হেলে পড়ে না। ধানের আকৃতি সরু, লম্বা ও ভাত ঝরঝরে। তাই বাজারে একটু বেশি দামে কৃষক এ ধান বিক্রি করে বাড়তি টাকা পাবেন।”
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের সহকারী পরিচালক ড. অরবিন্দু কুমার রায় বলেন, “বোরো ধান কাটার পর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে নতুন ৪ জাতের আউশ ধান আবাদ করা যায়। আউশের পর আগস্টে আমন ধান করা যায়। এক জমিতে কৃষক তিনবার ধান ফলাতে পারেন। উচ্চ ফলনশীল আউশের আবাদ সম্প্রসারণ করে দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।”
ব্রি, গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ড. মো. খায়রুল আলম ভূঁইয়া বলেন, “সরকার খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আউশ আবাদ সম্প্রসাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আউশ মৌসুমের এ চারটি জাতের আবাদ সম্প্রসারণ করে যথাপোযুক্ত ব্যবস্থাপনা করলে প্রতি হেক্টরে বোরো মৌসুমের মতো ফলন পাওয়া যাবে। সঠিক ব্যবস্থাপনায় বিশেষ করে ব্রি হাইব্রিড ধান-৭ ও ব্রিধান-৪৮ এর ফলন বোরো মৌসুমের মতোই পাওয়া সম্ভব। আউশ মৌসুমে জাতীয় উৎপাদনের শতকরা ৯ থেকে ১০ ভাগ ধান উৎপাদিত হয়। এসব জাত সম্প্রসারণ করলে আউশ মৌসুমে ধানের জাতীয় উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। এতে করে খাদ্য নিরাপত্তা ও এসডিজি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”