অভয়নগরে অভিযানের পরেও থেমে নেই কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি
অভয়নগরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বার বার গুড়িয়ে দেওয়ার পরও সিদ্দিপাশার সোনাতলা গ্রামের অবৈধ চুলিতে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি বন্ধ হয়নি। এতে করে উজাড় হচ্ছে এলাকার বনভূমি আর ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।
যশোরের অভয়নগর উপজেলার সিদ্দিপাশা ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে ওইসব চুল্লির অবস্থান। চুল্লিতে বিভিন্ন বনজ ও ফলদ গাছ কেটে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি হয়। চুল্লি থেকে নির্গত ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষণ ও জীববৈচিত্র্যের মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
উপজেলার সিদ্দিপাশা ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে নদীর পাড় ঘেঁষে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে শতাধিক কয়লা তৈরির বিশেষ চুলা। দিন-রাত এই চুলায় কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি হচ্ছে।
সিদ্দিপাশা গ্রামের কামরুল ইসলাম, আলাউদ্দিন আলী, হাবিব, তসলিম, হারুন মোল্লা, জিয়া মোল্লা ও নুরুল ইসলাম শতাধিক কয়লা তৈরির চুলা নিয়ন্ত্রণ করেন। তারা সকলেই স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি।
স্থানীয়রা জানায়, কারো কোনো কথার তোয়াক্কা তারা করেন না। রাস্তার পাশে কয়লা তৈরির কারখানা স্থাপন করে সারাদিন খোলা জায়গায় কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করছে। তারা প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে।
অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব কয়লা কারখানায় দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন। অনুমোদন ছাড়াই এসব কয়লা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। শত বিধিনিষেধ থাকার পরও জনবসতি এলাকায় ও ফসলি জমি নষ্ট করে এসব কারখানা স্থাপন করা হয়েছে।
পথচারীরা জানান, মাটি, ইট ও কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে তৈরি করা চুল্লিতে প্রতিদিন শত শত মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে ধোঁয়া। রাস্তার পাশ দিয়ে চলাচল করার সময় চোখ জ্বলতে জ্বলতে পানি চলে আসে। চুল্লির মধ্যে সারিবদ্ধভাবে কাঠ সাজিয়ে একটি মুখ খোলা রেখে অন্য মুখগুলো মাটি এবং ইট দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়।
খোলা মুখ দিয়ে আগুন দেয়া হয় চুল্লিতে। আগুন দেয়া শেষ হলে সেটিও বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রায় ১০ থেকে ১৫ দিন পোড়ানোর পর চুলা থেকে কয়লা বের করা হয়। প্রতিটি চুল্লিতে প্রতিবার ২৫০ বা ৩০০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। পরে এই কয়লা শীতল করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়।
চুল্লির মালিক কামরুল ইসলাম জানান, কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি অবৈধ হলেও কিছু করার নেই। তারা নিজেদের জমির ওপর ব্যবসা করে যাচ্ছেন। কিছু লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চুল্লির শ্রমিক জানান, একটি চুল্লিতে এক সপ্তাহে কমপক্ষে প্রায় ৪শ’ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। প্রতি বস্তা কয়লার দাম প্রায় ৪শ’ টাকা।
হাজার হাজার টন কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। তারা না ভাবছে পরিবেশের কথা, না জনস্বাস্থ্যের।
জামাল হোসেন জানান, কয়লা তৈরির চুল্লির কালো ধোঁয়ায় শিশুসহ এলাকার মানুষের মধ্যে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে। কলেজ পড়ুয়া রায়হান বলেন, চুল্লির ধোঁয়ায় চোখ জ্বালাপোড়া করে, খুশখুশে কাশি হয়। সারাদিন প্রচন্ড গন্ধে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যায় না।
অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ আলীমুর রাজিব বলেন, কয়লা তৈরিতে কাঁচা কাঠ পোড়ানোয় কার্বন ও সিসা নির্গত হয়।
যে এলাকায় এসব চুলায় কাঠ পুড়িয়ে ধোঁয়ার সৃষ্টি করা হচ্ছে, সেখানে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। ফলে শিশুসহ বয়স্করাও ফুসফুসের সমস্যা, এ্যাজমা, শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ও এলার্জির সমস্যার সম্মুখীন হবে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদী এই ধোঁয়া নিলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে।
অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেএম আবু নওশাদ বলেন, আগে একবার ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে কথা হয়েছে। আমি আবারও যাব। সরকারি অনুমোদন ছাড়া কয়লার কারখানা স্থাপন করা যাবে না।
খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ ইকবাল হোসেন বলেন, আমরা ইতিপূর্বে চুল্লি গুলো তিনবার ভেঙে দিয়েছি এবং জরিমানা করা হয়েছে। আবারও ভেঙে দেবো।