অবৈধ ইটভাটায় ঝুঁকিতে ফসলি জমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
নাটোরের লালপুরে আবাসিক এলাকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাচীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অবৈধ ইটভাটা। নেয়া হয়নি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। মানা হয়নি সরকারি আইন। এতে সরকার রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আশেপাশের পরিবেশ, সাধারণ মানুষ, কৃষক ও শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, উপজেলায় ৩৩টি অনুমোদনহীন অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে খড়ি হিসেবে ফলজ ও বনজ গাছের কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন অসংখ্য গাছ কেটে এসব ভাটার খড়ি জোগান দেয়া হয়।
উপজেলার মঞ্জিলপুকুর, মোমিনপুর, কয়লার ডর, বড়বড়িয়া, সাইপাড়া, অমৃতপাড়া, নওদাপাড়া, চামটিয়া, লালপুর ও মোহরকয়া দেখা যায়, এসব ভাটায় ফলজ ও বনজ গাছপালা কেটে নিয়ে এসে অবাধে খড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে প্রচুর পরিমাণে কালো ধোঁয়া উৎপন্ন হয়ে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ছে।
লালপুর ইউনিয়নের মঞ্জিল পুকুর এলাকায় দেখা যায়, মঞ্জিল পুকুর উচ্চ বিদ্যালয়, মঞ্জিল পুকুর কারিগরি বাণিজ্যিক মহাবিদ্যালয় ও সুন্নি জমিয়াতুল মুসলিমিন হিজবুল্লাহ মাদ্রাসার পাশে ১-১.৫ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ১২টি ইটভাটা চলমান আছে।
এ ছাড়া অন্যান্য ইটভাটাগুলো জনবহুল আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন ওই এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের শিক্ষার্থী ও বসবাসকারীরা।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সুরুজ্জামান শামীম বলেন, কালো ধোঁয়া ও ছাইসহ দূষিত বাতাস নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে প্রবেশ করে রক্তের মাধ্যমে দেহে ছড়িয়ে পড়ে। এতে মাথাব্যথা, বুক ব্যথা, অ্যাজমা, কাশি, এলার্জি, স্নায়ুবিক দুর্বলতা, এমনকি ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের সৃষ্টি হচ্ছে।
ইটভাটার জন্য অবাধে ফলজ ও বনজ গাছপালা কাটার বিষয়ে উপজেলা বন কর্মকর্তা এবিএম আব্দুল্লাহ জানান, বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরের আওতাধীন। এ বিষয়ে তারাই পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর, নাটোর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিগগিরই অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ ছাড়া যারা গাছ কেটে ভাটায় কাঠ পোড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এদিকে কৃষিজমিতে এসব ইটভাটা গড়ে উঠায় ক্ষতির মুখে পড়েছে রবি শস্য, আম ও অন্যান্য ফলজ বাগানগুলো। স্থানীয়রা জানান, ভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে আম বাগানগুলো মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
বিগত কয়েক বছর ধরে আমের মুকুল কম আসছে। আমের গুটিতে কালো ছোপ ছোপ দাগ পড়ে। আমের গুটি নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া নারিকেল, পেয়ারা ও বরই বাগানে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এতে বাধ্য হয়ে বাগানিরা বাগান কেটে ফেলছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার বলেন, ‘কৃষিজমিতে ভাটা করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এতে ফসলি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো কৃষি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি নিয়ে এসে ইট তৈরি করায় জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পায়।
অন্যদিকে ইটভাটার গরম কালো ধোঁয়াতে ফলবাগানে বিশেষত আমের এ্যানথ্রাকনোজ বা টিম্বার রোগ হয়। সার্বিকভাবে অবৈধ ইটভাটার জন্য কৃষির অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। অবৈধ ইটভাটার তালিকা সংগ্রহের কাজ চলছে। তালিকা হাতে পেলে এসব ভাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।