অবৈধভাবে বন উজাড় করে চলছে মাছ শিকার
খুলনার কয়রায় সুন্দরবন সংলগ্ন শাকবাড়িয়া, কপোতাক্ষ ও কয়রা নদীর চরে গড়ে ওঠা বনায়নের মধ্যে যত্রতত্র গর্ত খুঁড়ে মাছ শিকারের ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে।
গর্তে পানি আটকে থাকায় সেখানে নতুন কোনো গাছ জন্মাতে পারছে না। আবার মাছ শিকারিরা বনায়নের গাছ কেটে মাছের ঘের তৈরি করছেন।
এ কারণে চরের বনায়ন রক্ষা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অথচ এই চরের গাছ অনেক বছর ধরে প্রাচীর হিসেবে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলীয় কয়রা উপজেলার মূল ভূখণ্ডকে রক্ষা করে আসছে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে ‘চর বনায়ন প্রকল্প’ শুরু হয়। এর মধ্যে কয়রা এবং পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নদীর চর ও বেড়িবাঁধের পাশে ৩৪টি স্থানে ৮২ হেক্টর জমিতে এমন বনায়ন করা হয়েছে।
মূলত উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনীর মাধ্যমে নদীভাঙন রোধ, সরকারি জমি অবৈধ দখলদারমুক্ত রাখা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পশুপাখির আবাসস্থল গড়া, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই বনায়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বন কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি দেখা গেছে, উপজেলা সদর থেকে গোবরা গুচ্ছগ্রামের সামনে দিয়ে চলে গেছে পিচঢালা পথ। পথের এক পাশে জনবসতি, অন্য পাশে রয়েছে কপোতাক্ষ নদ। সড়কটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।
বাঁধের পাশে লম্বা সবুজ বন। বনে আছে গোলপাতা, কেওড়া ও গেওয়াগাছ। চর বনায়নের এসব গাছ কেটে অনেক স্থানে মাছ ধরার জন্য গর্ত খুঁড়ে বিশেষ ফাঁদ তৈরি করেছে। তা ছাড়া এসব এলাকার কয়েকটি স্থানে গাছ কেটে তৈরি করা হয়েছে মাছের ঘের।
সেখানে আরো দেখা গেছে, জোয়ারের সময় নদীর চরের বনের মধ্যে মাছ শিকারের জন্য খুঁড়ে রাখা গর্তগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। ভাটার সময় জোয়ারের পানি নেমে গেলে গর্তের পানিতে আটকে পড়ে বিভিন্ন ধরনের মাছের পোনা।
মাছ শিকারিরা ঘন ফাঁসের জাল দিয়ে এসব পোনা সংগ্রহ করেন। কয়েক মাস ধরে স্থানীয় নদ-নদীর চরে জেলেরা এ পদ্ধতিতে মাছ শিকার করছেন। এ কারণে অনেক স্থানে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা চরের গাছের পরিমাণ ক্রমশ কমে আসছে।
কয়রা সদরের গোবরা গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রায় এক বছর ধরে বেড়িবাঁধের বাইরের চরের বন উজাড় করার প্রবণতা বেড়েছে।
এমনকি এসব বাগান উজাড় করে বাড়িঘর, মাছের ঘের, ব্যক্তিগত পুকুর পর্যন্ত করা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে এই উপকূলীয় জনপদে দুর্যোগকালীন ঝুঁকি দিন দিন বাড়বে।
কয়রা উপজেলা বন কর্মকর্তা প্রেমানন্দ রায় বলেন, ‘আমরা সামাজিক বন বিভাগ থেকে চর বনায়ন রক্ষায় উদ্যোগ নিয়েছি। দখল করা বনের জমি উদ্ধার এবং বন উজাড়কারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’