অবাধে শামুক নিধনের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে
চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশে অবাধে চলছে শামুক নিধন। এতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। অথচ এক সময়ে জীববৈচিত্র্যের তীর্থভূমি ছিল এ চলনবিল।
জানা গেছে, আট থেকে দশ বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে বিলের বিভিন্ন অংশে জাল দিয়ে অবাধে চলছে শামুক নিধন। শামুক মূলত হাঁসের খামার, চিংড়ির ঘেঁরে ও মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে।
বর্ষা মৌসুমে এ উপজেলার ১৫ থেকে ২০টি পয়েন্টে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গণহারে শামুক নিধন চলছে। এভাবে প্রতিদিন নির্বিচারে শত শত টন শামুক নিধনের ফলে চলনবিলের বিস্তীর্ণ ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে।
চলনবিলের তাড়াশ অংশে শামুক নিধনের মচ্ছব চলছে। কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ী প্রতিদিন গড়ে আট থেকে ১০ টন শামুক সংগ্রহ করে বিক্রি করছে। বর্ষাকালে চলনবিলে কোনো কাজ থাকে না।
তাই বাধ্য হয়েই উপার্জনের আশায় প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ছোট ছোট নৌকা নিয়ে বিলের বিভিন্ন অংশে বিশেষ করে ডুবে যাওয়া ফসলি জমি থেকে নেট জাল, হেসি জাল, মই জাল ও হাত দিয়ে শামুক সংগ্রহ করছে।
কামাড়শোন এলাকার মৌসুমী শামুক ব্যবসায়ী আবুল কালাম জানান, ‘প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ ট্রাক শামুক চলে যাচ্ছে বাগেরহাট, যশোর, খুলনার চিংড়ির ঘের। বিশেষ করে নাটোর, রাজশাহী, নীলফামারী, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম অঞ্চলে হাঁসের খামারে শামুকের বেশ কদর রয়েছে।’
উপজেলার আমবাড়িয়া এলাকার শামুক ব্যবসায়ী ইয়াসিন আলী জানান, ‘বর্ষা মৌসুমে আমন ধানের জমিতে প্রচুর পরিমাণ ছোট, মাঝারি ও বড় শামুক পাওয়া যায়। চলনবিল থেকে শামুক সংগ্রহ করে এলাকার লোকজন বস্তা প্রতি ২৮০ থেকে তিন শ’ টাকা দরে শামুক বিক্রি করে।’
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, শামুক নিধনের জন্য বিভাগীয় কোনো দিক নির্দেশনা না থাকায় আমাদের কৃষি বিভাগের করণীয় কিছু নেই।
এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিদ্যা অনুষদের ডিন ও প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম জানান, চলনবিলে অবাধে শামুক নিধনের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে।
পাশাপাশি বিলের কৃষি জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে। এছাড়া শামুক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যাওয়ায় চলনবিলের হাজার হাজার হাঁস-খামার ব্যবসায়ীরা প্রাকৃতিক খাদ্য শামুক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।