অপরিকল্পিত শিল্পায়ন গড়ে তোলায় দূষিত হচ্ছে সুস্থ পরিবেশ
পরিবেশ সভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সভ্যতার ক্রমবিকাশ থেকেই মানুষ গড়ে তুলেছে তার পরিবেশ । পরিবেশকে রুদ্ধ করে পরিবেশকে জয় করার চিন্তা ভাবনার যেন শেষ নেই। মানুষ নিজেদের স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে যেভাবে পরিবেশের উপর আঘাত হানছে তাতে পরিবেশ তার নিজস্ব আচরণে গোটা বিশ্বকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারছে।
আমরা নিজেরাই এর জন্য দায়ী নিজেরাই নিজেদের পরিবেশকে ধ্বংস করে মহাবিপদ ডেকে নিয়ে আসছি। আর তার জন্য উন্নত বিশ্ব সবচেয়ে দায়ী। অপরিকল্পিত নগরায়ন শিল্পায়ন গড়ে তোলায় দূষিত হচ্ছে সুস্থ পরিবেশ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের জলে ও স্থলে মহাশূন্যে আধিপত্য বিস্তার।
কিন্তু মানুষের এ বিজয় মানুষকে পরাজয়ের মধ্যে ফেলে দিল। আজ আমরা এক ভয়ংকর সংকটের মুখোমুখি। কোন বিশেষ জাতি কিংবা কোন দেশের একার নয়।
এই সংকট আজ বিশ্ব জুড়ে পৃথিবীর পরিবেশ নানাভাবে দূষিত হচ্ছে দিনের পর দিন। এ দূষণ পৃথিবীর পরিবেশকে নিয়ে যাচ্ছে ভয়ংকর ভবিষ্যতের দিকে। আজ জলে বিষ বাতাসে আতঙ্ক, মাটিতে মহাত্রাস।
মানুষের দৈনন্দিন কর্মকান্ডে সৃষ্ট ক্ষতিকর পদার্থ ও তা নির্গমনের কারণে স্বাভাবিক পরিবেশের উপর প্রভাব পড়লে তাকে দূষণ বলে। পরিবেশ দূষণ বিভিন্নভাবে হয়ে থাকে। বায়ু দূষণ, পানিদূষণ, শব্দ দূষণ এরমধ্যে অন্যতম। আমরা এত দিন দূষণ শব্দটি শুনে এসেছি, কিন্তু এর মধ্যে আছে পরিবেশের হাহাকার।
পরিবেশ যত দূষণ হবে ঠিক ততই প্রতিশোধ নেবে মানব তথা সমগ্র জীবকুলের উপর। এখন আমাদের অবস্থা এমন পর্যায়ে পরেছে আমরা যদি সঠিক পথে না চলি তা হলে ভবিষ্যতের যে কুফল পরবে তার জন্য দায়ি হবে সুধুই মানুষ, আর কুফল ভোগ সমগ্র জীবকুল।
বিগত বছরে ৭৬ টির বেশি প্রজাতির প্রাণী এবং কয়েকশ প্রজাতির গাছপালা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমাদের অথনৈতিক উন্নতি হয়েছে।এর পরিনামে বাতাসে প্রতিবছর ২০ কোটি মেট্রিক টন কার্বন মনোক্সাইড সঞ্চিত হচ্ছে। বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। প্রতিবছর ৬০ হেক্ট্রর জমি মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে।
প্রতি মিনিটে বালুকাকীর্ণ হয়ে পড়ছে ৪ হেক্ট্রর উর্বর ভূমি। এখনও বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই। দূষিত হচ্ছে নদীর পানি।
পাহাড় কাটা, ফসলি জমি ধ্বংস বনাঞ্চল উজাড় করে পরিবেশের উপর মারাত্মক আঘাত হানছে। একটি দেশে ২৫% বনভূমি থাকার কথা। সেখানে বাংলাদেশে বনভূমি রয়েছে মাত্র ১৬%।
বাংলাদেশে যত্রতত্রভাবে গড়ে উঠছে শিল্প কারখানা। প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে নদীর পানি, চলছে নির্বিচারে পাহাড় কাটাঁ, ফসলি জমি ধ্বংস। বনাঞ্চল উজাড় করে পরিবেশকে প্রতিনিয়ত দূষিত করে চলেছে। বাংলাদেশে যেভাবে নদী দূষণ শুরু হয়েছে তাতে অচিরেই নানা দুর্যোগের মুখোমুখি হবে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন।
নদীর পানি ব্যবহার অনুপযোগী। ভূগর্ভস্থ পানির উপর অতি নির্ভরশীলতার কারণে ইতোমধ্যে সারা দেশে সুমিষ্ট জলের অভাব দেখা দিয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারে ভূগর্ভস্থ পানির লেভেল ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হচ্ছে ঘরবাড়ি বহুতল ভবন।
অন্যদিকে মাটি কাটার কবলে ধ্বংস হচ্ছে ফসলি জমি। রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয়েও বাড়ছে দূষণের মাত্র। দেশের নদী দখলে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের হাত থাকায় ফলে দূষণ ও দখল নিয়নন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এমন প্রতিবেদন পত্রপত্রিকায় বহুবার প্রকাশিত হয়েছে ।
দেশের অধিকাংশ তরল বর্জ্যে উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানে নেই বর্জ্যে পরিশোধন (ইটিপি)। ফলে তরল বর্জ্যে দূষিত হয়ে পড়ছে নদীর পানি । পরিবেশ দূষণের মাত্রার পরিণতির কথা বিবেচনা করে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা পরিবেশ দূষণ মুক্ত রাখার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্বের স্বার্থে পরিবেশ দূষণ মুক্ত রাখা দরকার। এ দূষণ রোধ করার জন্য জণগনকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। সকলকে পরিবেশ দূষণ রোধে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে।