অজান্তেই মানব শরীরে ঢুকছে মাইক্রোপ্লাস্টিক
মাইক্রো প্লাস্টিকের অতি ক্ষুদ্র কণা বাতাসে ভেসে বেড়ায়- ২০১৫ সালে এ তথ্য সামনে আসার পরই বিজ্ঞানীরা এসব মাইক্রোপ্লাস্টিকে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে তারা গবেষণা শুরু করেন।
তাদের অনেক পরিশ্রমের পর এ তথ্য উঠে এলো যে, সাগর, সামুদ্রিক মাছ, এমনকি ঝিনুকের মধ্যেও উপস্থিত রয়েছে ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা। যা মানুষ অজান্তেই গ্রহণ করছে নানাভাবে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে সেগুলো ঢুকছে মানব শরীরে।
নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামের ভ্রিজে বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ও গবেষক ডিক ভেথাক জেনেছিলেন, ‘সমুদ্রের মাছ ও ঝিনুকের মত সামুদ্রিক খাবারেও ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা পাওয়া যেতে পারে। গবেষকরা তখন প্যারিসের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাদে মাইক্রোপ্লাস্টিক ভেসে বেড়াতে দেখেন।’
তখন মানুষের শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক খোঁজা শুরু করেন ভেথাক ও তার দল। বিভিন্ন অঙ্গ, রক্ত আর টিস্যুতে তারা প্লাস্টিক কণা খোঁজা শুরু করেন। ইকোটক্সিকোলজিস্ট ভেথাক বলছেন, সেই অনুসন্ধানে যে ফলাফল তারা পেয়েছেন তা গুরুতর।
বিজ্ঞানীরা দেখতে পান, মাইক্রোপ্লাস্টিক বা তার চেয়ে আরো ক্ষুদ্র কণা ন্যানোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি রয়েছে গর্ভফুল, রক্ত, লিভার, হৃদযন্ত্র ও অন্ত্রে।
ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় ৬২টি গর্ভফুলের প্রতিটিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। অন্য আরেকটি গবেষণার প্রতিটি নমুনার ধমনীতে এই প্লাস্টিক কণা মিলেছে।
মানব শরীরে প্লাস্টিক কণার উপস্থিতির প্রমাণ মিললেও সেগুলো শরীরের কতটুকু ক্ষতি করছে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা নেই বিজ্ঞানীদের। এগুলো ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি জটিলতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। সেইসঙ্গে আলঝেইমার্সের সমস্যা ও প্রজনন ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
প্রতি বছর কোটি কোটি টন প্লাস্টিক মিশছে পরিবেশে। ফলে বিপুল পরিমাণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণায় ডুবছে গোটা বিশ্ব। এমন অবস্থায় মানুষ কতটা আক্রান্ত হচ্ছে, কোন কোন সমস্যা তৈরি হচ্ছে এবং সমস্যার আকার কেমন, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই গবেষকদের। প্লাস্টিক দূষণের স্রোতের সঙ্গে তারাও পাল্লা দিয়ে ছুটছেন। কিন্তু কতটা অগ্রগতি হচ্ছে?
রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফার্মাকোলজি অ্যান্ড টক্সিকোলজির’ অধ্যাপক ফোবি স্ট্যাপলটন বলেন, ‘এভাবে বলতে আমার ভালো লাগছে না। কিন্তু আমরা এখনো গোড়াইতেই পড়ে আছি।’
বহু দশক ধরে ক্যান্সার, হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট এবং আরো অনেক কিছুর সঙ্গে ডাইক্লোরোডিফেনাইলট্রিক্লোরোইথেন বা ডিডিটি, সিগারেট ও বায়ুদূষণের সম্পর্ক দেখিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সেই প্রচেষ্টার তুলনায় মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরার বিষয়টিকে জটিল মনে হচ্ছে তাদের কাছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্লাস্টিক নিয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকির পুরোপুরি চিত্র না জানা গেলেও সরকারগুলোর উচিত প্লাস্টিক ব্যবহারে লাগাম টানা।
ভিয়েনার মেডিকেল ইউনিভার্সিটির প্যাথলজির অধ্যাপক লুকাস কেনার বলেন, আমি একজন ডাক্তার, আর আমাদের নীতি হল কারো ক্ষতি না করা। কিন্তু আপনি যদি সব জায়গায় প্লাস্টিক ফেলেন এবং আপনার যদি ধারণা না থাকে আপনি কী করছেন, তাহলে আপনি ওই নীতির সরাসরি বিরুদ্ধে যাচ্ছেন।
পেন স্টেট বেরেন্ড কলেজের শেরি মাসন বলছেন, ‘পরিবেশে আমরা এখন প্লাস্টিকের প্রবাহ কমিয়ে আনতে পারি। আমার মনে হয় মাইক্রোপ্লাস্টিকের ব্যাপারে পূর্ব সতর্কতা নিতে আমাদের যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত আছে।’
কিন্তু তার উদ্বেগ, সিগারেট কোম্পানির মত প্লাস্টিক শিল্প মালিকরা পিছুটান দিতে পারে। নিয়ম মানার ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখাতে পারে। প্লাস্টিক দূষণের সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে।