40 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
বিকাল ৩:৫৯ | ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া
পরিবেশগত সমস্যা

২০৫০ সালের মধ্যে দেশের ৪ কোটি মানুষ থাকবে সাগরের নোনাপানির ঝুঁকিতে

পৃথিবীতে মনুষ্যসৃষ্ট কর্মকান্ডের কারনে প্রতিনিয়তই জলবায়ুর পরির্বতন ঘটছে।যা ঋতুবৈচিত্র্যেও ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।যেমন- গ্রীষ্মের সময় অত্যধিক গরম পড়া, শীতকালীন সময়ে শীত কম গরম বেশি পড়া আবার বর্ষার সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়া, অসময়ে বৃষ্টিপাত হওয়া। এসব পরিবর্তনের কারনে এন্টার্কটিকার বরফ গলে গিয়ে দিন দিন সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।যা আমাদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

জলবায়ুবিজ্ঞানী ও গবেষকেরা এত দিন বলছিলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার কারণে এই শতাব্দীর মধ্যে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। । কিন্তু এখন বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিপদ আরও আগেই আসবে। ২০৫০ সালের মধ্যেই বাংলাদেশের চার কোটি মানুষ সমুদ্রের নোনাপানির ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে। আর এই শতাব্দী শেষে ক্ষতির শিকার মানুষের সংখ্যা সাত কোটিতে পৌঁছাবে।

বিশ্বের প্রভাবশালী বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে ভয়াবহ এই আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ক্লাইমেট সেন্ট্রাল’ থেকে বৈশ্বিক পরিসরে এই গবেষণা করা হয়েছে। মূলত সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার ফলে বিশ্বের উপকূলীয় দেশ ও দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতে কী প্রভাব পড়বে, তা গবেষণায় উঠে এসেছে। ‘ক্লাইমেট সেন্ট্রাল’-এর দুই গবেষক স্বট কে কাল্প এবং বেনজামিন এইচ স্ট্রাউস যৌথভাবে গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছেন। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা থেকে নেওয়া স্যাটেলাইটের ছবি এই গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।

পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ সালিমুল হক বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের ওপর কী প্রভাব পড়তে যাচ্ছে, তার একটা ধারণা ওই গবেষণা প্রতিবেদন থেকে পাওয়া যায়। এতে দেখা যাচ্ছে, বিপদ আরও অনেক এগিয়ে আসছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে কী প্রভাব ফেলবে এবং তা কীভাবে মোকাবিলা করা যাবে, এ নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা হওয়া দরকার।

এর আগে গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত প্যানেল আইপিসিসি থেকে বিশ্বের সমুদ্র নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তাতেও আশঙ্কার চেয়ে দ্রুত হারে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে বলে উল্লেখ করা হয়। ওই প্রতিবেদনেও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বিপদে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

নেচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সমুদ্রের নোনাপানির ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে উপকূলীয় এলাকা।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশের উপকূলের বেশির ভাগ এলাকায় বেড়িবাঁধ রয়েছে। ওই বাঁধগুলোর গড় উচ্চতা ১২ থেকে ১৫ ফুট। কিন্তু সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার প্রভাব মোকাবিলায় এসব বাঁধ যথেষ্ট উঁচু নয়। এসব বাঁধ তিন থেকে পাঁচ ফুট উঁচু করার কাজ চলছে এখন।

পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ কে এম রফিক আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নিজেদের কার্বন নিঃসরণ কমানো এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানা ধরনের অবকাঠামো গড়ে তুলছে। তবে এ ক্ষেত্রে মূল দায়িত্ব উন্নত রাষ্ট্রগুলোর। তাদের উচিত হবে দ্রুত কার্বন নিঃসরণ কমানো ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা দেওয়া।

নেচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন বলা হয়, শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলো এখনো অঙ্গীকার অনুযায়ী কার্বন নিঃসরণ কমাচ্ছে না। ফলে বিশ্বের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দ্রুত বাড়ছে। এত দিন ধারণা ছিল, এই শতাব্দীর মধ্যে, অর্থাৎ ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দুই মিটার বাড়বে। নতুন তথ্য বলছে, ২০৫০ সালের মধ্যেই একই পরিমাণ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে। এত দিন ধারণা ছিল, বিশ্বের ২৫ কোটি মানুষ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার কারণে বিপদে পড়বে। এতে বিপদে পড়া মানুষের সংখ্যা ৬৪ কোটিতে দাঁড়াবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ থাকে ৭টি দেশে। দেশগুলো হলো বাংলাদেশ, ভারত, চীন, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও জাপান। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার কারণে এসব দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বিপদাপন্ন হবে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে বাঁধ ভেঙে উপকূলীয় এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম। কিন্তু মূল ঝুঁকি হচ্ছে নদীতে লবণাক্ততা বাড়বে। একই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রাও বেড়ে যাবে। নদীতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের মতো জেলার বাসিন্দাদের বিপদ বাড়বে। তাদের জীবন-জীবিকা ঝুঁকিতে পড়বে। সে জন্য কৃষি ও অবকাঠামোর ক্ষেত্রে এখন থেকেই প্রস্তুতি বাড়াতে হবে।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত