পাহাড় মানে জীব বৈচিত্র্যের অন্য রকম রাজ্য। যেখানে থাকবে শুধুই জীবজন্তু, বন-জঙ্গল, পশুপাখি। কিন্তু কালের পরিবর্তনে পাহাড়ে যখন মানুষের প্রবেশ ঘটলো, ঠিক তখনই বিলুপ্ত হতে শুরু হলো জীব বৈচিত্র। সে থেকে শুরু হয় বৈচিত্র্যের সাথে মানুষের দ্বন্দ্ব। হ্রাস পেতে থাকে নানা প্রজাতির পশু, পাখি, গাছপালা, বন-জঙ্গল। ধ্বংস হয় যায় প্রাণীকুলের বাসস্থান।
মানুষের অত্যাচারে এখন ক্ষুদ্ধ বনের হাতিও। তাই প্রায় সময় হয় হাতি মানবের দ্বন্দ্ব। কখনো জয় হাতির হয়,আবার কখনো মানুষের। এভাবেই চলছে পাহাড়ের জীবন। এমন গল্প এখন তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের পাহাড় জুড়ে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্যাঞ্চলে প্রায় ৭৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ১০০ প্রজাতির পাখি, ৭ প্রজাতির উভয়চর প্রাণী ও ২৫ প্রজাতির সরীসৃপের অবস্থান ছিল। কিন্ত বন্যপ্রাণীদের নিরাপদ আবাসস্থল ক্রমশ ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় এ সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।
বিশেষ করে মায়া হরিণ, সাম্বার, বানর, গয়াল, হাতি, বন্য শুকর, বন ছাগল, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও হাতি। রাঙামাটি সদরের রাঙাপানি ও উপজেলার বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, লংগদু, কাপ্তাই, রাজস্থলী, কাউখালী, বরকল, নানিয়ারচর ও বিলাইছড়ি এলাকায় রয়েছে বন্যহাতির আবাসস্থল। তবে কত সংখ্যক হাতি রয়েছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই বন বিভাগের।
এসব এলাকায় মানুষের প্রবেশ ঘটানয় প্রায় ধ্বংসের পথে হাতির আবাস্থল। তাই পাহাড়ে হাতি আর মানবের প্রায় সময় হয় দ্বন্দ্ব। বন উজারের কারণে খাদ্য সংকটেন পরেছে পাহাড়ে হাতিগুলো। যার কারণে প্রায় সময় লোকালয়ে হামলা এ বন্যপানীর দল। ভাঙচুর করে পাহাড় বাসিন্দাদের বাড়িঘর। হাতি থেকে রক্ষ পেতে মানুষও অবলম্বন করছে ভিন্ন ফাঁদ। তাতে পার্বত্যাঞ্চল থেকে প্রায় বিলুপ্তের পথে বিশাল আকৃতির এ বন্য প্রাণীটি।
আইইউসিএনের জরিপের বলছে, ২০০৯-২০১৯সাল পর্যন্ত গত ১০ বছরে রাঙামাটি ও বান্দরবানে বন্য হাতি মারা গেছে ২০টি। তার মধ্যে বান্দরবানের লামা বনবিভাগের এলাকায় ১০টি, পাল্পউড বনবিভাগের অধীনে ২টি। এছাড়া রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের এলাকায় ৫টি ও উত্তর বনবিভাগের এলাকায় ৩টি।
আইইউসিএনের জরিপে আরও বলা হয়, হাতিদের মধ্যে দু’টি আলাদা শ্রেণি রয়েছে। একটি হলো আবাসিক। অন্যটি অনাবাসিক। আবাসিক হাতিগুলো বাংলাদেশে থাকে। আর অনাবাসিক হাতিগুলো পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং কিছু সময় অবস্থান করে আবার চলে যায়। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের হাতিগুলো বেশির ভাগ স্থায়ী।
আইইউসিএন ২০১৫-১৬সালের জরিপে বাংলাদেশের ১২টি এলাকাকে হাতির করিডোর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। করিডোরগুলোর মধ্যে রয়েছে- কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের অধীনে ৩টি, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের অধীনে ৫টি এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের অধীনে ৪টি।
এগুলো হলো, উখিয়া-ঘুমধুম সীমান্ত, তুলাবাগান-পানেরছড়া, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি-রাজারকুল। ভ্রমরিয়াঘোনা-রাজঘাট, তুলাতলী-ঈদঘর, খুটাখালী-মেধাকচ্ছপিয়া, খাসিয়াখালী-সাইরুখালী ও সাইরুখালী-মানিকপুর।
পার্বত্য চট্টগ্রামের মধ্যে- রাঙামাটির কাপ্তাই-বরকল-লংগদু ও কাউখালী। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এসব হাতির করিডোরগুলোতে বন উজার করে মানুষের বসতি নির্মাণ করার কারণে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে। যে কারনে মানুষের আক্রমনে হাতি, হাতির আক্রমণে মানুষ মারা যাচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিন বন-বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান শাহ বলেন, রাঙামাটি কাপ্তাই উপজেলা হচ্ছে হাতির গুরুত্বপূর্ণ করিডোর। এই এলাকায় প্রায় ৫৫টি হাতি রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই করিডোরগুলোতে মানুষ বর্তমানে পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণ করছে। একই সাথে বন উজারের কারণে খাবার সংকটে পড়ছে হাতি। হাতি কিন্তু সহযে চলাচলের পথ পরিবর্তন করেনা।
তিনি আরও বলেন, হাতি মানুষের সংঘর্ষের বড় কারণ হাতি চলাচলে মানুষের বসতি। তাই প্রায় সময় পাহাড়ে বন্যহাতির তান্ডবে মানুষের ফসল ও বাড়ি ঘর ক্ষতিগ্রন্ত হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও মানুষের জন্য হাতির মৃত্যু হচ্ছে। এসব বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে কাজ করছে বন বিভাগ। সূত্র: বিডি-প্রতিদিন