বৃক্ষ আমাদের পরম বন্ধু।পৃথিবীকে বাঁচাতে গাছের বিকল্প নেই।থিবীতে প্রাণির বেঁচে থাকার জন্য যে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় তা কেবল বক্ষের কল্যানেই সম্ভব।তবুও আজ প্রতিনিয়ত হচ্ছে বৃক্ষনিধন।সম্প্রতি পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত আমাজন পুড়ে ধ্বংস হয়েছে লক্ষ লক্ষ বৃক্ষ।অথচ এই অমাজন বনই পৃথিবীর ২০ শতাংশ অক্সিজেন যুগিয়ে থাকে। যেভাবে প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে গাছ তাতে পৃথিবীতে এখন গাছ বাঁচানোই হয়ে গেছে সবচেয়ে বড় সমস্যা।
কিন্তু সবুজে ঘেরা পৃথিবীর আজ গাছের সংখ্যা কত?
জাতিসংঘের পরিবেশ কার্যক্রমের ‘বিলিয়ন ট্রি’ প্রচারের অনুরোধে ২০১৫ সালে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, পৃথিবীতে মোট গাছের সংখ্যা তিন ট্রিলিয়ন, অর্থাৎ তিন লাখ কোটির বেশি। এই গাছের প্রায় অর্ধেক আছে গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে।অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষপ্রতি প্রায় ৪২২টি গাছ আছে! এই গবেষণা ছিল অত্যন্ত জটিল।
গবেষণার জন্য অ্যান্টার্কটিকা বাদ দিয়ে পৃথিবীর সব মহাদেশের সব গাছ আছে—এমন এলাকাকে চার লাখ ভাগে ভাগ করে স্যাটেলাইট দিয়ে তার ছবি নেওয়া হয়। এরপর সেই জায়গাগুলোর আবহাওয়া, সেখানে মানুষের কর্মকাণ্ড, মাটির অবস্থা ইত্যাদি তথ্য কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর মোট গাছের এই সংখ্যা বের করা হয়েছে। এ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে সুপার কম্পিউটার।আজ থেকে ১২ হাজার বছর আগে কৃষিকাজ শুরু হওয়ার আগে ছিল আজকের থেকে দ্বিগুণ গাছ। তার মানে আমরা এই সময়ের মধ্যে অর্ধেক গাছ শেষ করে ফেলেছি। আর এখন গাছ নিধন করছি প্রতিবছর ১৫ বিলিয়ন করে।
গবেষণায় আরও কিছু তথ্য পাওয়া গেছে, যা চমকে দেওয়ার মতো। গাছ বেশি গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে হলেও গাছের ঘনত্ব বেশি চরম ঠান্ডা অঞ্চলে। মেরু প্রান্তে গাছের ঘনত্ব প্রতি মিটারে একটি করে। উত্তর আমেরিকা, স্ক্যান্ডেনেভিয়া আর রাশিয়ার সরু লম্বা কোনিফার-জাতীয় গাছের বোরিয়াল অরণ্য পৃথিবীর সবচেয়ে গহিন বন। সেখানে আছে ৭৫০ বিলিয়ন গাছ। পৃথিবীর মোট গাছের ২৪ শতাংশ আছে এই অঞ্চলে।
পৃথিবীর কোন দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি গাছ আছে জানতে গেলে শোনা যাবে রাশিয়ার কথা। তবে নাম না জানা অনেক অচেনা ছোট ছোট দেশেও রয়েছে যেখানে অধিকাংশ এলাকা জুড়েই বিস্তৃত রয়েছে গাছ।
তাদের মধ্যে দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে ছোট দেশ সুরিনাম। এর আয়তন ৬৩ দশমিক ২৫২ বর্গমাইল। দেশটির ৯৮ দশমিক ৩ শতাংশ অরণ্যে ঢাকা। দেশটির আদিবাসীরা তাদের অরণ্যের সুরক্ষার জন্য রাজনৈতিকভাবেও খুব তৎপর।
এরপর আসবে মাইক্রোনেশিয়া। প্রশান্ত মহাসাগরের কয়েক হাজার দ্বীপ নিয়ে তৈরি এই দেশের আয়তন সব মিলিয়ে মাত্র ১ হাজার বর্গমাইল। এই দ্বীপগুলোর ৯২ শতাংশ ঘন অরণ্যে ঢাকা।
মধ্য আফ্রিকার আটলান্টিক উপকূলের দেশ গ্যাবন। আয়তনে ছোট নয়, এক লাখ বর্গমাইল। জনসংখ্যা মাত্র ২০ লাখ। গ্যাবনের ৯০ শতাংশ গাছে ঢাকা।
পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের দেশ পালাউ। আয়তন মাত্র ১৮০ বর্গমাইল। তার প্রায় ৮৮ শতাংশ অরণ্য।
ভারত মহাসাগরের ছোট দ্বীপদেশ সেশলস। মাত্র ১৭৭ বর্গমাইল আয়তনের এই দেশটির ৮৫ শতাংশ অরণ্যে ঢাকা।
দক্ষিণ আমেরিকার ৮৩ বর্গমাইলের দেশ গায়ানা। দক্ষিণ আমেরিকার একমাত্র ইংরেজিভাষী এই দেশটির ৮৪ শতাংশ অরণ্য।
এই তালিকায় এশিয়ার একমাত্র দেশ লাওস। ৯১ দশমিক ৮৭৫ বর্গমাইলের এই দেশটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একমাত্র দেশ, যার কোনো সমুদ্রতীর নেই। পাহাড়ে ঢাকা এই দেশটির ৮২ শতাংশ অরণ্যের অধিকারে।
একসময় প্রকৃতির রাজকন্যা এশিয়ার ছোট দেশ বাংলাদেশেকে বলা হলেও কালের বিবর্তনে আর বৃক্ষ নিধনে তা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি তা ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারি বেসরকারিভাবে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। সচেতন করা হচ্ছে বভিন্ন সেমিনার ও ‘গাছ লাগান,পরিবেশ বাঁচান’ – সচেতনমূলক বাণীর মাধ্যমে।পরিবেশ রক্ষার্থে দেশব্যাপী লাগানো হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির চারাগাছ।