শতাব্দী প্রাচীন কয়েকশো তালগাছ সভ্যতার খাতিরেই নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য রাস্তার ধারে গাছ কেটে ফেলা যেনো এক নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা। রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য এবার কেঁটে ফেলা হচ্ছে জঙ্গলমহলের রাস্তার দুধারে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তাল গাছের ওপর। জঙ্গলমহলের রাস্তার দু’ধারে থাকা দীর্ঘকায় তালগাছ সহজেই চিহ্নিত করত সারেঙ্গাকে।
তবে সভ্যতার খাতিরেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে তারা। ইতিমধ্যে গাছগুলোকে চিহ্নিত করা হয়ে গিয়েছে। শতাব্দী প্রাচীন এই গাছগুলো কেবল মাএ রাস্তা তৈরির কারণে কেটে ফেলা হবে শুনে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বিষয়টি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে পরিবেশপ্রেমীরা।
দক্ষিণ বাঁকুড়ার পিরলগাড়ি মোড় থেকে সারেঙ্গা যাওয়ার পথে রাজ্য সড়কের দু’ধারে রয়েছে দীর্ঘাকৃতির তালগাছ। শুধু সুখাডালি থেকে আমঝোর পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাতেই রয়েছে দু’শোরও বেশি তালগাছ।
রাস্তার ধারে সমান্তরাল ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা সেই তালগাছগুলোই শেষমেষ কেটে ফেলা হবে। খবর ছড়িয়ে পড়তেই ফেসবুকে প্রতিবাদে সরব হয়েছে ‘সারেঙ্গা গ্রিন ফোর্স’।
এই সংস্থার মুখপাত্র শ্যামল গরাই বললেন, এলাকার উন্নয়নের জন্য রাস্তা হোক। কিন্তু যে তালগাছগুলো যুগ যুগ ধরে রয়েছে, সেগুলোই তো এই এলাকার ল্যান্ডমার্ক। সৌন্দর্য ছাড়াও মানবসমাজে এই গাছগুলোর অবদান নেহাত কম নয়। বজ্রপাতের মতো দুর্যোগ ঠেকায় এই ধরনের বড় গাছগুলো। তাই গাছগুলোকে বাঁচিয়ে রাস্তা তৈরি করলেই ভালো হয়।
শ্যামলবাবুর কথায়, গাছগুলোকে মাঝে রেখে দু’পাশেও রাস্তার পরিকল্পনা করা যেতে পারে। যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে অন্তত একটি দিকের গাছগুলো অন্তত রাখা হোক। যদিও তেমন সম্ভাবনার কথা শোনাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট দফতর।
পূর্ত দফতর (সড়ক)-এর বাঁকুড়া হাইওয়ে ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার পার্থসারথি কুণ্ডু এই বিষয়ে বললেন, “ওই রাজ্য সড়কে ডবল লেনের কাজ শুরু হয়েছে। জায়গা কম, যার ফলে গাছ রেখে রাস্তা সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে না। তাই দু’দিকের গাছই কাটতে হবে।
এ ব্যাপারে বন দফতরের সঙ্গে কথাবার্তা ফাইনাল হয়েছে। এখন গাছ কাটা হলেও রাস্তা তৈরির পর একটি গাছের পরিবর্তে ৫টি গাছ লাগিয়ে দেওয়া হবে। এটা আগে থেকেই পরিকল্পনা করা আছে।
তিন বছর ওই নতুন গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও নেওয়া হবে।” এ প্রসঙ্গে শ্যামল গরাই বলেন, নতুন গাছ লাগালেও তা বড় হতে বেশ কয়েক বছর সময় লাগবে।
সম্প্রতি বাঁকুড়া সমেত রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় বজ্রপাতে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা রুখতেও জেলা প্রশাসন তালগাছ রোপণের কথা বলেছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অত্যন্ত উঁচু গাছগুলো বজ্রপাত নিজের শরীরে টেনে নিয়ে বিপদের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে। তাছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতিতে তালগাছের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।