কফির বাম্পার ফলনে কৃষক সানোয়ার হোসেন এখন কফি চাষের বিরাট সম্ভাবনা দেখছেন। তারমতে, কৃষকের আগ্রহ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে কফি চাষে বিপ্লব ঘটানো যেতে পারে
কফি পৃথিবীর সেরা জনপ্রিয় পানীয়ের মধ্যে প্রথম সারিতেই আছে। বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যেও স্বল্প সময়ে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কফি। অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও আবহাওয়া বিবেচনায় বান্দরবানের পাহাড়ি অঞ্চলে কয়েকবছর আগে পরীক্ষামূলক কফির চাষ শুরু হয়। সাফল্য পাওয়ায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এটি সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। অনেকে আবার ব্যক্তিগত উদ্যোগে কফি চাষে মনোযোগী হয়েছেন। তেমনই একজন টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার সানোয়ার হোসেন।
উপজেলার বনাঞ্চল মহিষমাড়া গ্রামে নিজের বাড়ির পেছনে কফির বাগান করেছেন সানোয়ার হোসেন। বিভিন্ন ফল ফসলের পাশাপাশি তিনি শখে বশে গড়ে তুলেছিলেন এই কফির বাগান।
কিন্তু কফির বাম্পার ফলনে তিনি এখন কফি চাষের বিরাট সম্ভাবনা দেখছেন। তারমতে, কৃষকের আগ্রহ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে কফি চাষেও বিপ্লব ঘটানো যেতে পারে।তিনি কফিসহ কমপক্ষে ১০ ধরনের ফলের চাষাবাদ হচ্ছে তার বাগানে। নিরাপদ ফল উৎপাদনে এলাকার মানুষের কাছে তিনি আদর্শ।
তিনি বলেন, চা-কফি খাওয়ার নেশা থেকে এই কফি চারা লাগাই আমি। বান্দরবানের রায়খালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে ২০১৭ সালে ২০০ চারা কিনে এনেছিলাম। দুই বছর পর গতবছর কিছু ফল আসে। আর এ বছর প্রচুর ফল এসেছে।তবে গতবছরের প্রতিগাছে ২ কেজির মতো ফল এলেও শুকিয়ে প্রায় ২৫০ গ্রাম পাওয়া যায়। তবে কফির প্রক্রিয়াজাত করণের যন্ত্র নেই আমার কাছে।তাই তিনি সরকারের প্রতি কফি বাজারজাতকরণ বা প্রক্রিয়াজাত করণের যন্ত্র দেওয়ার দাবি জানান।
তিনি আরও বলেন, কফি চাষ করে আমার ফলন খুবই ভালো হয়েছে। এ চাষাবাদের আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কৃষি অফিস থেকে আমাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছে। ছয়মাসের মধ্যেই কফির চারা তৈরি করা যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সানোয়ার হোসেনের বাগানে ৪৫০টি কফি গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে প্রত্যেক শাখা-প্রশাখা ফলে ভরপুর। কিছু কিছু ফল পাকতেও শুরু করেছে। এছাড়াও তিনি নতুন করে আরেকজন কৃষকের জমিতে ২শ’ কফির চারা রোপণ করেছেন। কফির পাশাপাশি সেই বাগানে বিভিন্ন ধরনের ফলের চাষাবাদও হচ্ছে।অনেকেই প্রতিদিন আসেন কফি বাগান দেখতে। জীবনে প্রথম কফি গাছ ও বাগান দেখে তারা অভিভুত। অনেকেই কফি বাগান করার জন্য সানোয়ার হোসেনের পরামর্শ নিচ্ছেন।
টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাশার বলেন, টাঙ্গাইলের মধুপুর ও সখীপুর উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া কফি চাষের জন্য উপযোগী। কৃষকদের প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া গেলে এ অঞ্চলে কফি চাষের এক বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মধুপুরে ছানোয়ার হোসেন এবং আবুল হোসেন নামে দুই জন কফি চাষ করছেন। তারা আমাদের পরামর্শে এবং নিজ উদ্যোগে এ কফি চাষ করছেন। প্রত্যেকটি গাছে কফির ভালো ফলন হয়েছে। নভেম্বর মাসেই এ কফিগুলো পরিপক্ক হয়ে যাবে। কারিগরি সার্পোট দেওয়ার জন্য বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে বলা হয়েছে।টাঙ্গাইলসহ সারাদেশে সরকারি সহায়তায় কৃষকদের যদি কফি চাষে আগ্রহী করা যায় তবে কফির আমদানি নির্ভরতা কমে আসবে। এত সাশ্রয় হবে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা এমনটাই মনে করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।