37 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
রাত ৮:৫০ | ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
ভারতে পরিবেশ আন্দোলনে টারজান লেডি খ্যাত যমুনা টুডু
জানা-অজানা পরিবেশ রক্ষা

ভারতে পরিবেশ আন্দোলনে দ্য লেডি টারজান খ্যাত যমুনা টুডু

ভারতে পরিবেশ আন্দোলনে টারজান লেডি খ্যাত যমুনা টুডু

পৃথিবীতে প্রায় প্রতিটি দেশে পরিবেশ বিষয়ক আন্দোলনের এক সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে,ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়। বিশনোইদের সময় থেকে চিপকো পর্যন্ত প্রতিটি পরিবেশ তথা গাছ বাঁচাও আন্দোলনে আমরা নারীদের দেখতে পেয়েছি আন্দোলনের পুরোটা জুড়ে নেতৃত্বে এবং লড়াইয়ের ময়দানে অগ্রসর ও স্বমহিমায় শ্বাসত ।

ভারতের সেই রকমই এক বীরঙ্গনার বীরগাঁথা অধ্যায় আজকের আলোচ্য বিষয়, গাছ বাঁচাও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের তিনি বীরসেনানী !

টারজানের কথা বলতে আমরা সেই যে জঙ্গলে বেড়ে ওঠা নাম না জানা একা এক শিশু বুঝি যে তার জীবনে অরণ্যকে ঘরবাড়ি মনে করে, পশু পাখি আর জঙ্গলকে ভালোবাসে, জঙ্গলই ছিল তার মা, বন্ধু, আশ্রয় সব কিছু কিন্তু বাস্তবতের টারজান যাকে বলা হচ্ছে তার বিষয়টি একটু অন্যরকম।

এই বীরঙ্গনা নারীও টারজানের জীবনগল্পের মত না হলেও তার মতোই অরণ্যপ্রেমী এবং অরণ্যের সুরক্ষায় নিজের জীবনকে সদা ব্রত করেছেন। তিনি অরণ্য রাজ্যের যমুনা টুডু ভারতেই যার সাক্ষাৎ মেলে এবং স্থানীয়দের ভাষায় ‘দ্য লেডি টারজান’।

দ্য লেডি টারজান খ্যাত যমুনা টুডুর জন্ম এক আদিবাসী কৃষক পরিবারে ১৯ ডিসেম্বর ১৯৮০ সালে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার রায়রংপুরে । শৈশব থেকেই তিনি দেখে আসছেন সেখানের রুক্ষ জমিতে গাছের চারা রোপন করে তাদের যত্নসহকরে বড়ো করতেন তার বাবা। বাবাকে দেখেই ফলত গাছের প্রতি এক নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও আজন্ম টান জন্মায় যমুনাদেবীর।

১৯৯৮ সালে রায়রংপুর থেকে ১০০ কিমি দূরে ঝাড়খণ্ডের পূর্বে সিংভূম জেলার মুতুরাখাম গ্রামে মাত্র ১৮ বছর বয়সে মান সিং টুডুর সাথে বিয়ের পর থেকেই নিঃসন্তান এই মহিলার কাছে জঙ্গলই যেন হয়ে ওঠে তাঁর সন্তান ! আর সেই সন্তানকে রক্ষা করতেই একাই বারবার এগিয়ে এসেছেন তিনি।

প্রায় পনেরো বছর ধরে তিনি অরণ্য রক্ষায় ব্রতী হয়েছেন । ইচ্ছাশক্তিকে সম্বল করে হার না মানা মনোভাব আর অসীম সাহসিকতাদিয়ে একাহাতেই কাঠ মাফিয়া এবং গাছ চোরাচালানকারীদের প্রতিহত করেছেন । আর এভাবেই আজ তিনি ঝাড়খণ্ডের জঙ্গলের একচ্ছত্র রাণী, জঙ্গলের রক্ষার্থী ।

তার স্বামী মান সিং টুডু পেশায় একজন ক্ষুদ্র মানের কনট্রাকটর, যিনি গ্রামে গ্রামে বাড়ি তৈরি করে জীবিকা আহরণ করেন। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে এসে যমুনা টুডু আর অন্যান্য সাধারণ গৃহবধূর মতো থাকেননি । তিনি দল গঠন করে শুরু করেন অরণ্য বাঁচানোর এক অসাধারণ সংগ্রাম যেটা অনেকটা সিনেমার গল্পের মত মনে হয়।

চাকুলিয়ারে আসার পর তাঁর নজরে আসে আশেপাশের শাল বন কেটে গাছ পাচারের বিষয়টি। এরপরই পরিবেশ রক্ষার অভিযানে নেমে পড়লেন তিনি । শুরু হল প্রতিনিয়ত জঙ্গল বাঁচানোর ভীষণ আন্দোলন সংগ্রাম ও লড়াই । ১৯৯৮ সালে গড়ে তুললেন স্থানীয় মহিলাসহ সমমনাদের নিয়ে ‘বন সুরক্ষা সমিতি’ যার সদস্য তিনি সহ পাঁচ জন স্থানীয় মহিলা। তারপর কোথাও কোনও গাছ কাটার খবর পেলেই ছুটতেন তাঁরা, হাতে নাতে অপরাধীদের ধরে আইনের আশ্রয়ে সোপার্দ করতেন।

এই কাজ মোটেও সহজ ছিল না তার বা তাদের জন্যে। যমুনা দেবী গাছ চোরাচালানকারীদের রুখতে গিয়ে আহত হয়েছেন বহুবার এমনকি গ্রামবাসীদের তরফ থেকেই তীব্র বিরোধিতা আসে কেননা তাদের কাছে বন হল জ্বালানি কাঠের প্রধান উৎস।

যমুনাদেবীরা স্থানীয়দের সচেতনতা তৈরী করেন পাশাপাশি জ্বালানি হিসেবে বিকল্প বস্তুর ব্যবহার বা ছোটো ডালপালা ব্যবহার এবং যতটা সম্ভব বড়ো গাছ না ব্যবহার করার ব্যবহারে পরামর্শদেন। পরিস্থিতি আস্তে আস্তে বদলায় এবং গ্রামবাসীদের মধ্যে অরণ্য সংরক্ষণের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।



সেইসময় ঝাড়খন্ড রাজ্যের বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল জুড়ে ছিলো বন-মাফিয়া এবং কাঠ চোরাচালানকারীদের রাজত্ব। যদিও তাদের হুমকি,বাধা পেয়েও থেমে থাকেননি যমুনাদেবী। জঙ্গল উজাড় করে মুনাফা অর্জন ছিল উপার্জনের একটি সহজ মাধ্যম যেটা বেআইনি হলেও অসম্ভব ছিলো না। টারজান লেডি যমুনাদেবী বন্দুকবাজ এইসব লোকেদের বিরুদ্ধে লাঠি, তীর-ধনুক, বর্শা হাতেই বনরক্ষার লড়াই শুরু করেন এবং বিজয় ছিনিয়ে আনেন।

বন-মাফিয়া এবং কাঠ চোরাচালানকারীদের কাছ থেকে বহুবার খুনের হুমকি পেয়েছেন। এই সাহসী নারী তবুও ছাড়েননি পরিবেশ বাঁচানোর লড়াই। ২০০৪ সালে তাঁর বাড়িতে হামলা, ২০০৮ সালে যমুনাদেবী ও তাঁর স্বামীর ওপর প্রাণঘাতী হামলা হয় যদিও সৌভাগ্যবসত অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান তিনি।

তার এই প্রচেষ্টা বিফলে যায়নি তার প্রমান হিসাবে মুতুরখাম গ্রামসংলগ্ন প্রায় আশি একর বনভূমি বাঁচাতে সক্ষম হয়েছেন। বর্তমানে “বন সুরক্ষা সমিতির” এর তিনশোটি দল রয়েছে এবং প্রত্যেক দলে কমপক্ষে ত্রিশ জন করে সদস্য রয়েছেন যারা যমুনাদেবীর নেতৃত্বে আজও বনভূমি বাঁচাতে নিরলস কাজ করে চলেছেন। এখন ঝাড়খন্ড পুলিশ ও বন বিভাগ এবং “বন সুরক্ষা সমিতি” যৌথভাবে বনরক্ষার কাজ পরিচালনা করছেন।

মুনাদেবীদের নিরলস লড়াইয়ে সুফল হিসেবে ঝাড়খন্ড সরকার বর্তমানে যমুনাদেবীর গ্রামটিকে দত্তক নিয়েছেন। শিক্ষা ও পানি পরিষেবার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে তাঁর গ্রামে ১টি কন্যা সন্তানের জন্ম হলে ১৮ টি গাছ এবং ১টি মেয়ের বিয়ে হলে ১০ টি গাছ লাগানোর নিয়ম চালু রয়েছে।

অরণ্য সংরক্ষণে সাফল্যে এবং পরিবেশ রক্ষায় অবদানের জন্যে, স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি বিভিন্ন পুরষ্কার পেয়েছেন । যেমন – ২০১৪ সালে স্ত্রী শক্তি পুরস্কার, গডফ্রে ফিলিপস সাহসিকতা পুরষ্কার, ২০১৭ সালে Women Transforming, ২০১৯ সালে ভারত সরকার তাঁর অরণ্য সংরক্ষণের নিরলস উদ্যোগকে সম্মান জানিয়ে পদ্মশ্রী পুরস্কার, ইত্যাদি।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত