বন্যার পর এবার ভাঙন শুরু হয়েছে যমুনা তীরবর্তী অঞ্চল সিরাজগঞ্জে। নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি স্থানে ইতোমধ্যে ভাঙন শুরু হয়েছে।ধসে গেছে কাজিপুরের দুটি বাঁধ। এসব কারণে তীরবর্তী মানুষগুলো চরম আশঙ্কার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। তিনটি উপজেলার অন্তত পাঁচ শতাধিক বাড়ি-ঘর ও শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
শুক্রবার (২৮ আগস্ট) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত রোববার (২৩ আগস্ট) জেলার কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়ন রক্ষা বাঁধে দ্বিতীয় দফা ধস দেখা দেয়। এর একদিন আগে শনিবার (২২ আগস্ট) একই উপজেলার ঢেকুরিয়া নদীর তীর রক্ষা বাঁধের রিভার স্যাংক ধসে যায়। এতে বেশ কিছু পরিবার ভাঙন আতঙ্কে বাড়িঘর সরিয়ে ফেলে।
অপরদিকে চৌহালী উপজেলার সদিয়া চাঁদপুর, বাঘুটিয়া ও খাস পুখুরিয়া ইউনিয়নে শুরু হয়েছে নদীভাঙন। ইতোমধ্যে ওই তিনটি ইউনিয়নের চার শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। চাঁদপুর ও বোয়ালকান্দি গ্রামের প্রায় ২৫/৩০টি বাড়ি-ঘর ভাঙনের কবলে পড়েছে। এছাড়াও শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর, খুকনী ও কৈজুরী ইউনিয়নের যমুনা তীরবর্তী অঞ্চলে ভাঙন চলছে।
কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রহিম সরকার জানান, গত ২৩ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় বাঁধে ধস দেখা দেয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার ধসে যায়। এতে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী নাটুয়ারপাড়া হাট, স্কুল-কলেজসহ পুরো এলাকা। গত মাসেও ওই বাঁধের প্রায় ২শ মিটার নদীতে ধসে গেছে।
কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ হাসান সিদ্দিকী বলেন, ঢেকুরিয়া নদী তীর রক্ষা বাঁধের নিম্নাংশে ধস দেখা দেওয়ায় তীরবর্তী বেশ কিছু পরিবার আতঙ্কে বাড়ি-ঘর সরিয়ে নিয়েছে। ইতোমধ্যে সেই ধস রোধ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাহ্হার সিদ্দিকী বলেন, বন্যার আগে থেকেই মেটুয়ানি, বিনানুই, চর নাকালিয়া গ্রামে ভাঙন দেখা দেয়। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা আরও বাড়ছে। এখন পর্যন্ত তিনটি গ্রামের প্রায় চার শতাধিক বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে পাঁচ শতাধিক বাড়ি-ঘর। এখন পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম সিরাজ বলেন, ইতোমধ্যে চাঁদপুর গ্রামের ১৫টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। বোয়ালকান্দি গ্রামের বেশ কটি বাড়ি-ঘর ও একটি মসজিদ যমুনায় বিলীন হয়েছে। এখনও ভাঙনের মুখে রয়েছে চাঁদপুর, মাঝগ্রাম, বেতিল চরপাড়া, বোয়ালকান্দিসহ প্রায় পাঁচ/সাতটি গ্রামের শত শত বাড়ি-ঘর, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
তিনি আরও বলেন, চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের একটি টিনসেড ঘর ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বিদ্যালয় ভবন কাম আশ্রয়কেন্দ্রসহ আরও দুটি ভবন রয়েছে নদী থেকে মাত্র কয়েক ফুট দূরে।
শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ বলেন, কয়েক বছর ধরেই ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে কৈজুরী পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন চলছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতা বাড়তে থাকায় চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষ।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, মে মাসের শেষ থেকে যমুনায় পানি বাড়া শুরু করে। নিম্নাঞ্চলে কয়েক দফায় বন্যা হয়। যমুনায় পানি বৃদ্ধির কারণে তীব্র স্রোত ও ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে ঢেকুরিয়া ও নাটুয়াপাড়ায় বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। তবে বালুভর্তি জিওব্যাগ ডাম্পিং করে ধস ঠেকানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শাহজাদপুর উপজেলার ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে কৈজুরী প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার নদী তীর অরক্ষিত থাকায় সেখানে ভাঙন রয়েছে। এছাড়া কাজিপুরে পাটাগ্রাম এলাকাতেও অরক্ষিত রয়েছে ৫ কিলোমিটার। এ দুটি তীর রক্ষায় এক হাজার ১শ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সূত্র: বাংলানিউজ