১৪ ও ১৬ ডিসেম্বরকে ঘিরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ফুলের ব্যবসা
ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালিতে বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসকে ঘিরে ফুলের ব্যবসা কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এতে স্বস্তি ফিরলেও চাষিদের মধ্যে আবারও করোনার আতঙ্ক থেকে যাচ্ছে।
মূলতঃ বিভিন্ন দিবসের দিকে চেয়ে থাকেন এখানকার ফুল চাষিরা। কিন্তু ভাইরাসের প্রভাবে গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে কোন ব্যবসা করতে পারেনি তারা। তার ওপর এসে আঘাত করে ঘূণিঝড় আম্পান। তখন চরমভাবে ভেঙে পড়ে ফুল চাষের ওপর র্নির্ভর এলাকার কয়েক হাজার মানুষ।
বিক্রি না হওয়ায় গরু-ছাগল দিয়ে অনেকে ক্ষেতের ফুল খাইয়েছে। দেশের মধ্যে বাণ্যিজিকভাবে যশোর জেলার গদখালীতে ফুল উৎপাদন শুরু করা হয় আশির দশকে। দেশে ফুলের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার রয়েছে এখানে। ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারী ক্রেতারা গদখালিতে আসেন ফুল ক্রয় করতে।
ফুল উৎপাদন ও কেনাবেচায় শত-শত কোটি টাকার লেনদেন হয় বছরে। যশোর শহর থেকে পশ্চিমের উপজেলা ঝিকরগাছা ও শার্শা থানার ৭৫টি গ্রামের প্রায় সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয় হরেক রকমের ফুল। ঝিকরগাছা ও শার্শা থানার গ্রামগুলোর রাস্তার দুইপাশে দিগন্ত বিস্তৃত জমিতে লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি আর সাদা রঙের ফুলের সমাহার দেখা যায়।
প্রায় প্রতিদিনই ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারার শত-শত ফুলচাষির আনাগোনা শুরু হয় গদখালীর বাজারে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছোট-বড় পাইকাররাও সেখান থেকে ফুল কিনে নিয়ে যান। এরপর বিভিন্ন হাতবদল হয়ে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার মাধ্যমে সারা দেশে ফুল ছড়িয়ে পড়ে , এমনকি দেশের বাইরেও রপ্তানি হয়।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়নের পানিসারা, হাড়িয়া, কৃষ্ণচন্দ্রপুর, পটুয়াপাড়া, সৈয়দপাড়া, মাটিকুমড়া, বাইসা, কাউবা, ফুলিয়া আর শার্শার নাভারণ, উলাশি, গদখালী ও শ্যামলাগাছি গ্রামের প্রায় প্রতিটি মাঠ এখনও প্রচুর ফুলে ভরা। কয়েক শত হেক্টর জমি নিয়ে গাঁদা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, কসমস, ডেইজ জিপসি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন ধরণের ফুলের ব্যাপক চাষাবাদ রয়েছে এখানে।
করোনা পরিস্থিতি আসার আগে সূর্য ওঠার সঙ্গে-সঙ্গে জমে উঠতো গদখালীর ফুলের বাজার। কিন্তু গত এক বছর ধরে সেই দৃশ্য আর নেই। পুরো বাজার এলাকা যেন জনমানবশূন্য। নেই আগের মতো ফুলের দাম নিয়ে হাঁকডাক। চাষিদের চোখে-মুখে বিষন্নতার ছাপ।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির (বিএফএস) সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, ‘এবার ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলায় সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ করেছিলেন। গতবছর করোনার কারণে কেউ ব্যবসা করতে পারেনি। গদখালি অঞ্চলে পাঁচ হাজার কৃষকের মধ্যে পঞ্চান্ন জন সরকারের প্রণোদনা ঋণ পেয়েছে। বাকি সবাই বিভিন্ন এনজিও সংস্থার কাছ খেকে সুদে ঋণ ও যাদের ঋণ নেবার ক্ষমতা নেই তাদের অনেকে জমি বিক্রি করে সংসার চালিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাস, সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে ফুল সেক্টরের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। সেই অবস্থা থেকে এবারের ১৪ ও ১৬ ডিসেম্বর অন্তত পঞ্চাশ লাখ টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে যা স্বাভাবিক সময়ে দুই কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়ে থাকত।
পানিসারা গ্রামের আবদুল রহিম জানান, প্রতি একর জারবেরা ফুল চাষ করতে ছত্রিশ লাখ টাকা খরচ হয়। রজনীগন্ধা চাষে একর প্রতি খরচ আড়াই লাখ টাকা, গোলাপ সাড়ে চার লাখ টাকা, গ্লাডিওয়াস চার লাখ টাকা, গাঁদা চাষে দু’লাখ ত্রিশ হাজার টাকার মতো খরচ হয়ে থাকে। দুই দিবসে ভালো ফুল বিক্রি হয়েছে। এতে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়েছে।
গদখালী হাড়িয়া গ্রামের ফুল চাষি রহমত গাজী বলেন, ‘আড়াই বিঘা জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ করেছিলাম। প্রতিপিস চার টাকা করে বিক্রি করেছি। এতে সামন্য লাভ হয়েছে।
ঝিকরগাছার পটুয়াপাড়া এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘করোনাভাইরাসে ফুল বিক্রি না দেনাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। চলতি মাসের দুই দিবসে ভালো ফুল বিক্রি হয়েছে।
যশোর ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুম হোসেন পলাশ জানান, ‘উপজেলার গদখালীতে এবার সাড় ৬ হাজার হেক্টর জমি ফুলের আবাদ করা হয়েছে। কিন্তু মহামারি করোনা ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবে সব ফুল চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু চলতি মাসে ভালো ফুল বিক্রি হয়েছে বলে জেনেছি।
যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের উপ-পরিচারক বাদল চন্দ্র জানান, করোনায় ফুল চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও চলতি মাসে তাদের ভালো ফুল বিক্রি হয়েছে।
সূত্র: বাসস