বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস -২০২১
আজ ২২ শে মে বিশ্ব জীববৈচিত্র্য (Biodiversity) দিবস । ২০০০ সালের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রতি বছর ২২ শে মে এ দিবসটি পালনের ঘোষণা করা হয়। তখন হতে প্রতিবছর ২২ শে মে এ দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হচ্ছে।
মানবিক বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ দ্বারা জীববৈচিত্রের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে। জীববৈচিত্র্য (Biodiversity) সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং এর প্রতি সচেতনতা তৈরি করার জন্য এ দিবসটি পালন করা হয়। প্রতিবছর এ দিবসটির জন্য একটি প্রতিপাদ্য নির্বাচন করা হয়। এই বছরের দিবসটির প্রতিপাদ্যটি হ’ল “আমরা প্রকৃতির সমাধানের অংশ (We’re part of the solution #ForNature.)”।
গত বছর ২০২০ এর প্রতিপাদ্যের ধারাবাহিকতায় এবছরের প্রতিপ্রাদ্যটি নির্বাচন করা হয়েছে। গত বছরের প্রতিপ্রাদ্যটি ছিল “প্রকৃতির মাঝেই আমাদের সমাধান (our solutions are in nature)”। টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রাসমূহ (Sustainable Development Goals) অর্জনের অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ জীববৈচিত্রের মধ্যে রয়েছে – এ বিষয়ে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে এই প্রতিপ্রাদ্যটি নির্বাচন করা হয়েছে।
জীববৈচিত্র্যের আন্তর্জাতিক দিবসটি জাতিসংঘের ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (Sustainable Development Goals) এর আওতায় পড়ে। জীববৈচিত্র্যের বিষয়টি টেকসই কৃষি, মরুভূমি, ভূমির অবক্ষয় এবং খরা; জল এবং স্যানিটেশন; স্বাস্থ্য এবং টেকসই উন্নয়ন; শক্তি; বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন, জ্ঞান ভাগাভাগি এবং ক্ষমতা-বৃদ্ধি; শহুরে স্থিতিস্থাপকতা এবং অভিযোজন; টেকসই পরিবহন; জলবায়ু পরিবর্তন এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস; মহাসাগর এবং সমুদ্র; বন; আদিবাসী জনগণসহ খাদ্য সুরক্ষায় অংশীদারত্বে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বৃহত্তর উদ্যোগ তৈরী করেছে।
রিও+২০ (United Nations Conference on Sustainable Development) সম্মেলনে টেকসই উন্নয়নের নথি “দ্য ওয়ার্ল্ড উই উইন্ড: আ ফিউচার ফর অল (The World We Want – A Future For All” এ জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বকে স্বীকৃত দেওয়া হয়েছিল ।
জীব বৈচিত্র্যের সংরক্ষণ এবং পুর্ণবাসন এর মাধ্যমে আমরা জলবায়ু পরিবর্তন (Climate change), স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা, খাদ্য ও পানির সুরক্ষা এবং টেকসই জীবিকা নির্বাহের প্রাকৃতিক ভিত্তিক সমাধান করতে পারি এবং জীবনযাত্রা আরও উন্নত করতে পারি।
টেকসই উন্নয়নের মূল আন্তর্জাতিক উপকরণ কনভেনশন অন জৈবিক বৈচিত্র্য (Convention on Biological Diversity)এর মূল বার্তাও এটি। চলতি বছরের করোনভাইরাস মহামারীজনিত কারণে এ বছর দিবসটির উদযাপন এবং সচেতনতামূলক প্রচারগুলি কার্যত অনলাইনে সম্পন্ন হবে।
দিবসটি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি ও বৃদ্ধি করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অন্যান্য মাধ্যমের সর্বাধিক ব্যবহার করার জন্য জনগণকে অনুরোধ করা হচ্ছে।
বেশ কয়েকটি সেমিনার, অনলাইন প্রতিযোগিতা এবং আকর্ষণীয় কর্মসূচীর মাধ্যমে জীববৈচিত্র রক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন এবং সরকারী পর্যায়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় স্তরেই আয়োজন করা হচ্ছে।
জীব বৈচিত্র্য বলতে সাধারণত বিভিন্ন ধরণের উদ্ভিদ, প্রাণী এবং অণুজীবগুলোকে বুঝায়। তবে এটি প্রতিটি প্রজাতির মধ্যে জিনগত পার্থক্যও অন্তর্ভুক্ত করে, যেমন, বিভিন্ন জাতের ফসল এবং পশুর জাত এবং বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্নতা (হ্রদ, বন, মরুভূমি, কৃষি প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলি) যা উহাদের সদস্য(মানব, উদ্ভিদ, প্রাণী)এর মধ্যে একাধিক ধরণের মিথস্ক্রিয়া (interactions) সম্পন্ন করে।
জীববৈচিত্র্য সংস্থানগুলি সেই স্তম্ভগুলি যার উপরে আমরা সভ্যতা তৈরি করি। মাছ বিশ্বের প্রায় ৩ বিলিয়ন মানুষকে ২০ শতাংশ প্রাণীজ প্রোটিন সরবরাহ করে। মানুষের ৮০ শতাংশেরও বেশি খাদ্য গাছপালা হতে সরবরাহ হয়। উন্নয়নশীল দেশগুলির গ্রামাঞ্চলে বসবাসরত ৮০ শতাংশ মানুষই প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য ঐতিহ্যগতভাবে উদ্ভিদ-ভিত্তিক ওষুধের উপর নির্ভরশীল।
জীববৈচিত্র্য হ্রাস আমাদের স্বাস্থ্যসহ সকল মৌলিক চাহিদার উপর হুমকিস্বরূপ। এটি প্রমাণিত হয়েছে যে জীববৈচিত্র্য ক্ষয়টি জুনোজেসক (Zoonosis ) বিস্তৃত করতে পারে – যা প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে রোগ সংক্রামিত করতে পারে- অন্যদিকে, যদি আমরা জীববৈচিত্র্য অক্ষুণ্ন রাখি, তবে এটি করোণা ভাইরাসজনিত রোগের মতো মহামারীগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মানবজাতীকে দুর্দান্ত উপাদান সরবরাহ করতে পারবে।
আশংকা করা হচ্ছে যে,
- জীববৈচিত্র্য এবং বাস্তুতন্ত্রের বর্তমান নেতিবাচক প্রবণতা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার নির্ধারিত ১৭টির মধ্যে ৮টি লক্ষ্যমাত্রার ৮০% এর অগ্রগতি হ্রাস করবে।
- মানুষের ক্রিয়াকলাপ দ্বারা ভূমি-ভিত্তিক পরিবেশের তিন-চতুর্থাংশ এবং সামুদ্রিক পরিবেশের প্রায় ৬৬% উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন হয়েছে।
- বর্তমানে বিশ্বে ১ মিলিয়ন প্রাণী এবং উদ্ভিদ প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে।
জৈব বৈচিত্র্যের আন্তর্জাতিক দিবস ২০২১: জাতিসংঘের মহাসচিবের বার্তা
”আমরা প্রকৃতির উপর দখল এবং জীববৈচিত্রের গুরুত্বপূর্ণ বাসস্থানগুলি ধ্বংস করার মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক প্রজাতিসমূহকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছি। এর মধ্যে মানবতা এবং আমাদের ভবিষ্যত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে- যা আমরা চাই” -জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
জাতিসংঘের মহাসচিবের বার্তার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিন্মে দেওয়া হল:·
- একটি স্বাস্থ্যকর গ্রহ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- আমরা যেভাবে দ্রুত প্রা্কৃতিক সম্পদগুলো শোষণ করছি, প্রকৃতি সেগুলি সেভাবে পূরণ করতে পারছে না।।
- কোভিড-১৯ মহামারীটি মানুষ এবং প্রকৃতির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়টি আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
- বর্তমান সংকট প্রকৃতিকে আরও ভালভাবে পুনরুদ্ধারের একটি সুযোগ তৈরী করেছে।
- আমাদেরকে প্রকৃতি রক্ষা করা, বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা এবং গ্রহের সাথে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে একটি ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা দরকার।
- টেকসই জীবন যাপনের পছন্দগুলি প্রকৃতি পুনরুদ্ধারের মূলমন্ত্র।
জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য আমরা যা করতে পারি –
- একক ব্যবহারের প্লাস্টিক দ্রব্য যেমন প্লাস্টিকের ব্যাগ, স্ট্র, চা-কফির কাপ, পানির বোতল ইত্যাদি এড়িয়ে চলা।
- কীটনাশক এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহার হ্রাস বা নির্মূল করা।
- মাংস খাওয়া কমিয়ে দেয়া।
- মৌসুমী ফল-মূল খাওয়ার অভ্যাস করা এবং ক্রয় করা।
- স্থানীয় খাবার ক্রয় করা।
- জৈব (Organic foods) ক্রয় করা।
- খাবারের অপচয়গুলি রোধ করা, ইত্যাদি।
আসুন “জীববৈচিত্র্যের এই আন্তর্জাতিক দিবসে, আসুন আমরা সকলেই প্রকৃতির সমস্যা সমাধানের অংশ হয়ে উঠি।”
সূত্র:
- ইউ এন ওয়েবসাইট
- উইকিপিডিয়া
- ইউ এন এনভাইরোনমেন্ট প্রগ্রাম ওয়েবসাইট
- ইন্ডিয়া ট্যুডে