বন্যপ্রাণী পাচার: জার্মানির বিমানবন্দরে সেলাই করা কাপড়ের পুতুলের পেট থেকে ধরা পড়ল বিরল প্রজাতির সরীসৃপ
২৬টি বিরল প্রজাতির সরীসৃপ প্রানী জার্মানির বিমানবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তারা অত্যান্ত দক্ষতা দিয়ে উদ্ধার করেছে। মেক্সিকো থেকে বাচ্চাদের খেলনার পুতুল ও দামী মিষ্টি খাবারের প্যাকেটের মধ্যে লুকিয়ে এগুলো জার্মানির ভিতরে পাচার করা হচ্ছিল। এর মধ্যে ১০টি সরীসৃপ পুতুলের পেটে দম বন্ধ হয়ে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
মৃত প্রাণীগুলো পুতুলের পেটে অক্সিজেনের অভাবে দমবন্ধ হয়ে মরে গেছে। তাদের প্রত্যেককে কাপড়ের পুতুলের পেটের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ঢুকিয়ে সেলাই করে দেয়া হয়েছিল। এ তথ্য জানানো হয়েছে কোলোন বন বিমানবন্দরের শুল্ক বিভাগ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে।
বিপন্ন প্রজাতির প্রানী গুলোর ভিতর শিংওয়ালা টিকটিকি, অ্যালিগেটর এবং এক বিশেষ প্রজাতির কচ্ছপ জার্মাানিতে চোরাই পথে চালান দেয়া হচ্ছিল একজন বেনামী বেসরকারি খদ্দেরের জন্য।
পৃথীবির সব বিপন্ন প্রজাতির গাছপালা এবং পশুপাখি সংরক্ষণের চেষ্টায় কাজ করছে সাইটস নামে আন্তর্জাতিক একটি প্রতিষ্ঠান। তারা ঝুঁকিতে থাকা বা বিলুপ্তির পথে থাকা বেশ কিছু প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর একটি তালিকা করেছিলো ১৯৭৩ সালে সেই তালিকায় মেক্সিকো থেকে পাচার করা এই প্রাণীগুলো নাম রয়েছে।
জার্মান কর্মকর্তারা এখন ডিএনএ নমুনা ব্যবহার করে এই সরীসৃপগুলো উৎপত্তি কোথায় এবং কিভাবে তা সংগ্রহ করে এনেছে তার খোঁজ করার চেষ্টা করছে। তাদের সরাসরি জঙ্গল থেকে ধরে চালান দেয়া হয়েছে নাকি কোথাও এই প্রজাতির প্রাণীগুলো আটকে রেখে খাঁচায় বা অন্য কোন উপায়ে প্রজনন কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের জন্ম দেয়া হয়েছে কর্মকর্তারা সেটা অনুসন্ধানের লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন।
পর পর দুটি পার্সেলে করে এই চালান ২টি পাঠানো হয়েছে, যার একটি ৩০শে অক্টোবর ২০২০ এবং অন্যটি ৮ই নভেম্বর ২০২০ বিমানবন্দরে জব্দ করা হয়।
জার্মানির শুল্ক বিভাগ, মেক্সিকোর এ সংক্রান্ত কর্তৃপক্ষ এবং জার্মানির বন শহরের আলেকজান্ডারে কোয়েনিগ গবেষণা যাদুঘরের জীববিজ্ঞানীদের সাথে একযোগে এই অনুসন্ধান ও বিশ্লেষনের কাজ করছে। পুলিশ চোরাচালানকারীদের ধরতে পারলে তাদের জরিমানা করা হবে ও এ বিষয়ে আরো তথ্য বের করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে।
যে ১৬টি প্রজাতির সরীসৃপ প্রানী বেঁচে রয়েছে তাদের মেক্সিকান অরণ্যের নিজস্ব বাসস্থানে ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষে চেষ্টা চলছে।
বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীগুলো চুরি করে তার থেকে অবৈধ কোন পণ্য যারা উৎপাদন করে, বনের এই যাদুঘরের জীববিজ্ঞানীরা মূলত সেগুলো নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করছেন। এসব দুর্মূল্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে সাপের চামড়ার ব্যাগ বা পশুর লোমের তৈরি পোশাক ও অন্যান্য বিশেষ সামগ্রী।
আন্তর্জাতিক সংস্থা সাইটসের (কনভেনশন অন ইন্টারন্যাশানাল ট্রেড ইন এনডেনজার্ড স্পিসিস) ১৯৭৩ সালের সনদে সই করেছিল ১শত ৮২টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যে সনদ ছিল প্রায় ছয় হাজার প্রজাতির প্রাণী এবং ত্রিশ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণের অঙ্গীকারনামা।