বিভিন্ন প্রকল্পের নাম দিয়ে প্রতিনিয়ত ধ্বংস করা হচ্ছে নদী ও পরিবেশ
বিভিন্ন প্রকল্পের নামে প্রতিনিয়ত দেশের নদী ও পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। যা কোনোভাবেই পরিবেশের জন্য কাম্য নয়। এ ধরনের প্রকল্পের মধ্যে সততা নেই বললেই চলে। দেশে নদী রক্ষার আইন আছে কিন্তু তার যথাযথ বাস্তবায়ন নেই।
কোভিড সময়ে নদী দখল আরো বেড়ে গেছে। সরকার অনেকটা আপোস করে চলছে বলেই নদীগুলো উদ্ধার করতে পারছে না বলে মন্তব্য করেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। তারা সবাইকে নদী ও পরিবেশ নিয়ে জোরদার আন্দোলনের আহ্বান জানান।
বিশ্ব ধরিত্রী দিবস-২০২১ উপলক্ষ্যে ‘বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থাপনা : কোন পথে সরকার?’ বিষয়ক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলে থাকেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ আলোচনাসভার আয়োজন করেন।
বাপার সভাপতি মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, দেশের সম্পদ বিভিন্ন প্রকল্পের নামে ব্যবহার করা হচ্ছে জনগণের মতামতের কোনো রকম চিন্তা ভাবনা না করেই। সরকার দেশের নদী ও পরিবেশকে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে ধ্বংস করেই চলছে। যা কোনোভাবেই আমাদের কাম্য নয়।
মূল বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার লকহ্যাভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জামান বলেন, দেশের নদ ও নদীর সংখ্যার কোনো সঠিক হিসাব সরকারের কাছে নেই। দেশে এতোগুলো পোল্ডার তৈরী করেও তাতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।
দেশে বিভিন্ন ধরনের বাঁধ দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণের পুরোনো ধারণা নীতিনির্ধারকদের মাথা থেকে এখনো যায়নি। হাইকোর্ট নদীকে জীবন্ত সত্তা বলে ঘোষণা করেছে, তাহলে কীভাবে জীবন্ত সত্তার হাত-পা কেটে পঙ্গু করা হচ্ছে? এতে কি হাইকোর্টের রায় প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে না?
তিনি তিস্তা প্রকল্পকে বিজ্ঞানভিত্তিক নয় বলে মন্তব্য করেন। তিনি বিলিয়ন ডলারের চায়না তিস্তা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা জরিপের বিস্তারিত জনসম্মুখে প্রকাশের জন্য দাবি জানান।
বাপার সভাপতি এবং বেন-এর প্রতিষ্ঠাতা ড. নজরুল ইসলাম বলেন, দেশে সব প্রকল্পই হচ্ছে অপরিকল্পিত। দেশের সব ধরনের প্রকল্পে স্বচ্ছতা, জনগণের অংশগ্রহণ ও প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দ বিষয়ে জনগণকে জানানোর দাবি জানিয়েছেন।
বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক এম ফিরোজ আহমেদ বলেন, বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা ছাড়া কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা ঠিক হবে না। জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, বর্তমানে নদী ব্যবস্থাপনার কোনো আইনই কাজে আসছে না।
আইনের বিপরীতে যেয়ে কোনো উন্নয়নই করা যাবে না। তিনি এ বিষয়ে গৃহীত মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের সাথে আলোচনার উদ্যোগ নিতে পরামর্শ দেন।
জাতীয় নদীরক্ষা কমিটির সদস্য শারমীন মুরশিদ বলেন, সরকারি সংস্থাগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করতে গিয়ে অনেক বেশি দুর্নীতিপরায়ণ হচ্ছে। রাষ্ট্র নিজেই দেশের নদীগুলোকে ধ্বংস করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। সরকার নদীরক্ষার আইন করেছে কিন্তু তার যথাযথ বাস্তবায়ন করছে না। কোভিড সময়ে নদী দখল আরো বেড়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিস্তা রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বলেন, তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কোনো সমীক্ষা হয়েছে কি-না, আমরা স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে গিয়ে তার কোনো প্রমাণ পাইনি। তিস্তা বাঁধ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের অনেক টাকা অপচয় হয়েছে। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাইফুল পাইকার, জিয়াউর রহমান, বাপার নির্বাহী সদস্য এম এস সিদ্দিকী, রফিকুল আলম প্রমুখ।