পরিবেশবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্রিন পিসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, যা দেশের জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রায় ৫ শতাংশ। গতকাল বুধবার গ্রিন পিসের প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
এছাড়া প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে বায়ুদূষণজনিত রোগে বাংলাদেশে ৯৬ হাজার শিশুর অকালমৃত্যু হয়েছে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দূষণের কারণে একদিনে বিশ্বের মোট আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার। আর বাংলাদেশে বছরে ক্ষতি ১ লাখ ১৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা (১ মার্কিন ডলারে ৮৪ টাকা হিসাবে)।
২০১৮ সালে বিশ্বে ৪০ লাখ শিশু তাদের পঞ্চম জন্মদিনের আগেই মারা গেছে। বছরে ৪০ লাখ মানুষ অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসছে চিকিৎসা নিতে।
এদিকে দেখা যাচ্ছে যে বায়ুমান দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এয়ার ভিজ্যুয়ালের তথ্যানুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, ময়মনসিংহ ও রংপুর শহরের বায়ুর মান ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর। আর চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুমিল্লা খুলনা ওবরিশালের বাতাস অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় ছিল।
গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় ঢাকার বাতাস ছিল দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে ষষ্ঠ।
প্রতিবেদনটিতে বিশ্বের বায়ুদূষণের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জীবাশ্ম জ্বালানিকে। মূলত বিদ্যুৎ ও অন্যান্য শক্তি উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে কয়লা ও তেল ব্যবহৃত হচ্ছে।
এসব জ্বালানি যানবাহন, শিল্পকারখানাসহ অন্যান্য কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব জ্বালানি থেকে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম–২.৫ ও পিএম–১০ বের হচ্ছে। একই সঙ্গে ভারী বস্তুকণাও বাতাসে গিয়ে মিশছে।
জানা যায়, গ্রিন পিসের এই প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে ঢাকার স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মজুমদার যুক্ত ছিলেন।
তিনি জানান, প্রতিবেদনটিতে বায়ুদূষণের আর্থিক ক্ষতি বলতে চিকিৎসা খরচ, কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকার কারণে কোনো প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া, কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ কে এম রফিক আহমেদ এ প্রসঙ্গে জানান, ‘বায়ুদূষণের উৎসগুলো আমরা একে একে বন্ধ করছি। একসঙ্গে সব ইটভাটা ও যানবাহন বন্ধ করতে গেলে তা দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে ধীরে ধীরে বায়ুর মান আরও ভালো হচ্ছে।’