বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম একটি অগ্রাধিকার হলো “পরিবেশ”
প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গওহর রিজভী বলেছেন, পরিবেশ বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম একটি অগ্রাধিকার। নদীগুলোর বেশিরভাগ দূষিত হচ্ছে শিল্পকারখানার মাধ্যমে।
শিল্পকারখানাগুলো আবার অর্থনীতি আর উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই শিল্পকারখানাগুলোকে ইটিপি মেনে কাজ করতে হবে, নয়তো তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
ইউএসএইড ও এফডিসিও’র সহায়তায় কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনাল ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়ামের দূষণবিরোধী প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, পরিবেশ উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেপুটি চিফ অব মিশন জো অ্যান ওয়্যাগনার।
গওহর রিজভী বলেন, যেকোনো উদ্যোগের জন্য সরকার, ব্যক্তিখাত ও এনজিওদের একত্রে কাজ করতে হয় আর পরিবর্তনের লক্ষ্যে যেকোনো অ্যাডভোকেসি কাজের জন্য এভিডেন্স বেজড ডাটা গুরুত্বপূর্ণ।
এই প্রকল্পটি বিজ্ঞানভিত্তিক এভিডেন্সবেজড ডাটা নিয়ে কাজ করবে। আশা করি এই প্রকল্পটি পরিবেশ দূষণ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দূষণবিরোধী শক্তিশালী প্রচেষ্টা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ইউএসএআইডি, এফসিডিও এবং কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের সহায়তায় দূষণবিরোধী অ্যাডভোকেসি প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিপিআই এর অন্তর্ভুক্ত সংগঠন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ এবং স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) কে সাথে নিয়ে একটি কনসোর্টিয়াম গঠন করেছে।
এই দূষণবিরোধী অ্যাডভোকেসি প্রকল্পটি ঢাকা শহরের বায়ু ও শব্দ দূষণসহ বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌযান কর্তৃক দূষণ এবং ডাইং কারখানা কর্তৃক দূষণ মোকাবিলায় ঢাকা শহরের শব্দ এবং বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে কমিউনিটির মানুষ, সরকারি সংস্থা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে একত্রে পরীবিক্ষণ এবং কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
হাবিবুন নাহার বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানেই আমাদের পরিবেশ সমুন্নত রাখার বিষয়টি যুক্ত করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সে বিষয় নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সুলতানা কামাল বলেন, ঢাকার দূষণবিরোধী অ্যাডভোকেসি এই প্রকল্প বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে এভিডেন্সভিত্তিক অ্যাডভোকেসি করবে।
পানি, বায়ু ও শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে এই কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে সর্বোপরি বাংলাদেশের পরিবেশ দূষণ কমিয়ে আনার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধিতে সকল অংশীজনকে হাতে হাত রেখে কাজ করার আহ্বান জানান।
আতিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার। ঢাকা শহরের পানি, বায়ু আর শব্দ দূষণের জন্য যে দুর্নীতিগুলো হয়, সিটি করপোরেশন তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
পানি দূষণ বন্ধে প্রত্যেককে এগিয়ে আসতে হবে। দূষণের সূত্রপাত যেখানে সেখানেই রোধ করতে হবে। বায়ু দূষণ রোধে গাছ লাগাতে হবে। গড়ে তুলতে হবে পরিবেশবান্ধব সুন্দর ঢাকা নগরী।
জো অ্যান ওয়্যাগনার বলেন, বর্তমান সময়ে বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুটি হচ্ছে সবচেয়ে বিপজ্জনক একটি ইস্যু। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই ইস্যুতে কাজ করতে পেরে বেশ খুশি।
এই দুই বছর মেয়াদী প্রকল্পে সহায়তার দ্বারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে ঢাকা শহরের পানি, বায়ু এবং শব্দ দূষণ কমিয়ে আনতে নাগরিক সমাজ, বেসরকারি খাত, মিডিয়া এবং অন্যান্য অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে সরকারকে পরামর্শ দেবে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াটাকিপার্স অ্যালায়েন্সের নির্বাহী পরিচালক মার্ক ইয়াগগি বলেন, সারা পৃথিবীতেই এখন বিশুদ্ধ পানির সংকট চলছে। পৃথিবীর মানুষ আজ খাবার পানির জন্য সংগ্রাম করছে। বাংলাদেশেও ওয়াটারকিপার্স অ্যালায়েন্স কাজ করছে। ঢাকা শহরের পানি দূষণ এবং বায়ু ও শব্দ দূষণ রোধে এই অ্যাডভোকেসি প্রকল্পটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।
অনুষ্ঠানে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকি বলেন, আমরা পরিবেশ রক্ষার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছি। বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণ বিষয়ে আপনারা সকলেই অবগত আছেন।
এই প্রকল্পটি বিজ্ঞানভিত্তিক এভিডেন্স নিয়ে সরকারের এবং বিভিন্ন অংশীজনের সাথে অ্যাডভোকেসি করবে যাতে ঢাকার পানি, বায়ু এবং শব্দ দূষণ কমিয়ে নিয়ে আসা যায়। আমরা স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এই ধরনের কর্মসূচির সাথে ঐকমত্য প্রকাশ করে এই প্রকল্পের সাথে যুক্ত থাকার প্রত্যাশা ব্যক্ত করি।
কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি মইনুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা বিশ্বের দ্বিতীয় বসবাসের অনুপযোগী নগরীতে স্থান করে নিয়েছে।
শহরটি সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে এবং ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর এবং জলাবদ্ধতার সঙ্কট নিরসনের জন্য ভীষণভাবে সংগ্রাম করছে। এছাড়াও ঢাকা শহরের বায়ু এবং শব্দ দূষণের মাত্রা এত বেশি যে, শহরটি বসবাসের জন্য অনুপযোগী হয়ে উঠেছে যা লিভাবিলিটি ইনডেক্সের শেষে ঢাকা নগরীতে স্থান দিয়েছে।