দেশে একবার ব্যবহারযোগ্য যে পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হয় তার ৬৩ শতাংশ আসে খাদ্যপণ্য মোড়ক থেকে। তাই এখনই প্লাস্টিকের বিকল্প ভাবার সময় এসেছে। টিস্যু ব্যাগ, জুসের প্যাকেট থেকে শুরু করে কান পরিষ্কারের কটনবাড সবই প্লাস্টিকপণ্য। গবেষকরা বলছেন, এসব যে প্লাস্টিকপণ্য সে বিষয়ে সাধারণ মানুষের একাংশের ধারণাই নেই।
গবেষণা বলছে, মাছের পেটে ডিমের মতো করে মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকে যা আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করছি। ধানমন্ডি লেক ও বুড়িগঙ্গার মাছেও এর অস্তিত্ব মিলেছে।
এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশনের (ইএসডিও) গবেষণায় বলা হয়েছে দেশে বছরে ৫৩ হাজার ৯৭৮ টন ওয়ান টাইম ইউজ প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এরমধ্যে কেবল ঢাকায় হয় ১২ হাজার ২৬৯ টন। একবার ব্যবহারের পর বর্জ্যে রূপ নেয়া এই প্লাস্টিকের মধ্যে রয়েছে স্যাশে (শ্যাম্পু, পেস্ট, সসজাতীয় পণ্যের মিনিপ্যাক), স্ট্র, কটন বাড, বোতলের ক্যাপ, খাদ্যপণ্য মোড়ক।
গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোনও কোনও ক্ষেত্রে শহরের তুলনায় গ্রামে প্লাস্টিক বর্জ্য বেশি পাওয়া যায়। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, খাদ্য ও প্রসাধনপণ্যের নানা ধরনের মিনিপ্যাক এসব অঞ্চলে বেশি ব্যবহার হয়।
প্লাস্টিক ও এর ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে গবেষণা করছেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, প্লাস্টিক এখন খাদ্যচক্রে ঢুকে পড়েছে। এগুলো মাইক্রোপ্লাস্টিক হয়ে ভাঙে এবং পানি পুকুর নালায় মাটিতে মিশে যায়। সেখান থেকে মাছের পেটে যাচ্ছে। এগুলো মাছের পেটে ডিমের মতো থাকে। এগুলো না জেনে খেয়ে ফেলায় ক্যানসারের উপাদান পাকস্থলীতে যাচ্ছে, যার ফলে মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে।
তিনি বলেন, বিপদ হলো, যে প্লাস্টিকটা একবার ব্যবহার করে আমি বর্জ্য হিসেবে ফেললাম, সেটিই আবার খাবার টেবিলে ভিন্ন রূপে আমার অজান্তেই হাজির হচ্ছে। আমাদের গবেষণায় ধানমন্ডি লেক, বুড়িগঙ্গার মাছে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।
প্লাস্টিক খুব বেশি ক্ষতি করবে না শুরুর দিকে এমন ধারণা থাকায় ক্ষতি বেশি হয়েছে উল্লেখ করে এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন (ইএসডিও)এর মহাসচিব ড. হোসেন শাহরিয়ার বলেন, যখন পরিবেশের ক্ষতির দিকটি গবেষণায় বেরিয়ে আসতে শুরু করলো, তখন ২০১৪ সালে বিষয়টি জাতিসংঘে উপস্থাপন করা হয়।প্লাস্টিকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে এর মধ্য দিয়েই কাজ শুরু হয়।
আইন করে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ভারত ২০২২ সালের মধ্যে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। আমরা যদি এ সময়কালে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ না করি, তাহলে আরও ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে। কারণ, পাশের দেশের সেসব পণ্য আমাদের এখানে প্রবেশের শঙ্কা আছে।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. লেলিন চৌধুরী এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকজাত পণ্যগুলো ক্যানসার তৈরি করার প্রথম ১০ উপাদানের একটি। প্লাস্টিকের বক্সে খাবার অনেকক্ষণ রাখা হলে তা খাদ্যকে দূষিত করে ফেলে। ক্যান্সারের বিস্তৃতির অন্যতম প্রভাবক এই প্লাস্টিক। এছাড়া মাটির স্বাস্থ্যকে, পানির মধ্য গিয়ে পানিকে যেভাবে প্রভাবিত করছে, তাতে মনে করা হচ্ছে প্লাটিক ও প্লাস্টিকজাত পণ্য পরিবেশের একটি ধরনকে এতো বদলে দিচ্ছে যে, সভ্যতা ধ্বংসের মুখোমুখি হতে পারে।