টানা তিনবার বন্যায় আগের সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও ধার-দেনা করে জমিতে রোপা আমন বুনেছিলেন কৃষকেরা। কিন্তু আবারও বন্যার হানায় সেই ফসলও ডুবে গেছে
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের ঘাঘট ও আখিরা নদীর পানি গত কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে রোপা আমন ধান ও সবজিক্ষেত। ফসলের মাঠে পানি ছাড়া আর এখন কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
গত রবিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরের পর থেকে ঘাঘট নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে নদী তীরবর্তী এলাকার ঘরবাড়িগুলো। অপরদিকে উপজেলার কোথাও গ্রাম অঞ্চলের কাঁচা সড়কগুলো পানিতে ডুবে ও কোথাও কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে যান ও জনগণের চলাচল ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর উপজেলায় ১৫ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। তারমধ্যে গত কয়েকদিনের বর্ষায় ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এছাড়া উপজেলার ৬৫০ হেক্টর শাকসবজির মধ্যে এই বর্ষায় ৫৫০ হেক্টর শাকসবজি নষ্ট হয়ে গেছে।
উপজেলার ইদিলপুর গ্রামের কৃষক আজাদুর রহমান মন্ডল বলেন, সাধারণত আমাদের এলাকায় বন্যা হয় না। কিন্ত অবিরাম বৃষ্টির কারণে এবার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শাকসবজি ক্ষেতের। আমন ধানের ক্ষেতও পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এখন ফসলের মাঠে পানি ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের ছান্দিয়াপুর বসনিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক সামীয়ুর রহমান বলেন, টানা তিনবার বন্যায় আগের সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও ধার-দেনা করে জমিতে রোপা আমন বুনেছিলেন কৃষকেরা। কিন্তু আবারও বন্যার হানায় সেই ফসলও ডুবে গেছে।
একই গ্রামের তোতা মিয়া বলেন, “বন্যার ক্ষয়ক্ষতি এখনও কোনও কৃষক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। চতুর্থবারের মতো আমন ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন জমি নষ্ট হয়ে গেলে আর চাষাবাদ করার সময় বা সামর্থ্য কোনও কিছুই আমাদের নাই।”
উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের হবিবুল্লাপুর গ্রামের কৃষক রাঙ্গা প্রামানিক বলেন, “আজ (রবিবার) সকাল থেকে আমাদের এলাকার ক্ষেতে পানি প্রবেশ করছে। দুপুরের মধ্যেই পুরো জমি পানিতে ডুবে গেছে। এখন জমিতে পানি আর পানি, এছাড়া আর কিছুই দেখা যায় না।”
উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নের তিলকপাড়া গ্রামের আমিনুল ইসলাম জানান, অতিবৃষ্টিতে তার ইউনিয়নের ৬ গ্রামের ৯ ব্যক্তির মাটির ঘর ধসে গেছে। এরমধ্যে বোয়ালিদহ গ্রামের এক ব্যক্তির দু’টি মাটির ঘর ধসে দু’টি গরু মারা গেছে।
উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা মো. খাজানুর রহমান বলেন, “দুই একদিনের মধ্যে এই পানি নেমে গেলে আমন ধানের তেমন কোনও ক্ষতি হবে না। তবে পানিতে দেরিতে নামলে ক্ষয়ক্ষতি বাড়বে।”