29 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
রাত ৩:১৬ | ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
পশ্চিমা দেশের প্লাস্টিক বর্জ্য বিষাক্ত করছে ইন্দোনেশিয়ার 'খাদ্যচক্র'
পরিবেশ দূষণ

পশ্চিমা দেশের প্লাস্টিক বর্জ্য বিষাক্ত করছে ইন্দোনেশিয়ার ‘খাদ্যচক্র’

সম্প্রতি বিবিসি’র অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ইন্দোনেশিয়ায় প্লাস্টিক বর্জ্য পুড়িয়ে ফেলার কারনে পরিবেশের খাদ্য চক্র বিষাক্ত হচ্ছে।বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ইন্দোনেশিয়ায় প্লাস্টিক দূষণ সমস্যার একটি অন্যতম অংশ পশ্চিমা দেশগুলো থেকে রপ্তানি করা বর্জ্য।এই বর্জ্যের সিংহভাগই পশ্চিমা দেশগুলো থেকে ইন্দোনেশিয়ায় পাঠানো হয়েছে।

বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, সবচেয়ে ভয়াবহ দূষণ হতে দেখা গেছে ত্রোপোদো গ্রামে কয়েকটি টোফু (একধরণের দুগ্ধজাত খাদ্য) ফ্যাক্টরির পণ্যে। সেসব ফ্যাক্টরি জ্বালানির জন্য প্লাস্টিক পুড়িয়ে থাকে।

ত্রোপেদো শহরের একজন বাসিন্দা বলেন তারা ডাক্তারের কাছে গেলে রোগের বিবরণ না দিয়ে শহরের পরিচয় দিলেই ডাক্তার রোগের ধরণ বুঝতে পারেন।”ত্রোপোদোকে ‘ধোঁয়ার শহর’ বলা হয়। আমরা ডাক্তারের কাছে গিয়ে শহরের নাম বললেই তারা বুঝতে পারেন যে কিসের চিকিৎসা করতে হবে।”

ইন্দোনেশিয়ান ইন্সটিটিউট অব সাইন্সেস’এর ড, আগাস হারইয়োনো এ বিষয়ে বলেন যে,, আন্ত:দেশীয় প্লাস্টিক বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ রাখতে সরকারের এমন অবকাঠামো প্রস্তুত করা প্রয়োজন যার মাধ্যমে ক্রমাগত জৈব দূষণকারী উপাদানের পরিমাণ পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে।

এছাড়াও বিবিসি’র তথ্যমতে জানা যায় ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব জাভায় একটি কাগজের কারখানার প্রায় ৪০ ভাগ কাগজই আমদানিকৃত হলেও নিম্নমানের প্লাস্টিক দ্বারা দূষিত।

বাঙ্গুন গ্রামের একজন ‘প্লাস্টিক চাষী’ সুপিয়াতি প্লাস্টিক কারখানায় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি বিবিসিকে বরাত দেন যে, তিনি বিভিন্ন ধরণের প্লাস্টিক বর্জ্যের মধ্য থেকে অপেক্ষাকৃত ভাল মানের প্লাস্টিক আলাদা করে কারখানায় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

গত বছর ইন্দোনেশিয়ায় প্লাস্টিক বর্জ্য আমদানির হার ১৪১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লক্ষ ৮৩ হাজার টনে। ইন্দোনেশিয়ার পরিসংখ্যান অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে মূলত আমদানি করা হয় এই প্লাস্টিক।

বাসেল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, অনেক বর্জ্যের কন্টেইনার – যেগুলো পশ্চিমা দেশে ফেরত পাঠানোর কথা ছিল – পশ্চিমে ফেরত না গিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশে জায়গা পাচ্ছে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার ডবসন বলেন যেসব পশ্চিমা দেশ প্লাস্টিক বর্জ্য রপ্তানি করে তাদেরকেও দায়বদ্ধ করতে হবে।বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ইন্দোনেশিয়ায় প্লাস্টিক দূষণ সমস্যার একটি অন্যতম অংশ পশ্চিমা দেশগুলো থেকে রপ্তানি করা বর্জ্য।বর্জ্য সংগ্রহের জন্য অবকাঠামো এবং অর্থায়নের অভাবকে বিশেষ কারণ মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

২০১৭ সালের শুরুতে চীন তাদের দেশে বর্জ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে, যার ফলে অন্যান্য দেশে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য সরবরাহ করা শুরু হয়।

তবে প্লাস্টিক ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনার পর উন্মুক্ত স্থানে প্লাস্টিক পোড়ানো অনেকাংশে কমেছে।পাশাপাশি, সরকারি নীতিও যে এর পেছনে কিছুটা ভূমিকা রাখছে, তেমনটিও মনে হচ্ছে।

এদিকে, পরিবেশবাদী সংস্থা আইপিইএন পূর্ব জাভার একটি গ্রামে মুরগির ডিমে বিষাক্ত ডাইঅক্সিন পেয়েছে। ইউরোপিয়ান নিরাপত্তা মাত্রা অনুযায়ী ডিমে যে পরিমাণ ডাইঅক্সিন থাকা গ্রহণযোগ্য তার চেয়ে ৭০ গুণ বেশি ডাইঅক্সিন রয়েছে ডিমে।দীর্ঘসময় ধরে এই রাসায়নিকের সংস্পর্শে থাকলে ক্যান্সারের সম্ভাবনা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া এবং শরীরে স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।

আইপিইএন’এর (ইন্টারন্যাশনাল পলিউশন এলিমিনেশন নেটওয়ার্ক) গবেষকরা পূর্ব জাভার সুরাবায়া অঞ্চল থেকে মুরগির ডিম সংগ্রহ করেন।গবেষকরা জানান, ডাইঅক্সিনের মত জৈব দূষণকারী রাসায়নিক খাদ্য চক্রে প্রবেশ করেছে কিনা তা যাচাই করার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি ডিম পরীক্ষা করা।

ইউরোপিয়ান ফুড সেফটি অথরিটি’র (ইএফএসএ) নির্ধারিত দৈনিক মাত্রা অনুযায়ী যে পরিমাণ ক্লোরিনেটেড ডাইঅক্সিন মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়, তার ৭০ গুণের বেশি রাসায়নিক মানবদেহে প্রবেশ করে ঐ অঞ্চলের একটি ডিম খেলেই।ডিমগুলোতে বিষাক্ত রাসায়নিকও (এসসিসিপি এবং পিবিডিই) পাওয়া গেছে, যা প্লাস্টিকে ব্যবহার করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কয়েকটি বিষাক্ত ডিম খাওয়ার ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি না হলেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির মাত্রা হতে পারে মারাত্মক।

ইন্দোনেশিয়ার একজন শীর্ষ পরিবেশবিদ ইয়ুইয়ুন ইসমাওয়াতি, যিনি ডিম পরীক্ষা করা গবেষকদের দলে ছিলেন; তিনি জানান, “ইন্দোনেশিয়ায় এরকম পরিস্থিতি এর আগে তৈরি হয়নি।আমাদের গবেষণায় পাওয়া ফলাফল খুবই আশঙ্কাজনক। এ ধরণের ফল এর আগে কখনো পাইনি আমরা।” সূত্র: বিবিসি।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত