পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে হর্ন না বাজানোর শপথ নিলেন গাড়ি চালকরা
শব্দ দূষণ রোধে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের চালকরা গাড়ির হর্ন না বাজানোর শপথ নিয়েছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত এবং অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্পের আওতায় পরিবহন চালক ও শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তারা এ শপথ নেন।
কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান বলেন, সরকারি চালকদের এ ধরনের প্রশিক্ষণ অন্যদের চালকদের উৎসাহিত করতে সহায়তা করবে। তিনি মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের চালকদের প্রশিক্ষণ আয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে অন্যন্য মন্ত্রণালয়/দপ্তরের চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরামর্শ দেন।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রথম বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত এবং অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্পের পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর।
তিনি বলেন, আজ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের চালকদের জন্য এই প্রশিক্ষণ। পরবর্তীতে সকল মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য পরিবহন চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
তিনি চালকদের সরকারি দপ্তর/মন্ত্রণালয়ের অধীনে চাকরি করে বিধায় তাদের ট্রাফিক আইন, সরকারি বিধি বিধান যথাযথভাবে প্রতিপালনে একান্ত আহ্বান জানান। যাতে তাদেরকে দেখে অন্যরা শিখতে পারেন এবং অন্যান্য চালকদের শব্দ দূষণ বিষয়ে সচেতন ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে উৎসাহিত করতে পারে।
কর্মশালায় প্রবন্ধ উপস্থাপনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক খন্দকার মাহমুদ পাশা বলেন, শব্দ দূষণের ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ২০২০-২০২২ মেয়াদে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশী দারিত্বমূলক প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করছে। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়ানো একান্ত জরুরি।
ইতোমধ্যে, পরিবেশ অধিদপ্তর সচিবালয় ও আগারগাঁও এলাকাকে নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর বাস্তবায়ন চালকের ওপর নির্ভরশীল। ব্যক্তিগত গাড়ি শব্দ দূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী। ব্যক্তিগত গাড়ি অন্যান্য গাড়ির চেয়ে ১৯ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি শব্দ দূষণ করে থাকে। রাইড শেয়ারিং সার্ভিসের সাথে যারা যুক্ত আছে তাদের মধ্যেও শব্দ দূষণের ক্ষতিকর বিষয়গুলো তুলে ধরা প্রয়োজন।
অপর এক প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের প্রধান প্রফেসর শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমি বলেন, পৃথিবীতে জ্ঞান-বিজ্ঞান যত এগিয়ে যাচ্ছে, আমাদের জীবন ততোই সহজ হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে আমাদের পরিবেশও বেশি দূষিত হচ্ছে।
শব্দ দূষণ শারীরিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থ্যের ওপরে প্রভাব ফেলে। শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাসের পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ, ক্লান্তি, হৃদরোগ, অনিদ্রা, অবসাদ, মানসিক চাপ ইত্যাদি রোগেরও অন্যতম প্রধান কারণ শব্দ দূষণ। শব্দ দূষণে শিশুদের স্বাস্থ্যে এবং গভবর্তী মায়েদের স্বাস্থ্যে ও তাদের আগত সন্তানদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
বিআরটিএ এর পরিচালক লোকমান হোসেন মোল্লা বলেন, বিআরটিএ শব্দ দূষণ বিষয়ে সচেষ্ট। আমাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমগুলোতে এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে আমরা একসঙ্গে এবিষয়ে কাজ করে যাবো।
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক তেজগাঁও) এস এম শামীম বলেন, শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে আমাদের আইনের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রয়োজন। পুলিশের কাছে স্প্রিড গান থাকা সত্ত্বেও চালকরা ক্রমাগতভাবে ট্রাফিক রুল, স্প্রিড রুল না মানার বিষয়টি তুলে ধরেন।
তিনি আরো বলেন, মেশিন দিয়ে ৫ মিনিটে ১৭টি মামলা করা হয়েছে। আমাদের চালকদের মধ্যে আইন না মানার প্রবণতা অনেক বেশি।
তিনি জানান, হাইড্রোলিক হর্নের জন্য গত বছর ১১৫টা মামলা দায় করা হয়েছে। মামলা দিয়ে শব্দ দূষণ রোধ করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন সবার একসাথে সহযোগিতা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা) মুহা. সোলায়মান হায়দার বলেন, চালকদের শব্দ দূষণের বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে রাস্তায় পথচারীদের প্রাধান্য দেওয়া। অযথা যেখানে সেখানে হর্ন বাজিয়ে পথচারীকে বিব্রত না করা।
রাস্তায় চলাচলের সময় আইনগুলো ভালো করে লক্ষ্য রাখা। বিশেষ করে যেসব এলাকা নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সেখানে হর্ন বাজানো থেকে নিজেদের বিরত রাখতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন উৎস থেকে শব্দ দূষণ সৃষ্টি হলেও গাড়ির হর্ণ হচ্ছে অন্যতম কারণ।
রাইড শেয়ারিংয়ের কারণে গাড়ির সংখ্যা দিন দিন ক্রমশ বাড়ছে। কাজেই আমরা চালকরা যদি সচেতন না হই, তাহলে শব্দ দূষণের মতো নীরব ঘাতককে মোকাবিলা করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। আমাদের হাইওয়ের পাশে বিভিন্ন রকম স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে। এ বিষয়গুলোও নগর পরিকল্পনাবিদদের লক্ষ্য রাখা উচিত।
আগামীতে পরিবেশ অধিদপ্তর নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত আগারগাঁও এলাকায় ডিএমপির সহযোগিতায় নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে। এক্ষেত্রে আপনাদের সবার সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
প্রশিক্ষণে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের গাড়ি চালকরা।