33 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
বিকাল ৪:৫৫ | ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
পরিবেশ ধ্বংসের প্রধান কারণ হচ্ছে ‘কঠিন বর্জ্য’
পরিবেশ দূষণ

পরিবেশ ধ্বংসের প্রধান কারণ হচ্ছে ‘কঠিন বর্জ্য’

পরিবেশ ধ্বংসের প্রধান কারণ হচ্ছে ‘কঠিন বর্জ্য’

মানব সভ্যতা উন্নয়নের সাথে মানবজাতির যত উপকার সাধন হয়েছে, বিভিন্ন ধরনের সমস্যাও তত প্রকট হয়ে উঠেছে। আজকের পৃথিবীতে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে যথাযথ ভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রকৃতিকে জীবের বসবাসযোগ্য করে রাখা। বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে বর্জ্যের পরিমাণও মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বাড়ছে।



উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশেও সেই একই চিত্র। প্রতিনিয়ত জনসংখ্যার উচ্চ ঘনত্বের সাথে বর্জ্যের উৎপাদন হচ্ছে অধিক হারে। যার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় বর্জ্য নিয়ন্ত্রকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি বছর মাথাপিছু ১৫০ কিলোগ্রাম এবং সর্বমোট ২২.৪ মিলিয়ন টন বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে।

এভাবে চলতে থাকলে ২০২৫ সাল নাগাদ মাথাপিছু বর্জ্য সৃষ্টির হার হবে ২২০ কিলোগ্রাম এবং সর্বমোট বর্জ্যের পরিমাণ ৪৭ হাজার ৬৪ টনে গিয়ে দাঁড়াবে, যা পরিবেশের জন্য বিশাল হুমকি হয়ে উঠবে। বর্জ্য বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। কঠিন, তরল, বায়বীয়।

কঠিন বর্জ্যরে পরিমাণই আমাদের দেশে বেশি। মানুষের ব্যবহার্য জিনিসপত্র যখন অকেজো অথবা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে তখন এগুলো কঠিন বর্জ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। উৎস অনুসারে কঠিন বর্জ্য বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।

গৃহস্থালি বর্জ্য, শিল্প কারখানার বর্জ্য, শহরাঞ্চলের বর্জ্য, হাসপাতালে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি, বিপজ্জনক বর্জ্য, কৃষি বর্জ্য ও প্লাস্টিক উল্লেখযোগ্য। যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে প্রতিনিয়ত পরিবেশের উপাদান ও বসবাসরত জীবের ক্ষতি হচ্ছে। পরিবেশের প্রধান তিনটি উপাদান হচ্ছে মাটি, পানি ও বায়ু।

কঠিন বর্জ্যরে কারণে পরিবেশের এ সবগুলো উপাদান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানুষ যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখে যার বেশির ভাগই কঠিন বর্জ্য। এগুলো মাটির সাথে মিশে মাটিতে বসবাসরত অণুজীবকে ক্ষতিগ্রস্ত করে মাটির অম্লত্ব ক্ষারকত্ব হ্রাস বৃদ্ধি করে এবং কৃষিজমির ক্ষতিসাধন করে ও এর বন্ধন দুর্বল করে দেয়।

আর এই বর্জ্যপদার্থ ভিতরে গিয়ে ভূগর্ভস্থ পানির ক্ষতিসাধন করে। এ ছাড়া বৃষ্টির সময় এসব বর্জ্য খাল-বিল-নদী-নালার পানির সাথে মিশে গিয়ে পানি দূষণ করে। এতে মানুষ, জলজপ্রাণী রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে বাতাস দূষিত করে।

এ ছাড়া মিথেন কার্বন-ডাই-অক্সাইড ইত্যাদিসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাস বায়ুতে মিশে বায়ু দূষণ করে। কঠিন বর্জ্যের সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে শহরাঞ্চলের বর্জ্য। শহরের বর্জ্যগুলো বাসাবাড়ি, হাসপাতাল, কলকারখানা ইত্যাদি থেকে উৎপন্ন হয়। রান্নাঘরের বর্জ্য থেকে শুরু করে পরিধেয়, প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ, প্লাস্টিক, কাগজ, ব্যাটারিসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর বর্জ্যও উৎপন্ন হয়।

দেশের অধিকাংশ পৌর এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সেকেলে। রাস্তার পাশে ডাস্টবিনগুলো ময়লা আবর্জনায় উপচানো থাকে। তীব্র দুর্গন্ধ ছড়ায়। পরিবেশ নোংরা হয়ে থাকে।

পৌর কর্তৃপক্ষ সেখান থেকে ময়লা সরিয়ে শহরের আশপাশের খাল বা খানাখন্দে ফেলে রাখে। সেখান থেকে নতুন করে আরো বিশদ আকারে জীবাণু ও দুর্গন্ধ ছড়ায়। শহরের কল-কারখানাগুলো থেকে প্রতিনিয়ত বিষাক্ত বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয়বহুল বলে অনেক প্রতিষ্ঠান এগুলো মুক্তভাবে শহরের খাল-বিল নদী-নালায় ফেলে দেয়।

এগুলোর মধ্যে কাপড়ের রঙ, চামড়া শিল্পে উৎপন্নবর্জ্য, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, কলকব্জা এসব উল্লেখযোগ্য। সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে উৎপন্ন চামড়ার উচ্ছিষ্ট, ঝিল্লিসহ কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো পদক্ষেপ এখনো সম্পূর্ণরূপে গৃহীত হয়নি। এ ছাড়া কোরবানির পশুর রক্ত, মল, খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ যত্রতত্র ফেলে রাখলে পানি বায়ু দূষিত হবে।



বর্তমান সময়ে শহরগুলোতে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ অধিকহারে চলছে। এ কাজের প্রয়োজনীয় উপাদান ইট, বালু, সিমেন্ট ইত্যাদি রাস্তাঘাটে রেখে রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়। এসব থেকে উৎপন্ন বর্জ্যগুলোর ব্যবস্থাপনার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। দেখা যায়, কাজ শেষে ময়লার ভাগাড়ে এসব ইট, বালু, নুড়ির স্তূপ পড়ে থাকে।

এগুলো শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা নষ্ট করে। ফলে শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বর্ষা মৌসুমে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। শহরবাসী সম্মুখীন হয় কৃত্রিম বন্যার। এতে করে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ কর্মজীবন ব্যাহত হয়। হাসপাতালগুলোতেও কঠিন বর্জ্য উৎপন্ন হয়।

ব্যবহৃত ওষুধের প্যাকেট, সুচ, সিরিঞ্জ, ছুরি-কাঁচি ইত্যাদি বর্জ্য বিপজ্জনক এবং কিছু ক্ষেত্রে সংক্রামক রোগের বাহকও বটে। তাই এসব বর্জ্য ঢাকনাসহ বাক্সে রেখে আলাদাভাবে ব্যবস্থাপনা করা উচিত। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে মেডিক্যাল বর্জ্যে নতুন কিছু উপাদান সংযোজিত হয়েছে যেমন মাস্ক, পিপিই, টেস্ট কিট ইত্যাদি।

এসব বর্জ্য ব্যবহারের পর যেখানে সেখানে ফেলা উচিত নয়। কারণ এগুলোর দ্বারা সুস্থ মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তা ছাড়া পিপিই প্লাস্টিক হওয়ায় সহজে নষ্ট হয় না। যথাসম্ভব এগুলো পুড়িয়ে ফেলতে হবে। কিন্তু মানুষ অসচেতনভাবে যেখানে সেখানে এসব বর্জ্য ফেলছে এবং কফ থুথু ফেলে পরিবেশকে দূষিত করে সংক্রমণ বাড়াচ্ছে।

গ্রামাঞ্চলে কৃষিবর্জ্যও কঠিন বর্জ্যরে অন্তর্ভুক্ত। কৃষি জমিতে ব্যবহৃত সার, কীটনাশক এগুলো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। অধিকহারে পেস্টিসাইড ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। ব্যবহৃত রাসায়নিকের ক্ষতিকর প্রভাব খাদ্য শৃঙ্খলে ঢুকে পড়ছে। কৃষিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন গৃহপালিত পশুর থেকেও কঠিন বর্জ্য সৃষ্টি হয়।

একটি গরু দৈনিক প্রায় ১২-১৫ কেজি, ছাগল ও ভেড়া ১.৫-২ কেজি, লেয়ার ১০০-১৫০ গ্রাম, ব্রয়লার ১০০-২০০ গ্রাম বর্জ্য উৎপন্ন করে থাকে। বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীব ও গ্রিনহাউজ গ্যাস উৎপাদনের উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হচ্ছে এই বর্জ্য। এ বর্জ্য থেকে উৎপন্ন দুর্গন্ধ মানুষ ও পশুপাখির বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে যেমনÑ অস্থি সমস্যা, ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি।

ক্ষতিকর গ্যাসগুলোর মাত্রাতিরিক্ত সেবন মানুষ ও পশুপাখির মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বিপুল পরিমাণ গোবর কৃষিজমিতে প্রয়োগ করার ফলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া ভূগর্ভস্থ পানিতে প্রবেশ করছে, যা পানি দূষণ ও জনগণের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।

পশুসম্পদ বর্জ্য থেকে উৎপাদিত মিথেন বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য ১৫ শতাংশ দায়ী। একটি গবাদিপশু বছরে প্রায় ৭০-১২০ কেজি মিথেন নির্গমন করে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে মিথেন, কার্বন-ডাই অক্সাইড থেকে ২৩ গুণ বেশি দায়ী।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত