পরিবেশপন্থী সমাজটা আসলে কেমন দেখতে হবে ?
আজকের মনুষ্য সমাজ, রাষ্ট্র ব্যবস্থা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে পরিবেশের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে ফেলেছে – যেন এমনটা যে প্রগতি আর প্রকৃতি একে অপরের বিপরীত মূখী অবস্থিত | তারই অনিবার্য ফল হিসাবে পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, বন-জঙ্গল নিঃশেষ করে গড়ে উঠেছে নগরায়ন আর কল-কারখানা, যন্ত্র-পাতি এবং সকল আধুনিক সভ্যতার উপকরণ সমূহ | প্রতিদিন লোক সংখ্যা বাড়ছে , বাড়ছে সুখ সুবিধা ও স্বাচ্ছন্দ্য – ফলে প্রাকৃতিক সম্পদগুলিকে একে একে কমে যাচ্ছে | এর কারন হল বর্তমানের সমাজব্যবস্থা ও রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সার্বিক পরিবেশ অসচেতনতা।
প্রাকৃতিক সম্পদ যথেচ্ছা অপব্যাবহারের ফলে পরিমানে কমে যাওয়ায় যে প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে তাতে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ক্রমেই জীব-যন্তু বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ছে – প্রভাব পরছে মানুষের উপর | ফলে কিছু মানুষ প্রকৃতিকে রক্ষা করার একটা অসম্পূর্ণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে |
নানা রকম বৃক্ষরোপন কর্মসূচি, গাছ পালা নদী নালা পাহাড় জঙ্গল বাঁচানোর আন্দোলন সংগঠিত হচ্ছে | এখন রাষ্ট্র ব্যবস্থাও জঙ্গল নদী নালা খাল বিল জলাশয় বাঁচানোর মত কিছু চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে | কিন্তু সব কিছুর মধ্যে অসম্পূর্ণতা ও বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে | যেহেতু পরিবেশ পন্থী দর্শনকে আধার করে সমাজ ব্যবস্থা ও রাষ্ট্রব্যবস্থা চালিত হয় না, তাই কোন কিছুতেই কিছু হচ্ছে না – পরিবেশ প্রতিদিন আরো বিপন্ন হয়ে পড়ছে |
পরিবেশ পন্থী সমাজ যা ভবিষ্যতে পরিবেশ পন্থী রাষ্ট্র ব্যবস্থা সৃষ্টি করবে – যা প্রযুক্তিকে , বিজ্ঞানকে পরিবেশের বিপরীতে দাঁড় করায় না | এখানে প্রগতি সুস্থ ভারসাম্যযুক্ত পরিবেশের অন্তরায় নয় |
প্রতিদিন প্রগতির সাথে সাথে মানুষের সংখ্যা উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পায়, বৃদ্ধি পায় তার সুখ স্বাচ্ছন্দ্য , ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতির ভারসাম্য রক্ষা করতে প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমান ও গুণাগুণেরও বৃদ্ধির পাওয়া আবশ্যক – কিন্তু বর্তমান সমাজব্যবস্থা ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় তার বিপরীতটিই পরিলক্ষিত হয় |
একটা উদাহরণ প্রদান কার হচ্ছে বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য | ধরুন নতুন একটি নগর গড়ে তুলতে হবে, বা নগরের লোক সংখ্যা ও তাদের চাহিদা বেড়ে গেছে – সেক্ষেত্রে বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থা নতুন নতুন সড়ক, মহাসড়ক, স্কুল কলেজ, নানারকম প্রতিষ্ঠানাদি গড়ে তোলে | প্রগতির সাথে এগুলি যেমন দরকার তেমনি প্রাকৃতিক সম্পদ – যেমন প্রচুর অক্সিজেন, পানির যথাযথ উৎসও বাড়ানো দরকার। মানে আরো বেশি গাছপালা, নদীনালা জলাশয় দরকার | কিন্তু বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থা নতুন বাসস্থান সড়ক, স্কুল-কলেজ, প্রতিষ্ঠানাদি তৈরি করায় গাছপাল-জঙ্গল, নদীনালা জলাশয় ধ্বংস করে ফেলছে |
পরিবেশপন্থী সমাজ এমনটি কি করবে? অবশ্যিই করবে না আশা করি তবে, তারা প্রগতির সাথে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে যেমন আরো আধুনিক বাসস্থান, সড়ক, প্রতিষ্ঠানাদি নির্মাণ করবে তেমনি গাছপালা নদী-নালা জলাশয় বৃদ্ধির জন্যও প্রযুক্তিকে ব্যবহার করবে | নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহার করবে যাতে জঙ্গলে গাছের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়, নদী নালা জলাশয়গুলির জল ধারণ ক্ষমতা যাতে আরো বৃদ্ধি পেতে পারে – কম জায়গায় আরো বেশি সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক হট স্পট গড়ে ওঠে | মানে উন্নয়নের মধ্যে প্রযুক্তির ব্যবহারে শুধু বাসস্থান , সড়ক , প্রতিষ্ঠানাদির বৃদ্ধি ও আধুনিকীরন পড়বে না তার সাথে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা, বৃদ্ধিও চিহ্নিত হবে |
অর্থাৎ পরিবেশপন্থী সমাজ ব্যবস্থা বিজ্ঞানকে প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করবে | পরিবেশপন্থী সমাজ চালিত পৃথিবীতে প্রযুক্তি প্রকৃতির বিপরীত আসনে বসবে না – প্রকৃতি ও প্রযুক্তির মেলবন্ধনে ভারসাম্যযুক্ত সুস্থ পৃথিবী গড়ে উঠবে – প্রগতির প্রকৃত স্বরূপ প্রতিষ্ঠিত হবে |