পদ্মার তীব্র স্রোত ও ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়েছ গেছে দৌলতদিয়ার তিনটি ফেরি ঘাট।রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার ১ ও ২ নম্বর ঘাট সড়কের সম্মুখভাগ বিলীন হয়ে বন্ধ রয়েছে কয়েকদিন আগে থেকেই। গতরাতে ৩ নম্বর ঘাটের পাশে প্রায় ১০ মিটার বিলীন হয়ে ভাঙনের কবলে পড়েছে ঘাটটি। জেলা প্রশাসনসহ কর্তৃপক্ষ ফেরি ঘাট রক্ষায় শঙ্কায় পড়েছে।
তীব্র স্রোতে শুক্রবারও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল মারাত্মক ব্যাহত হয়। লঞ্চ পারাপার সীমিত থাকায় পরিবহনেরসহ সাধারণ যাত্রীরা ফেরিতে নদী পাড়ি দিচ্ছে। ছয়টির মধ্যে কার্যত তিনটি ঘাট জোড়াতালি দিয়ে চালু রাখা হয়েছে। সীমিত সংখ্যক ফেরি দিয়ে গাড়ি ও যাত্রী পারাপার হচ্ছে। ঘাটে যাত্রীদের ভিড় এবং মহাসড়কে ঢাকাগামী গাড়ির লাইন প্রায় চার কিলোমিটার লম্বা হয়েছে।
ঘাটে যানজট এড়াতে কর্তৃপক্ষ গত বুধবার রাত থেকে সকল পন্যবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় পন্যবাহী গাড়ি আটকে দেওয়ায় সেখানেও গাড়ির লম্বা লাইন তৈরী হয়েছে।
জানা যায়, পদ্মার তীব্র স্রোত ও ভাঙনে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ৩ নম্বর ঘাটের এক পাশের কিছু অংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনা এড়াতে দুটির মধ্যে ভাঙনের পাশের পকেটটি বন্ধ করে দিয়েছে। অপর পকেট দিয়ে ঝুকি নিয়ে ফেরিতে গাড়ি ওঠানামা করছে। এর আগে গত এক সপ্তাহ ধরে ১ নম্বর ও পরদিন শনিবার ২ নম্বর ঘাটের সংযোগ সড়কের সম্মুখভাগ বিলীন হয়ে যায়।
ঘাট দুটি রক্ষায় রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে অর্ধ লাখ। তাও ওই ঘাট ২টি রক্ষা করা যায় নাই। বাকি ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ঘাটও ভাঙন ঝুকিতে রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আব্দুস সোবহান বলেন, ভাঙনে গত রাতে ৩ নম্বর ঘাটের এক পাশে প্রায় ১০০ মিটার বিলীন হয়েছে। বর্তমানে একটি পকেট দিয়ে ঝুকি নিয়ে কিছু গাড়ি ফেরিতে ওঠানামা করছে। ভাঙন অব্যাহত থাকলে এটিও বন্ধ হয়ে যাবে।
নতুন করে ৩ নম্বর ফেরিঘাট ভাঙনের কবলে পড়ার সংবাদ পেয়ে দেখতে আসেন জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম ও বিআইডব্লিউটিসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক আব্দুস সোবহানসহ উর্দ্বতন কর্মকর্তাগন দৌলতদিয়া পরিদর্শন করেছেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, ভয়াবহ ভাঙনে ফেরি ঘাট রক্ষা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই বিষয় নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিআইডব্লিউটিএর উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দ্রুত ঘাট স্থানান্তরের চেষ্টা করবো। ৬ নম্বর ঘাটের পাশে বাহির চর এলাকা ঘুরে দেখেছি। অন্তত দুটি ঘাট স্থানান্তরের জন্য চেষ্টা করা হবে। দ্রুত স্থানান্তর করা না হলে কোন ঘাটই আর রক্ষা করা যাবেনা বলে মনে হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, ২৪ ঘন্টায় প্রায় ৮ সেন্টিমিটার পানি কমলেও ভাঙন কমেনি। আমরা অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ছয়টি ফেরিঘাটের পশ্চিমে অবস্থিত ১ নম্বর ঘাটের সংযোগ রক্ষায় চেষ্টা চালাচ্ছি। এই সড়ক বিলীন হলে ভাটিতে থাকা সব ঘাট ভেঙে যাবে। ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ হাজার বালুভর্তি বস্তা ফেলা হয়েছে।
এদিকে দুপুরে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ ১৫৯টি পরিবারের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়। দৌলতদিয়া মডেল হাই স্কুল মাঠে আশ্রয় নেওয়া পরিবারসহ দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ, দেবগ্রাম ইউপির অস্থায়ী কার্যালয় এবং বেথুরী এলাকায় গিয়ে শুকনা খাবার বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম।