নদীর তীরবর্তী এলাকা ঘিরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন কলকারখানা, প্রতিষ্ঠান,বসতবাড়ি।ফলে এসব স্থান থেকে আসা রাসায়নিক তরল বর্জ্য,ময়লা আবর্জনা সহজেই নদীর পনির সোথে মিশ্রিত হচ্ছে দিনকে দিন।যার দরুন ক্রমশ দূষিত হচ্ছে নদীর পানি, ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন জলবায়ু নিয়ে বেশ সোচ্চার। আমাদের দেশীয় সংগঠনগুলোও পিছিয়ে নেই। তারা জলবায়ু পরিবর্তন রোধের পাশাপাশি ইটিপির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও জোরালো বক্তব্য রাখছে। সম্প্রতি বাংলাদেশর একটি পরিবেশবাদী সংগঠন ‘সবুজ আন্দোলন’ ইটিপির ওপর খুব জোর দিচ্ছে।
বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে তারা ইটিপির প্রয়োজনীতা তুলে ধরেছে। নদী দূষণ রোধে কিছু প্রস্তাবনাও রেখেছে সবুজ আন্দোলন। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সবুজ আন্দোলনের প্রস্তাবনাগুলোর ভূমিকা অপরিহার্য। প্রস্তাবনাগুলো হলো:
নদী দূষণ রোধে-
১)প্রত্যেক কারখানায় ইটিপি ফর্মুলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে।কঠিন বর্জ্য পদার্থ পানিতে মিশতে দেয়ার পথ বন্ধ করতে হবে।
২) মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদাভাবে ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করতে হবে।
৩) যে যতটুকু দূষণ করছে, তাকে সেই অনুযায়ী জরিমানার বিধান করতে হবে। এ ছাড়াও সরকারি দফতরের কেউ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪) নদী দূষণ রোধে জলাশয়ের উৎসমুখে বাঁধ দেয়াসহ জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
৫) সড়ক সম্প্রসারণের প্রয়োজনে ইচ্ছামতো বাঁধ দিয়ে খালের ওপর সড়ক নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। বন্ধ হওয়া খালগুলোকে সংস্কার করে স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে হবে।
৬) নদীর পানি ব্যবহারোপযোগী করার জন্য ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করতে হবে।
৭) রাজধানীর হারিয়ে যাওয়া খালগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে হবে।
৮) মৌসুমে যমুনা নদী থেকে নদী-খালে পানি আসে কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে জোয়ার-ভাটার কারণে পানির পরিমাণ হ্রাস পায়; সেক্ষেত্রে পানি আনার উৎস নিয়ে ভাবতে হবে।
৯) আইন সংশোধন করে কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে; নদী আদালত গঠন করতে হবে।
১০) নদী দূষণ ও নদী রক্ষায় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সম্পৃক্ত করতে হবে।
১১) নদীগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে, তাই ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে গভীরভাবে নদী খনন করতে হবে।
উপরোক্ত প্রস্তাবনাগুলো মেনে চলতে পারলে আমাদের হারিয়ে যাওয়া জলাশয় উদ্ধারের পাশাপাশি জলাশয় দূষণ কমে আসবে। এ ক্ষেত্রে শিল্প-কারখানার মালিকদের ইটিপি ব্যবহারে বাধ্য করতে হবে। ইটিপির ব্যবহার ছাড়াও নদী ভাঙনের বিষয়ে জোরদার ব্যবস্থা করতে হবে।খুব দ্রুত ভাঙন রোধে উন্নত প্রযুক্তির প্রকল্প হাতে নিতে হবে। পাশাপাশি নিরাপদ বেষ্টনী দিয়ে নদীর পাড়ে গাছ লাগিয়ে নদী ভাঙন রোধ করতে হবে।
তাছাড়া দেশের প্রায় সব জেলায় নদী, খাল-বিলের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে স্থায়ী, অস্থায়ী নানা স্থাপনা।জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন এই নিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে।তালিকায় দেশের নদ-নদী দখলদারদের প্রাথমিক তালিকায় এমন ৪২ হাজার ৪২৩ জনের নাম উঠে এসেছে।নদী রক্ষা কমিশন বলছে, এ তালিকা আরও যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে কোনো দখলদারের নাম বাদ পড়েছে কি না। অবৈধ দখল উচ্ছেদে এক বছরের ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ নেওয়া হবে।
সর্বোপরি নদীকে বাঁচাতে হলে নদী দূষণ রোধে প্রত্যেক কারখানায় ইটিপি ফর্মুলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। কঠিন বর্জ্য পদার্থ পানিতে মিশতে দেয়ার পথ বন্ধ করতে হবে এবং অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।