প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ভাওয়ালের বন একসময় জীববৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ ছিল।এ বনের অনন্য বৈশিষ্ট্য হল- এর মাটির বর্ণ লাল আর উঁচু ভূমি।এ বনে গজারি গাছ ছাড়াও কড়ই, বট, অশ্বত্থ, পলাশ, শিমুল, সোনালু, জিগা, গাদিলা, নাগেশ্বর, বহেরা, হরীতকী, জারুল, তিতিজাম, বনআমড়া, আনই, অরবড়ই, চিনাডলই, বঙ্কই, কুটিশলসহ হাজারও প্রজাতির ছিল।
ভাওয়ালের বন্যপ্রাণীর মধ্যে বাঘ, হরিণ, বন্য শূকর, মুখপোড়া হনুমান, বনরুই, বনমোরগ, সজারু, খরগোশ এবং পাখির মধ্যে ময়ূর, শকুনসহ অনেক পাখি যা এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে বানর, শেয়াল, বনবিড়াল, গুইসাপ, কাঠবিড়ালি, বেজি এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ছাড়া অন্য কিছু তেমন চোখে পড়ে না।
নির্বিচারে বন কাটার কারণে ভাওয়াল গড়ের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। উন্নয়ন ঘটানোর নামে বন ধ্বংসের সঙ্গে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলও নষ্ট হচ্ছে। জবরদখল করে বাড়ানো হচ্ছে কৃষি জমি। শত শত বাড়িঘর নির্মাণ করা হয়েছে বনের জমিতে। দিন দিন ছোট হয়ে আসছে ভাওয়াল বনের আয়তন।বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য আইন থাকলেও আগে আইনের তেমন প্রয়োগ ছিল না।মানবসৃষ্ট কারণেই ভাওয়ালের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়েছে বেশি।
তাছাড়াও বনের পরিবেশ দূষণ করছে কলকারখানার ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য ও বিষাক্ত পানি। বিষাক্ত পানি পান করে বনের অনেক জীবের মৃত্যুও ঘটছে।
প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা না পাওয়ায় বিলুপ্ত হয়েছে অনেক জীব। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানির বিভিন্ন উৎস নষ্ট হওয়ায় জীবজন্তু বন থেকে পালাচ্ছে। বনের আলু অনেক প্রাণীর খাদ্য। এ আলু তোলায় কোনো নিষেধ না থাকায় দলে দলে মানুষ আলু তুলে নিচ্ছে। এতে অন্য গাছের চারাও উঠে যাচ্ছে।
আগে ভাওয়াল বনে গজারি ছাড়া অন্য গাছ কাটায় তেমন বাধা ছিল না। গজারি ছাড়া অন্য গাছকে বলা হতো আকাঠা। এই আকাঠার নাম নিয়ে অন্য কাঠ, ঔষধি ও ফলজ গাছগুলো অবাধে কাটা হতো। বন বিভাগ দেখেও তেমন পদক্ষেপ গ্রহণ করত না।চৈত্র মাসে বনে আগুন লাগলে এতে লতা, গুল্ম, ঔষধি, বনজ ফল ও বুনো ফুলসহ হাজারও প্রজাতির গাছের চারা ধ্বংস হয়। অনেক প্রাণীর বাসস্থান নষ্ট হয়।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য ধরে রাখতে হলে ধ্বংস হওয়া বনকে উদ্ভিদ ও প্রাণীর বসবাসের উপযোগী করে তুলতে হবে।