আকাশ ছিলো ঝকঝকে, রোদ ছিলো ঝলমলে, নিশ্বাসে ছিলো শান্তি। গত আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের পরিবেশের স্বাস্থ্যকর ছিলো দিল্লির। কিন্তু মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানেই সেই স্বাস্থ্যকর পরিবেশ অবিশ্বাস্য ভাবে পাল্টে গেল।
ধোঁয়াশায় আকাশ ঢেকে গেছে। দূষণের মাত্রা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত দু’মাস আগের ছবি আর বর্তমান দিল্লির ছবি দেখলেই বোঝা যাচ্ছে কতটা পাল্টে গেছে দিল্লির পরিবেশ।
বর্তমানে দিল্লি চরম দূষণের মেধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে । ভারতের রাজধানীর প্রাণ এখন ওষ্ঠাগত । গতকয়েক দিন ধরেই বাতাসের গুণগত মানের সূচক (একিউআই) বিপজ্জনক থেকে অতি বিপজ্জনকের মধ্যে ঘোরাঘুরি করছে।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্ট অনুযায়ী, আনন্দ বিহারে একিউআই ছিল ৪৬৭, লোধি রোডে ৩৯২, অশোক বিহারে ৪৪৬, আর কে পুরমে ৩৯৯, জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে ৪১৩, দিল্লি ইউনিভার্সিটি নর্থ ক্যাম্পাসে ৪৪৬।
প্রতি বছর দিওয়ালির পরই দিল্লির পরিবেশ বদলে যেতে শুরু করে। এক দিকে, আতসবাজির ধোঁয়া, তার উপর পার্শ্ববর্তী দুই রাজ্য পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় শস্যের গোড়া পোড়ানো- দুইয়ের মিশেলে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পড়ে রাজধানী দিল্লি।
প্রতিবছর এ অবস্থা মোবাবেলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় সরকারীভাবে। কিন্তু তাতে সুফল হয় না ততোটা।
প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও একই পরিস্থিতির শিকার রাজধানী দিল্লি। এদিকে পরিসংখ্যান বলছে, এ বছর দূষণের মাত্রাটা অন্যান্য বারের তুলনায় অনেকটাই বেশি যা সবাই লক্ষ্য করছে। একিউআই ৯৯৯-তে পৌঁছেছে বেশ কয়েক জায়গায়।
সরকারকে জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা জারি করতে হয়েছে । স্কুল, কলেজ সাময়িক ভাবে করে দেয়া হয়েছে বন্ধ ।
দূষণ ঠেকাতে গাড়ির জোড়-বিজোড় নীতিও চালু করেছে সরকার। তার পরেও কি অবস্থা শুধরাবে, এখন এই উদ্বেগটাই কুরে কুরে খাচ্ছে রাজ্যবাসীকে।
বর্তমানে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশের অবস্থাও শোচনীয় হয়ে উঠেছে। এ তিন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বাতাসের গুণগত মানের সূচকও অতি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে।
ধোঁয়া এমন ভাবে গ্রাস করেছে নয়ডা, গাজিয়াবাদ, গুরগাঁও এবং ফরিদাবাদকে যে, বাধ্যতামূলকভাবে স্কুল, কলেজ সব বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে প্রশাসনকে।
ভারতের আবহাওয়া দফতর প্রথমে বলেছিল, বৃষ্টি হলেই এই বিষ-বাতাস থেকে কিছুটা মুক্তি মিলবে বলে আশা করা যায়। রবিবার দিল্লিতে হালকা বৃষ্টি হয়। কিন্তু তাতে পরিস্থিতির উন্নতি না হয়ে আরও অবনতি হয়েছে।
আগামী ৭ ও ৮ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় ‘মহা’র প্রভাবে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান ও দিল্লিতে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে দূষণের গ্রাস থেকে মুক্তি পেতে এখন এই ‘মহা’র উপরই ভরসা রাখছে উত্তরের রাজ্যগুলো।