দেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় টানা তিন দিন ধরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে। আজ সোমবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
এর আগে গতকাল রোববার সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই দিন সন্ধ্যা ৬টায় তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্র রেকর্ড করা হয়েছে ৩১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর আগে গত শনিবার সকালে তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই দিনে সন্ধ্যা ৬টায় তেঁতুলিয়া দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্র রেকর্ড করা হয়েছে ৩০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এক সপ্তাহ ধরে পঞ্চগড়ে দিনেরবেলা রোদের তীব্রতা থাকলেও রাতে শীত অনুভূত হচ্ছে। হিমালয়ের খুব কাছাকাছি জেলা হওয়ায় পঞ্চগড়ে সহজেই উত্তর–পশ্চিম দিক থেকে হিমালয়ের হিম বায়ু প্রবেশ করায় হেমন্তেই এমন শীত অনুভূত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা।
এদিকে দিনে রোদ আর রাতে শীতের কারণে কেউ কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন ঠান্ডাজনিত সর্দি-কাশিতে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা এ ধরনের সমস্যায় বেশি পড়ছেন বলে জেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে হেমন্তের মাঝামাঝি সময়ে নেমে আসা ঠান্ডা বাতাস বইছে সন্ধ্যা নমালেই। প্রতিদিন সন্ধার পর থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত হালকা কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে চারদিক। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের দেখা মিললেও রাতে গায়ে জড়াতে হচ্ছে গরম কাপড়। প্রকৃতির এমন আচরণে উত্তরের জনপদে চলছে শীতকে বরণের প্রস্তুতি। শীতের আগমনে জেলার শহর ও গ্রামে বাস করা মানুষ তুলে রাখা পুরোনো গরম কাপড় বের করতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে তৈরি করছে নতুন লেপ-তোশক। এরই অংশ হিসেবে বাড়ছে লেপ-তোশকের দোকানে ক্রেতাদের ভিড়। নতুন লেপ-তোশক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগরেরা।
লেপ-তোশকের দোকানের ক্রেতা-বিক্রেতা ও কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পঞ্চগড়ে প্রতিবছর কার্তিক মাসের প্রথম দিক থেকে শুরু করে পৌষের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চলে লেপ-তোশকের বেচাকেনা। বর্তমানে একেকটি লেপ আকৃতিভেদে ১ হাজার ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আকৃতিভেদে একেকটি তোশক বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে।
পঞ্চগড় বাজারের সৈয়দপুর ওয়েস্ট কটন সোপের স্বত্বাধিকারী মো. আব্দুল মজিদ বলেন, এবার শীতের পরিমাণ কিছুটা বেশি মনে হওয়ায় লেপ-তোশক তৈরির কাজের চাপ একটু বেশি। এই মৌসুম চলবে একেবারে পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত। প্রতিদিন অন্তত ১৫ থেকে ১৭টি লেপ-তোশক বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানান।
পঞ্চগড় পৌরসভার স্কুলশিক্ষক আজহারুল ইসলাম বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পঞ্চগড়ে রাতে বেশ শীত অনুভূত হচ্ছে। সারা দিন রোদ-গরম থাকলেও সন্ধ্যা হতে না হতেই শীতে প্রকোপ বাড়ছে। সন্ধ্যা হলেই গরম কাপড় ছাড়া বেরই হওয়া যাচ্ছে না। রাতে কুয়াশায় চারদিক ঢেকে যাচ্ছে। শীতের কারণে পুরোনো লেপ বের করতে হয়েছে। সেই সঙ্গে নতুন করে লেপ-তোশক তৈরি করতে দিয়েছেন বলে তিনি জানান।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. সিরাজউদ্দৌলা পলিন বলেন, কয়েক দিন ধরে পঞ্চগড়ে দিনে রোদ আর রাতে শীতের কারণে বিভিন্ন এলাকায় শিশু ও বৃদ্ধরা ঠান্ডাজনিত সর্দি-কাশি এবং জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। অনেকেই আবার হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে চলে যাচ্ছেন। তবে এমন সমস্য নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনো হয়নি। তিনি বলেন, হঠাৎ নেমে আসা এমন শীতে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে একটু বেশি সতর্ক হতে হবে। কোনোভাবে যেন ঠান্ডা না লাগে, সে জন্য সজাগ থাকতে হবে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ্ বলেন, তিন দিন ধরে তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তামপাত্রা বিরাজ করছে। তেঁতুলিয়া হিমালয়ের খুব কাছাকাছি হওয়ায় উত্তর–পশ্চিম দিক থেকে হিমেল বাতাস সরাসরি এখানে আসছে। এতে দিন দিন তাপমাত্রা কমছে। তবে গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত কুয়াশা থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের তীব্রতাও বাড়ছে। এতে দিন ও রাতের তাপমাত্রা কমবেশি হচ্ছে। এখন থেকে আগামী কয়েক দিন রাতের তাপমাত্রা ক্রমাগত কমতে পারে বলে তিনি জানান। সূত্র: প্রথম আলো