সম্প্রতি বিশ্বের দূষিত বায়ুর শীর্ষ ৫ শহরের তালিকাগুলোর মধ্যে ঢাকা ঘোরফেরা করছে। ধুলার কারণে এই দূষণের মাত্রা এখন আরো তীব্র। মাত্রাতিরিক্ত ইটভাটা, যানবাহন, নির্মাণকাজ ও কলকারখানার ধোঁয়ার কারণে ঢাকা শহরের প্রায় দেড় কোটি মানুষ এখন বিষাক্ত গ্যাসের মধ্যে বসবাস করছে।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার এক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা গত ১০ বছরে ৮৬ শতাংশ বেড়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ঢাকার বায়ুদূষণমাত্রা কত এবং বায়ুদূষণমাত্রা কমানোর জন্য জরুরিভিত্তিতে সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
গতকাল শনিবার শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ) ও পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চসহ সমমনা সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘নগরে বিষ ঢালছে বায়ুদূষণ, বায়ুদূষণ বন্ধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ কর’ এই দাবিতে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে সভাপ্রধানের বক্তব্যে পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেছেন, ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ—ইটভাটা, যানবাহন, নির্মাণকাজ ও কলকারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া। ঢাকার আশেপাশে ফসলের জমি দখল করে অবৈধভাবে শত শত ইটের ভাটা গড়ে উঠেছে। যার বেশির ভাগেরই বৈধ ড্রাম চিমনি নেই। সালফারের মান যাচাই না করেই এসব ইটের ভাটায় নিম্নমানের কয়লা ব্যবহার করছে। পাশাপাশি কাঠ, টায়ার, প্লাস্টিক ইত্যাদি ক্ষতিকারক জ্বালানি ব্যবহারের ফলে নির্গত হচ্ছে ধোঁয়া, ধূলিকণাসহ বিভিন্ন ধরনের ভারী ধাতবকণা। নির্গত হচ্ছে মানবস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক সালফার ও নাইট্রোজেনযুক্ত অক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড, ব্ল্যাক-কার্বনসহ অন্য ক্ষতিকর উপাদান যা মানুষের চোখ, ফুসফুস ও শ্বাসনালির মারাত্মক ক্ষতিসহ স্বল্পসময়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান বলেন, যানজট সৃষ্টির পাশাপাশি রাজধানীর বায়ু দূষণের অন্যতম ভূমিকা পালন করছে ঢাকার রাস্তায় চলাচলকারী অতিরিক্ত যানবাহন। ঢাকা শহরে প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিন লাখ যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করে। নগরীতে চলাচলকারী গণপরিবহনের প্রায় সবগুলো বাস-মিনিবাস, প্রাইভেট কার, সিএনজি অটোরিকশা, টেম্পোসহ অন্যান্য গাড়িগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে এবং ফিটনেসবিহীন এসব গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া বায়ুদূষণের জন্য দায়ী। এ ছাড়া গাড়িতে ব্যবহারকারী ভেজাল ও নিম্নমানের জ্বালানিও দায়ী বায়ুদূষণে। অন্যদিকে মোটরযান চলাচলের প্রধান সড়কগুলো আবাসিক এলাকাসংলগ্ন হওয়ার কারণে এসব এলাকার লোকজন উচ্চহারে বায়ুদূষণের শিকার হচ্ছে।
পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান মাসুদ বলেন, অপরিকল্পিতভাবে গ্যাস, বিদ্যুত্, পানি, ড্রেনেজ এবং রাস্তাঘাট উন্নয়ন, মেরামত ও সংস্কার কার্যক্রমের আওতায় রাস্তাঘাট খোঁড়াখুঁড়ির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি যানবাহন ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিষাক্ত কালো ধোঁয়া ও বায়ু দূষণের অন্যতম উৎস। এসব উৎস থেকে বিপুল পরিমাণ ধুলা, বিষাক্ত ক্ষতিকারক গ্যাস ও ভারীধাতব কণা বাতাসে মিশে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
মানববন্ধনে বিভিন্ন বক্তারা বলেন, নগরবাসীর স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে অচিরেই বায়ুদূষণের উৎসগুলো বন্ধ করতে হবে। বায়ুদূষণের সঙ্গে জড়িত দায়ী ব্যাক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সর্বোপরি বায়ু দূষণের সব উত্স বন্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী রাজধানীর বায়ুদূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নিয়মিতভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত করতে হবে।
মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন যারা তারা হলেন- নাসফের সম্পাদক মো. ওমর ফারুক, গোলাম হোসেন, সহ-সম্পাদক হাসিনা আরিফ, সদস্য ক্যামেলিয়া চৌধুরী, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সহ-সভাপতি মো. ফারুক হোসাইন, পবার সদস্য মো. সেলিম, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জায়েদ ইকবাল খান, সামাজিক আন্দোলন কর্মী রাজিয়া সামাদ, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি নাজিমউদ্দিন, ঢাকা যুব ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক শাকিল রহমান।