29 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
ভোর ৫:০৪ | ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
জলজ প্রাণী ও প্রাণহীন খোলস
আন্তর্জাতিক পরিবেশ

তীব্র দাবদাহে বিপন্ন অসংখ্য জলজ প্রাণী, সৈকতে পড়ে থাকছে প্রাণহীন খোলস

তীব্র দাবদাহে বিপন্ন অসংখ্য জলজ প্রাণী, সৈকতে পড়ে থাকছে প্রাণহীন খোলস

বিশ্ববাসীকে এক ভয়াবহ আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এরই মধ্যে সেটা সত্যি হতে শুরু করেছে। আর ভ্যাঙ্কুভারে সমুদ্রসৈকতে যাঁরাই যাচ্ছেন, আঁতকে উঠছেন। এই সৈকতে এখন বাতাসে পচা মাংসের গন্ধ আর পায়ের তলায় মৃত প্রাণীর শুকনা খোলসের খরখর শব্দ।

ক্রিস্টোফার বলছিলেন, ঝিনুক, তারা মাছ আর শামুকগুলো গরম পানিতে সেদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এক সপ্তাহ ধরে কানাডায় অব্যাহত ভয়াবহ তাপমাত্রায় প্রাণ হারাতে পারে শতকোটির বেশি জলজ প্রাণী।



ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রিস্টোফার দলবলসহ যখন ভ্যাঙ্কুভারে সমুদ্রসৈকতে যান, তখন তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ১২২ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি অনুভব করছিলেন। আর ঝিনুকের মতো অনেক জলজ প্রাণীর চূড়ান্ত সহনীয় তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। তাও মাএ সর্বোচ্চ কয়েক ঘণ্টার জন্য।

বাস্তুসংস্থানবিদ অ্যালিসা নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ভ্যাঙ্কুভারের সৈকতে সাঁতার কাটতে পানিতে নামার আগে সামুদ্রিক প্রাণীর খোলস সরিয়ে হাঁটার পথ খুঁজে নিতে হয় তাঁকে।

গত সপ্তাহে কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের প্যাসিফিক নর্থওয়েস্ট এলাকায় তাপমাত্রা ৪৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে।

তীব্র দাবদাহে মারা গেছেন কয়েক শ মানুষ। একই সময় শুরু হয় ভয়াবহ দাবানল। এতে অনেকে এলাকা পুড়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর প্রাণীর মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ পাচ্ছে ধীরে ধীরে।

আসছে সপ্তাহে আরো একটি ভয়াবহ দাবদাহ শুরুর সতর্কতা দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চল এবং কানাডার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে এই দাবদাহ বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সন্দেহ নেই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে এই জলজ প্রাণীরা। তাদের না আছে ছায়া খুঁজে নেওয়ার সুযোগ, না সম্ভব সমুদ্রের পানি থেকে দৌড়ে স্থলভাগে বসবাসের শক্তি।

শামুক ও ঝিনুক প্রজাতির জলজ প্রাণী পানি শোধক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যত বেশি জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে, পানি তত দ্রুত মান হারাচ্ছে। ঝিনুকের প্রতি স্কয়ার মিটার আবাসস্থলে কয়েক ডজন প্রজাতির অন্য ক্ষুদ্র প্রাণীর আশ্রয়স্থল। সেই খুদে প্রাণীরা মনিবকে হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে হয়তো মারা যায় আরও আগেই।

গত গ্রীষ্মে সামুদ্রিক শৈবাল অভিবাসনের ঘটনার খবরে বিস্মিত হয়েছিলেন অনেকেই। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের প্রবালের ৩৫ শতাংশ ক্ষয় হয়ে গেছে বা বিলুপ্তির পথে থাকার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে ২০১৬ সালে।

পানির তলায় থাকা অধিকাংশ সময় দেখতে না পাওয়া সালোকসংশ্লেষণকারী এ উদ্ভিদ শুধু মাছের খাবারই নয়, একই সঙ্গে পানির গুণগত মান রক্ষাকারীও। স্বাদু ও লোনাপানির বাস্তুতন্ত্রের এই পরিবর্তনের পেছনে দায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।

সামুদ্রিক প্রাণিবিদেরা আশঙ্কা করছেন, হিট ডোমের প্রভাবে কানাডার প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রাণ হারাতে পারে কয়েক’শ কোটি জলজ প্রাণী। এই হিট ডোম তৈরি হয় বায়ুমণ্ডলে সাগরের উষ্ণ বায়ু আটকে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের সমুদ্রসৈকতে একের পর এক ভেসে আসছে মৃত কাছিম, তিমি আর ডলফিন। কিছু মৃত কচ্ছপ ও ডলফিন কুকুরে খেয়ে ফেলছে। আর কিছু পচে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। সমুদ্রে শুধু আঘাতপ্রাপ্ত হয়েই ওরা মরে যাচ্ছে তা নয়। দূষণের মাত্রাই এর বড় কারণ বলে নিশ্চিত।

সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে কয়েক দফায় কয়লা ও তেলের জাহাজডুবির পর সেখানে বিপন্ন হয়েছে পরিবেশ ও প্রতিবেশ। এ বছরের মে মাসে সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারনী এলাকার বনে আগুন লাগে। কয়েক দিনের সে আগুনে পুড়েছে সংরক্ষিত বনের কয়েক একরের বেশি জায়গার সুন্দরী, গেওয়া, গরানগাছসহ লতাগুল্ম।

এর পেছনে বাওয়াল-মৌয়ালদের ফেলে দেওয়া বিড়ি, সিগারেটের আগুনকে যেমন দায়ী করা হয়, তেমনি ইচ্ছে করে আগুন লাগানোর ঘটনাকেও সম্ভাব্য কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

পাশাপাশি তদন্ত কর্মকর্তারা বলছিলেন, পাতা পচে মিথেন গ্যাস তৈরি হয়ে আগুন লাগতে পারে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ যাই হোক, যদি তা দাবানলে পরিণত হয়, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।



আর সে আগুন থেকে সেখানকার জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হওয়া খুব স্বাভাবিক ঘটনা। এরই মধ্যে এর যথেষ্ট উদাহরণও তৈরি হয়েছে। বন বিভাগের তথ্যমতে, গত প্রায় দুই দশকে ২৩ বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

২২ বারের অগ্নিকাণ্ডে ৭১ একর ৬৬ শতাংশ বনজ সম্পদ (সুন্দরী গাছসহ বিভিন্ন লতাগুল্ম) পুড়ে যায়, যার আর্থিক মূল্য ১৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩৩ টাকা বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। গাছপালার হিসাব তা–ও বের করা সম্ভব কিন্তু এ অগ্নিকাণ্ড বা তেল-কয়লার কার্গোর দুর্ঘটনায় যেসব প্রাণী বিপন্ন অবস্থায় পড়ে, তাতে যে প্রাকৃতিক ক্ষতি হয়, সে হিসাব বের করার মতো সক্ষমতা এখনো আমাদের নেই।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন তাপমাত্রা প্রতিদিনই অতীতের ইতিহাস ছাড়িয়ে যাচ্ছে, তখন সামান্য আগুনই যে আমাদের সুন্দরবনেও কখনো দাবানলে রূপ পাবে না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় না।

কানাডার ওই সমুদ্রসৈকতে ঝিনুকের খোলস সরিয়ে পথ করে নিতে হচ্ছে এখন। এ মাত্রা আরও প্রকট হবে কিছুদিনের মধ্যে। এমন পরিস্থিতি কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন বা কুয়াকাটায় তৈরি হলে সে দৃশ্য কেমন হবে!

গত গ্রীষ্মে সামুদ্রিক শৈবাল অভিবাসনের ঘটনার খবরে বিস্মিত হয়েছিলেন অনেকেই। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের প্রবালের ৩৫ শতাংশ ক্ষয় হয়ে গেছে বা বিলুপ্তির পথে থাকার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে ২০১৬ সালে।

সামুদ্রিক প্রাণিবিদেরা আশঙ্কা করছেন, হিট ডোমের প্রভাবে কানাডার প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রাণ হারাতে পারে কয়েক’শ কোটি জলজ প্রাণী। এই হিট ডোম তৈরি হয় বায়ুমণ্ডলে সাগরের উষ্ণ বায়ু আটকে।

সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বাড়ছে দ্রুত। প্রায় প্রতিবছরই বড় কোনো ঝড় হানছে আঘাত। ক্রিস্টোফার বা অ্যালিসার মতো সমুদ্র চেনা মানুষেরা দাবদাহ থেকে পালিয়ে বেঁচেছেন। প্রাণীদের পক্ষে তা সম্ভব নয়।

আমরা যদিও বা কেউ কেউ পালিয়ে বাঁচতে পারি, তা হবে সাময়িক আর অচিরেই হয়তো আমাদেরও চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার তালিকায় লিখতে হবে পরিচিত অনেক প্রাণীর নাম। পরিবেশ রক্ষায় যাদের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত