29 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
রাত ৩:২৪ | ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
জীববৈচিত্র্য

তিস্তা এখন পরিণত হয়েছে ধু-ধু বালুচরে, মারাত্মক হুমকির মুখে উত্তর জনপদের জীববৈচিত্র্য 

অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে তিস্তায় পানি থাকার কথা থাকলেও পলি ভরাট হয়ে নাব্য শূন্যতা সৃষ্টি হওয়ায় তিস্তা নদী ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। রবিবার দুপুরে তিস্তা অববাহিকা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, তিস্তার বুকজুড়ে শুধু বালু আর বালু। বন্যার ক্ষত মুছে না যেতেই তিস্তার এই পরিণতি দেখে হতাশ নদীপারের লাখো মানুষ।

এক মাস আগেই তিস্তা পানি আর পানিতে যেমন ভাসিয়েছে দু কূলের মানুষের জীবন, গ্রাস করেছে গ্রামের পর গ্রাম, ভেঙেছে কৃষকের কষ্টে বোনা ফসলের মাঠ, সেই সর্বনাশা তিস্তা এখন শুকিয়ে খাঁ খাঁ। মাস শেষ হতে না হতেই তিস্তা যেন শুকিয়ে কঙ্কাল রূপ ধারণ করেছে। নেই তার বুকে ছুটে চলা নৌকা, নেই জেলেদের আগের মতো আনাগোনা, নদী যেন মরেই গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তিস্তার নাব্য এতটাই হ্রাস পেয়েছে যে আসন্ন রবি মৌসুমে তিস্তা ব্যারাজের সেচ কার্যক্রম চালানোই কঠিন হয়ে পড়বে। প্রতিদিনই পানি কমছে। কোথাও সামান্য পানি আবার কোথাও দিগন্তজোড়া বালুচর। ব্যারাজ থেকে শুরু করে তিস্তার ১৬৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পানি না থাকায় শঙ্কায় পড়েছেন কৃষক। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। ভাঙছে কৃষকের কষ্টে গড়া ফসলের খেত। সঙ্গে ভাঙছে কষ্টে দিনাতিপাত করা দিনমজুরের তিল তিল করে গড়ে তোলা স্বপ্নের বসতবাড়ি। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা ব্যারাজের ভাটিতে ভারত তাদের গজলডোবা বাঁধের সাহায্যে একতরফাভাবে পানি আটকিয়ে বাংলাদেশের উত্তর জনপদের লাখ লাখ কৃষকের চাষাবাদ ব্যাহত করছে। ফলে দিনে দিনে প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে দেশের বৃহত্তম তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প। এতে করে এ অঞ্চলের কৃষকের চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার রেখা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করে তিস্তা নদী বাঁচানোর আকুতি জানিয়েছে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর এলাকার সেচনির্ভর মানুষজন।

নদী গবেষকদের মতে, বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি এবং শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনের তুলনায় কম পানি থাকায় উত্তর জনপদের জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। বর্ষায় পানি উপচে ভাঙনের মুখে পড়ে বসতবাড়ি, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, সড়ক, পুল, কালভার্ট। আর শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে খাঁ খাঁ করে বালুচর। এর ফলে চাষাবাদ কমে বদলে যাচ্ছে এলাকার মানুষের জীবিকা। চলতি বছরই তিস্তাপারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ধু-ধু বালুচর দেখা যায়। বালু চরে চিনাবাদাম, মিষ্টিকুমড়া ও তরমুজ চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকেরা।

জানা গেছে, লালমনিরহাটের দোয়ানীতে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা সেচ প্রকল্প চালু হয় ১৯৯৮ সালে। নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ১২টি উপজেলার ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দিতে নেওয়া হয় এ প্রকল্প। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ১৮ অক্টোবর সকালে ব্যারাজ পয়েন্টে পানি ছিল ২৮ হাজার কিউসেক। কিন্তু স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ প্রয়োজন ৪০ হাজার কিউসেক। পানিপ্রবাহ কম হওয়ায় সেচযোগ্য জমির আওতা এ বছর কমে যাবে। এলাকার ভুক্তভোগী লোকজন আশা করছেন, ভারতের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি হলে তাদের ভোগান্তি আর থাকবে না। সেটি কী ধরনের চুক্তি হবে তা জানা না থাকলেও তারা মনে করছেন, চুক্তি হলে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ একটা নিয়মের মধ্যে থাকবে। তিস্তা নদীতে পানি কম থাকায় জেলেরা বেকার হয়ে পড়েছেন। নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন লালমনিরহাট জেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের দোয়ানী গ্রামের কুদ্দুস মিয়া (৪৫)। তিনি বলেন, ‘বর্ষা শেষ না হতেই নদীতে পানিও নাই, মাছও নাই। পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছি।’ একই গ্রামের ঝন্টু মিয়া (৪০) বলেন, ‘সাত-আট বছর আগেও মাছ পাওয়া যেত। এখন তিস্তায় পানি না থাকায় প্রতি বছর মাছ কমে যাচ্ছে। তাই অনেক জেলে পূর্বপুরুষের এ পেশা ছেড়ে দিনমজুরের কাজে নেমেছেন।’ স্থানীয় কলেজের সহকারী অধ্যাপক শাহিনুর রহমান বলেন, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি না হওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে চৌচির হয়ে পড়ে নদী। জেগে ওঠে অসংখ্য চর। বর্ষায় হঠাৎ করে পানির ঢল নামায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়। এতে বাড়িঘর, গ্রামগঞ্জ, হাটবাজার, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পুল-কালভার্ট সব ভেঙে তছনছ হয়ে যায়। আর ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। সূত্র: বিডি-প্রতিদিন

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত