24 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
রাত ২:২৪ | ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
ঢাকার মাত্র ২ ভাগ পয়োবর্জ্য শোধন হয়, বাকি ৯৮ ভাগ পড়ছে নদীতে
পরিবেশ দূষণ

ঢাকার মাত্র ২ ভাগ পয়োবর্জ্য শোধন হয়, বাকি ৯৮ ভাগ পড়ছে নদীতে

দেখা যাচ্ছে রাজধানীর বেশির ভাগ পয়োনালা ভেঙে অকেজো হয়ে পড়ায় মাত্র ২ ভাগ বর্জ্য শোধন হচ্ছে। বাকি ৯৮ ভাগ কোনো না কোনো পথে নদীতে যাচ্ছে। অথচ ওয়াসার বলছে, পাগলায় অবস্থিত একমাত্র শোধনাগারে ঢাকার মোট জনসংখ্যার ২০ ভাগ পয়োবর্জ্য শোধন করছে।

এদিকে ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার ২০০ কোটি লিটার পয়োবর্জ্য উৎপন্ন হয়। বিভিন্ন স্থানের বর্জ্য কম আসছে বলে নারিন্দা কেন্দ্রীয় পাম্পস্টেশনের একটি পাম্প পাঁচ বছর ধরে বন্ধ। বিভিন্ন এলাকার পয়োবর্জ্য জমা করার লিফটিং স্টেশনও অচল। অন্যদিকে ছয় বছর আগে প্রণীত পয়োনিষ্কাশন মহাপরিকল্পনা অনুসারে পাঁচটি নতুন শোধনাগারের মধ্যে দাসেরকান্দিতে একটির কাজ চলছে, কিন্তু আগের হিসাবের ছয় গুণ বেশি খরচে।

২০১৪ সালে ঢাকা শহরের শোধনাগার ও সেপটিক ট্যাংকের ওপর বিশ্বব্যাংক একটি ‘ডায়াগ্রাম’ তৈরি করেছিল। তাতে বলা হয়, পাগলা শোধনাগারে বর্জ্য শোধন (আউটকাম) হচ্ছে ২ শতাংশ। এ তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও হাতিরঝিল প্রকল্পের মূল পরিকল্পনাকারী মো. মুজিবুর রহমান বলেন, বিশ্বব্যাংকের ডায়াগ্রাম অনুসারে মাত্র ২ শতাংশের পয়োবর্জ্য মোটামুটি নিরাপদে শোধন হয়। বাকি পয়োবর্জ্য কোনো না কোনোভাবে চলে যাচ্ছে নদীতে। তাঁর মতে, বিশ্বব্যাংকের তথ্য প্রকাশের পর ছয় বছরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ১৯৯২ সালের পর ২৭ বছরে পাগলা শোধনাগারের কোনো সংস্কার হয়নি। নেটওয়ার্কে কোনো যন্ত্রপাতি যুক্ত হয়নি। নতুন লাইন হয়নি।

তবে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বিষয়টি মানতে নারাজ।তিনি বলেন, পয়োনালা আগে যা ছিল তা–ই আছে। তবে এখন নতুন করে অনেক লাইন তৈরি হবে। ১৯৬২ সালে ঢাকা ওয়াসা প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর পর পাগলায় তৈরি পয়োশোধনাগার’ ৯২ সালে আধুনিকায়ন করা হয়। শোধনক্ষমতা প্রতিদিন ১ লাখ ২০ হাজার ঘনমিটার।সে সময়ই ঢাকার ২০ ভাগ এলাকায় ৯৩৪ কিলোমিটার পয়োনালা তৈরি হয়। এলাকাগুলো হচ্ছে হাজারীবাগ, লালবাগসহ পুরান ঢাকার বেশির ভাগ এলাকা, ধানমন্ডি, মগবাজার (আংশিক), লালমাটিয়া (আংশিক), বাসাবো, গেন্ডারিয়া ও গুলশান-বনানী (আংশিক)। আর কোথাও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা হয়নি।

বিভিন্ন সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাম্প–হয় লিফটিং স্টেশন বন্ধ না হয় পয়োনালা ভাঙা।বর্তমানে পয়োনালাগুলো অনেক ক্ষেত্রেই অকেজো, পাম্পস্টেশনে বর্জ্য কম যায়। সম্প্রতি (২২ অক্টোবর) এক সকালে নারিন্দা কেন্দ্রীয় পয়ো পাম্পস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দুটি পাম্পের মধ্যে একটি বন্ধ। পাম্পঘরটি স্টোর এবং কর্মচারীদের কাপড়চোপড় রাখার গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। উপস্থিত কর্মচারীরা বলেন, বর্জ্য কম আসে বলে বন্ধ রাখা হয়েছে। বেশি ক্ষমতাশালী হলেও পাঁচ বছর ধরে এটি একরকম বন্ধই রয়েছে। তাঁদের মন্তব্য, জনসংখ্যা বাড়লেও নালা ভেঙে যাওয়ায় বর্জ্য আসার হার কমে যাচ্ছে।

জানা যায়, গুলশান, বনানী, মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া প্রভৃতি এলাকার বাসাবাড়ির পয়োবর্জ্য প্রথমে যায় হাতিরঝিলের পার্শ্ববর্তী তেজগাঁও লিফটিং স্টেশনে। এখানে জমা হওয়ার পর নয়াটোলা নালা হয়ে বর্জ্য যায় নারিন্দা পাম্পস্টেশনে। কিন্তু এই লিফট স্টেশন এক বছরের বেশি সময় নষ্ট থাকায় এসব এলাকার পয়োবর্জ্য সঠিকভাবে যেতে পারছে না। কিছু পয়োনালা বৃষ্টির পানি যাওয়ার নালা (স্ট্রম স্যুয়ার) ও ম্যানহোলের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। কিছু বর্জ্য খাল হয়ে যাচ্ছে বুড়িগঙ্গা নদীতে, কিছু সরাসরি হাতিরঝিলে।

পুরান ঢাকার বিস্তৃত এলাকা হাজারীবাগ, জিগাতলা, নিউমার্কেট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সেগুনবাগিচা, মগবাজার প্রভৃতি এলাকার বর্জ্য নয়াটোলা বা সায়েদাবাদ শাখা নালা হয়ে নারিন্দা পাম্পস্টেশনে যাওয়ার কথা। সেখান থেকে ধোলাইখাল হয়ে পাগলায় যায়। ওয়াসা সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে ধোলাইখালের ওপর তিন কিলোমিটার বক্স কালভার্ট নির্মাণ করতে গিয়ে পাইপলাইন পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলা হয়। পরে বিভিন্ন নর্দমার সঙ্গে ম্যানহোলের সংযোগ করে কিছু বর্জ্য যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

বাসাবাড়ির বর্জ্য শোধন না হলেও ঢাকা ওয়াসার বিল আদায় থেমে নেই। ওয়াসারই হিসাব বিভাগে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, মগবাজার প্রভৃতি এলাকায় অনেক পয়োনালা অকেজো হলেও সেসব এলাকার বাসাবাড়ি থেকে ওয়াসার পানির বিলের সমপরিমাণ অর্থ আদায় করা হয়। গত ১০ বছরে পয়ো বিল বাবদ ১ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আদায় করা হয়েছে প্রায় ২১৭ কোটি টাকা।

পয়োনিষ্কাশন মহাপরিকল্পনায় ধীরগতি
২০১৩ সালে ঢাকা মহানগরীর পয়োনিষ্কাশন মহাপরিকল্পনা তৈরি করে ওয়াসা। সে অনুসারে ঢাকার চারপাশের নদীদূষণ রোধে পাঁচটি শোধনাগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট দাসেরকান্দি শোধনাগারের নির্মাণকাজের উদ্বোধন হয়। হাতিরঝিল থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে আফতাব নগরের কাছে দাসেরকান্দি এলাকা। এ শোধনাগারের মাধ্যমে বারিধারা, বাড্ডা, তেজগাঁওসহ ৮০ বর্গকিলোমিটার এলাকার পয়োবর্জ্য সংগ্রহ ও পরিশোধন করে নড়াই খালের মাধ্যমে বালু নদে নিয়ে যাওয়া হবে। তবে তরল বর্জ্য পৌঁছানোর জন্য এখন পর্যন্ত পাইপলাইন তৈরির (নেটওয়ার্ক) কাজ শুরু হয়নি। ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এখানে পাইপলাইনের নকশা হয়ে যাওয়ার কথা। কেন হয়নি, প্রকল্প পরিচালক বলতে পারবেন।

বুয়েটের অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, নির্মাণাধীন এই শোধনাগারের পাইপলাইনের নকশা করা হয়েছে কি না, তা বুয়েটকে এখনো জানানো হয়নি। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর পাইপ বসানোর কাজ এখনই শুরু না করলে বড় সমস্যা হবে।

রাজধানীতে বাকি চারটি শোধনাগার হবে উত্তরা, মিরপুর, রায়েরবাজার ও পাগলায় (দ্বিতীয়)। এগুলোর প্রকল্পস্থলের মাটির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হলেও জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়নি। তবে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বলেন, এখনো আশা করা যায় কাজগুলো সময়মতোই হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকার শতভাগ মানুষের বর্জ্য পরিশোধনের আওতায় আসবে। তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে জমি অধিগ্রহণের জন্য আলাদা প্রকল্প করা হচ্ছে।সূয়ত্র: প্রথম আলো

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত