32 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
দুপুর ১:৫৩ | ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
ঢাকার পরিবেশ কি বসবাসের এতটাই অযোগ্য ?
বাস্তুসংস্থান

ঢাকার পরিবেশ কি বসবাসের এতটাই অযোগ্য ?

সম্প্রতি লন্ডন ভিত্তিক ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বিশ্বের ১৪০টি দেশের স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা, এবং অবকাঠামোর উপর ভিত্তি করে বসবাসযোগ্য শহরগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে।এতে বসবাসের সবচেয়ে অযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৩৮ তম; যা তালিকার নিচের দিক থেকে ৩ নম্বর।

বসবাসের সবচেয়ে অযোগ্য শহরের তালিকায় নিচের ১০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান নিচের দিক থেকে তৃতীয়।ঢকার পরের দুটি দেশ হলো- সিরিয়ার দামেস্ক ও নাইজেরিয়ার লাগোস।

ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বসবাসযোগ্য শহরগুলোর তালিকাও প্রকাশ করেছে। শহরগুলো হলো- অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনা, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন, সিডনি, জাপানের ওসাকা, কানাডার ক্যালগারি, ভাঙ্কুবার, টরেন্টো।

ঢাকার পরিবেশ বসবাসের কতেটা অযোগ্য ? – তা বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে ঢাকায় বসবাসকারী কয়েকজনের বক্তব্যে তুলে ধরা হয়েছে।

রাজধানীর মিরপুরে থাকেন বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে উপস্থাপিকা শারমীন নাহার নিপার তথ্যমতে,ঢাকা শহরে বসবাসের সবচেয়ে নেতিবাচক দিকটি হচ্ছে যানজট।মিরপুর থেকে তার কর্মস্থল সিদ্ধেশ্বরীতে যেতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় তাকে।

পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন,”বাসের মধ্যে কোন শৃঙ্খলা নাই, ভাড়া নিয়ে কোন শৃঙ্খলা নাই, যাত্রী তোলা নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা থাকে চালকদের মধ্যে, দক্ষ চালকও নাই।এ বিষয়ে বারবার আলোচনা এমনকি বড় ধরণের একটি আন্দোলন হওয়ার পরও এ খাতটিতে কোন পরিবর্তন আসেনি।”

ঢাকার ফার্মগেটের পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় থাকেন নাদিরা জাহান।সংসার সামলানোর পাশাপাশি বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরীও করেন তিনি।

তিনি বলেন, ” ঘনবসতি হওয়ার কারণে বিল্ডিংগুলা একটার গায়ে আরেকটা লেগে থাকে। ফলে অনেক সময় দেখা যায় যে মানুষের প্রাইভেসিও থাকে না।পূর্ব রাজা বাজারে আরও যেটি সবচেয়ে বড় সমস্যা সেটা হচ্ছে রাস্তা কাটা।এলাকায় সকাল- বিকাল গ্যাস থাকে না,সেইসাথে নিয়মিত পানি সরবরাহ পাওয়া যায় না।তাছাড়া একেক বার একেককর্তৃপক্ষ এসে রাস্তা কাটে, কখনো বিদ্যুতের থেকে কাটা হচ্ছে, কখনো গ্যাস, কখনো ওয়াসা অর্থাৎ একেক জন একেক সময় রাস্তা কাটে আর মানুষজন চরম দুর্ভোগ পোহায়,”

ইকনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের ওই তালিকার বিবেচ্য বিষয়ের মধ্যে এ ধরণের কিছু নাগরিক অসুবিধার কথা উঠে এসেছে।তালিকাতে শহরগুলোর বাসযোগ্যতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে যেসব বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি ও পরিবেশ, শিক্ষা, এবং অবকাঠামো।

এই বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে ঢাকা দুটি বিষয়ে বেশ পিছিয়ে রয়েছে। তার মধ্যে একটি সংস্কৃতি ও পরিবেশ এবং অন্যটি অবকাঠামো।এই দুটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে যা যা রয়েছে তা হল, জলবায়ু ও তাপমাত্রা, দুর্নীতির মাত্রা, সামাজিক বা ধর্মীয় প্রতিবন্ধকতা, খেলাধুলার সুযোগ, খাদ্য ও পানীয় দ্রব্য, ভোগ্যপণ্য ও সেবা, সড়ক-পরিবহন ব্যবস্থা, গৃহায়ন, জ্বালানী, পানি এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা।

নগর পরিকল্পনাবিদরা ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্সের এই বিশ্লেষণকে গ্রহণযোগ্য মনে না করে প্রত্যখ্যান করেছেন।নগর পরিকল্পনাবিদ ও প্রকৌশলী ইকবাল হাবিব বলেন,“এই তালিকায় যেসব শহরের সাথে ঢাকার তুলনা করা হয়েছে সেগুলো অনেকটা জন মানবহীন শহর বললে ভুল হবে না।মেলবোর্ন বা ভিয়েনাতে যদি ঢাকার কোন একটি এলাকার জনসংখ্যাও ঢুকিয়ে দেয়া যায় তাহলে পুরো ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়তে পারে।”

তিনি বলেন,“সেসব শহরের সাথে ঢাকাকে তুলনা করার মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, তারা আসলে প্রাণের শহর, মানবিক শহর, মানুষের শহরের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেই আমাদেরকে এতোটা নিচে নামিয়েছে।এই তুলনা যারা করছেন তারা বিনিয়োগ এবং পর্যটন ভিত্তিক পর্যালোচনার সাপেক্ষে এই মূল্যায়নটা করেন। সেই মূল্যায়নে ফুটফুটে শহরের চিন্তা করেন।”

কিন্তু যে শহরে একুশের প্রভাত ফেরি এবং পহেলা বৈশাখে লক্ষ লক্ষ মানুষ নির্বিঘ্নে আনন্দ করে, সে শহরকে এভাবে মূল্যায়ন যারা করে তাদের মূল্যায়নের ঘাটতি বলাই বাহুল্য।তবে,এর মানে এই নয় যে ঢাকা শহরে বাসযোগ্যতা নিয়ে কোন সমস্যা নেই। ঢাকাকে তার সম্ভাবনার দিক থেকে বিবেচনা করলে বাসযোগ্যতার দিক থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।সে অর্থে তার বসবাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।ঢাকা শহরে মানুষের সংখ্যা এবং তার বিপরীতে বসবাসযোগ্য জমির পরমাণের অনুপাত কম হওয়ায়, একটি পরিকল্পিত নগরী হিসেবে ঢাকাকে গড়ে তুলতে হলে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতে হবে বলে তিনি বলেন।

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে নানা ধরণের পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।হাতে নেয়া হয়েছে মেট্রো রেলের মতো বড় প্রকল্পসহ নানা ধরণের পদক্ষেপ।ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে গুরুতর রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিয়ে কঠোরভাবে কাজে নামতে হবে।এ বিষয়ে অনেক ধরণের পরিকল্পনা তৈরি করা হলেও এখনো সেগুলো বাস্তবায়ন করা যায়নি বলে মনে করেন তিনি।

যার কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন,বিভিন্ন ধরণের অপরাধমূলক কাজকে।একটি অনানুষ্ঠানিক চাঁদাবাজি এবং একটি অর্থনৈতিক কোটারিগোষ্ঠী পুরো পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ভেস্তে দিচ্ছে।এ ধরণের কার্যক্রম বন্ধ করতে যে ধরণের রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সংশ্লিষ্ট সাংগঠনিক কাঠামো প্রয়োজন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলামের সাথে ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে ইকোনমিস্টের এই তালিকা নিয়ে কথা বললে তিনি বলেন, ইকোনমিস্ট এধরণের কোন জরিপের জন্য তাদের কাছ থেকে কোন তথ্য নেয়নি।কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোন তথ্য না নিয়ে ইকোনমিস্ট কিভাবে এই তালিকা তৈরি সে বিষয়েও সন্দেহ রয়েছে।

“ঢাকা যেহেতু বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর সে হিসেবে আমরা সার্বিক সেবা প্রদান করে এটার বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য যথেষ্ট কাজ করছি।ঢাকা শহরের সিটি গ্রিনারি, পার্ক, খেলার মাঠ, রাস্তা, স্ট্রিট লাইট এগুলোর বিষয়ে যথেষ্ট কাজ হচ্ছে ।দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে আন্তর্জাতিক মানের ৩১টি খেলার মাঠ রয়েছে।তবে প্রতিনিয়ত বাড়তি মানুষের চাপ সামলাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে সরকার।জলবায়ুর প্রভাব যেমন, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, এবং কর্মসংস্থানের সন্ধানে মানুষ প্রতিনিয়তই ঢাকা মুখী হয়।কম ঘনবসতি এবং বেশি ঘনবসতিপূর্ণ শহরের ব্যবস্থাপনার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। সিটি কর্পোরেশন ও সরকার যৌথভাবে ঢাকাকে আরো বাসযোগ্য করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে,” তিনি বলেন।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, “মেট্রো রেলের মতো বড় প্রকল্পের কারণে নাগরিকদের কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তবে এটা সাময়িক।তবে শহরের অন্য বিষয়গুলো যেমন, রাস্তাঘাট, ভবন নির্মাণ, যানজট, গণ-পরিবহন, এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো দেখার জন্য আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠান রয়েছে”।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত