জাপানে আঘাত হেনেছে ভয়াবহ টাইফুন হাগিবিস।গত ৬০ বছরের ইতিহাসে এটিকে জাপানের সবচেয়ে ভয়াবহ ঝড় মনে করা হচ্ছে।আঘাত হানার আগে প্রলয়ঙ্কারী এই টাইফুনের গতিবেগ ঘন্টায় ১৮০ কি.মি. ছিলো।স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার কিছুক্ষণ আগে এটি জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিম টোকিওর ইজু উপদ্বীপে আঘাত হানে।এর প্রভাবে টোকিওর দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় ইজু দ্বীপে ভূমিধস আঘাত হেনেছে।শক্তিশালী টাইফুনের আঘাতে এখন পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে।
শক্তিশালী টাইফুন হাগিবিসের আঘাতে জাপানের বিভিন্ন এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে গেছে।এছাড়াও জাপানের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১শ মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কিয়োদো নিউজ।
অন্যদিকে এখন জাপানের মূল দ্বীপের পূর্ব উপকূল ধরে এগিয়ে চলছে টাইফুন হাগিবিস । আর এ ঝড়ের বাতাসের গতি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ২২৫ কিলোমিটার উঠেছে বলেও জানা যাচ্ছে।
কিয়োদো নিউজ এজেন্সি বলছে বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচজনের মৃতদেহ শনাক্ত করা গেছে, ১১ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন এবং অন্তত ৯০ জন আহত হয়েছেন।
জাপানের কেন্দ্রীয় অঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যা ও ভূমিধস আঘাত হেনেছে।আর চলছে সেখানে উদ্ধার অভিযানও । এদিকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দেশজুড়ে মোতায়েন করেছে ২৭ হাজার প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য ।
তীব্র বন্যা এবং ভূমিধ্বসে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় ৭০ লাখের বেশি মানুষকে তাদের বাড়ি ছাড়তে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।জাপানের আবহাওয়া কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, “বিভিন্ন শহর এবং গ্রামে অতিরিক্ত মাত্রায় বৃষ্টি হওয়ায় জরুরি সতর্ক অবস্থা জারি করা হয়েছে।টোকিও এলাকায় শনিবার এবং রবিবারের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত প্রায় আধা মিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে।”
শনিবার টোকিওর অনেক এলাকায় বুলেট ট্রেন এবং মেট্রোর অনেক ট্রেন সেবা বন্ধ ছিল।স্থানীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে, টোকিও উপসাগরে পানামার একটি কার্গো জাহাজ ডুবে গেছে। যাতে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে, ১২ ক্রু সদস্য ডুবে মারা গেছেন । যাদের মধ্যে তিনজন মিয়ানমারের, সাতজন চীনের ও দু’জন ভিয়েতনামের নাগরিক ছিলেন।
অন্যদিকে স্থানীয় সময় রবিবার সকালে অপর একটি জাহাজের চার ক্রু সদস্যকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
আবার কয়েক লাখ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে।
জাপান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, চিবা; ফুকুসিমা; গানমা; টোচিগি ও কানাগাওয়া এলাকায় কমপক্ষে মৃত্যু হয়েছে নয় জনের। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছে আরও ১৫ জন ।
এ ঝড়ের প্রভাবের কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় টোকিওতে ইতিহাসের রেকর্ড করা হয়েছে সর্বোচ্চ ৭০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত । প্রভাব বিস্তাররকারী প্রলয়ঙ্করী এই ঝড়ের কারণে দেশটিতে চলমান রাগবি ওয়ার্ল্ড কাপের দুটি ম্যাচও স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। এমনকি রাজধানী টোকিওর হানেদা এবং চিবা’র নারিতা বিমানবন্দর মোট এক হাজারের বেশি ফ্লাইট বাতিল করেছে।