32 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
সকাল ১১:৪৫ | ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যা মোকাবিলার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো কি হতে পারে?
পরিবেশ বিশ্লেষন

বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যা মোকাবিলার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো কি হতে পারে?

বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যা মোকাবিলার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো কি হতে পারে?

জলবায়ু পরিবর্তন সমস্যা উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, তা চিহ্নিত ও প্রকৃতি নির্ণয়ের করার লক্ষ্যে গবেষণা করছে কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টার নামের গবেষণা প্রতিষ্ঠান। অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি সামাজিক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত উন্নয়নের ওপরও যথেষ্ঠ জোর দিচ্ছে সংস্থাটি। বাংলাদেশের জন্য ভিশন ২০২১ অর্জনে এই গবেষণাভিত্তিক কিছু নিবন্ধ প্রকাশ করছে বাংলাদেশের জনপ্রিয় পত্রিকা প্রথম আলো।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের যেসব দেশ সবচেয়ে অরক্ষিত এবং ক্ষতিগ্রস্থ অবস্থায় রয়েছে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। দেশটির নাগরিকগন নানা সময়ে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, বিষাক্ত ধোয়া, দাবদাহ ও খরার মতো মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের বেশীরভাগ অংশ ডুবে যাবে।



বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তন কিছু কিছু অঞ্চলের আবহাওয়ার সংকটময় অবস্থাকে আরও শোচনীয় করে তুলবে এবং উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসকারী মোটামুটি ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে আরও বেশি হুমকির মুখে ফেলবে। এ ছাড়া এটা স্পষ্ট যে ঝুঁকিপূর্ণ জলবায়ু সৃষ্টির পেছনে সবচেয়ে বড় কারণগুলোর মধ্যে দারিদ্রতা অন্যতম, তাই আমাদের উচিত দারিদ্রতা কমাতে সাধারণ নীতিমালা তৈরি করা।

অর্থনীতিবিদ আলেক্সান্ডার গোলুব ও এলেনা স্ট্রুকোভা গোলুবের নতুন গবেষণা বিভিন্ন সমস্যার সমাধান নিয়ে অনুসন্ধান করে, যেগুলো জলবায়ুর পরিবর্তনের স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব মোকাবিলায় সাহায্য করতে পারে। ভবিষ্যতে জলবায়ুর পরিবর্তন বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।

উপকূলীয় অঞ্চলগুলো বন্যা ও অন্যান্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে, তাই তাঁরা এসব অঞ্চলের সমস্যার সমাধানের ওপর বেশির জোর দিয়েছেন।

তাঁরা প্রথমে যে সমাধানটি দিয়েছেন তা হচ্ছে ম্যানগ্রোভ খ্যাত সুন্দরবনকে সংরক্ষণ করা। বাংলাদেশ উপকূলীয় অঞ্চলে ম্যানগ্রোভের সংরক্ষণের পাশাপাশি পুনরায় বৃক্ষ রোপণ করতে পারে, যেটি পরিবেশকে কার্বনমুক্ত করার পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ের বিরুদ্ধে একটি প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবেও কাজ করবে।

সুন্দরবন ক্রমবর্ধমান জীববৈচিত্র্য, মাছের আবাসস্থল ও ইকোট্যুরিজম সুবিধাসহ কিছু অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করে। কিন্তু এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল, কারণ এই ব্যবস্থায় প্রতিবছর প্রায় ৪০ কিলোমিটার উপকূলরেখায় ম্যানগ্রোভ রোপণ করতে হবে।

সুন্দরবনের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবস্থিত ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণে পরবর্তী ৩০ বছরে প্রয়োজন হবে ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকারও বেশি। সব মিলিয়ে জলবায়ু সুরক্ষা ও পর্যটনের উন্নয়নের পাশাপাশি ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণ এবং পুনর্বনায়নের পেছনে ব্যয়িত প্রতি টাকায় ২ দশমিক ৮ টাকার কল্যাণ সাধিত হবে।

দ্বিতীয় প্রস্তাবটি হলো আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা তৈরি করা এবং আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তোলা, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে যেখানে মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। অনেকে বর্তমান আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ব্যবহার করে না, কারণ সেখানে তারা তাদের গবাদিপশু ও অন্যান্য মূল্যবান প্রাণিসম্পদ রাখার ব্যবস্থা করতে পারে না, তাই প্রস্তাবিত কাঠামো মানুষ এবং গবাদিপশু উভয়ের বাসস্থানের ব্যবস্থা করবে।



বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ৫৩০টি আশ্রয়কেন্দ্রের প্রয়োজন, কিন্তু প্রতিটি ঘূর্ণিঝড় বিবেচনায় নিলে এগুলো বেশ ব্যয়বহুল হিসেবে দেখানো হয়েছে, যেখানে সবচেয়ে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়গুলো কালেভদ্রে ঘটে। প্রতিটি বহুমুখী আশ্রয়কেন্দ্রের পেছনে খরচ হবে প্রায় ৮ দশমিক ৫ কোটি টাকা এবং ব্যয়িত প্রতি টাকা ১ দশমিক ৮ টাকার কল্যাণ সাধন করবে।

তৃতীয় সম্ভাব্য সমাধানটি হলো নিচু জমির চারপাশে বাঁধ দেওয়া, যা বন্যা থেকে কৃষিজমি, বাড়িঘর ও অবকাঠামোকে রক্ষা করবে। তবে এর উপকারিতাগুলো সুনির্দিষ্টভাবে বন্যার ধরনের ওপর নির্ভর করে। বন্যার পানি যদি ৩ মিটারের বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হয়, কিছু এলাকায় যা নিয়মিতভাবে ঘটে থাকে, তাহলে জমির বাঁধগুলোতে প্রায়ই ফাটল ধরে যায় এবং এটি কোনো উপকারেই আসে না।

এগুলোও অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও এগুলো করতে বাংলাদেশের খরচ হবে ৩৭ হাজার ২০০ কোটি টাকারও বেশি। বন্যার পানি যেখানে ৩ মিটারের বেশি উচ্চতা ছাড়িয়ে যায়, সেখানে বাঁধ নির্মাণের খরচ প্রাপ্ত সুবিধার চেয়ে বেশি হবে।

একটি উত্তম প্রস্তাব হলো, এমন এলাকাগুলোর দিকে নজর দেওয়া বন্যার পানি ৩ মিটারের চেয়ে কম উচ্চতায় প্রবাহিত হয়, তারপরেও যা মৃত্যু ও ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। এসব ক্ষেত্রে ব্যয়িত প্রতি টাকায় ১ দশমিক ৮ টাকার সুবিধা পাওয়া যাবে।

সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ নিশ্চিত করার জন্য এমন একটি সর্বজনীন সমাধান দরকার, যাতে এর অধিবাসীরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারে।

অর্থনীতিবিদ আলেক্সান্ডার গোলুব ও এলেনা স্ট্রুকোভা গোলুব দুটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের ওপর অনুসন্ধান চালিয়েছেন, সাধারণত যেগুলোর লক্ষ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে জোরদার করা, অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করা ও মানুষের পুঁজির গঠন বৃদ্ধি করা।

প্রকৃতপক্ষে এই দুই অর্থনীতিবিদের গবেষণাটি হলো ‘বাংলাদেশ প্রায়োরিটিজ’ প্রকল্পের অংশ, যা অন্যান্য অনেক সমাধানের দিকেও নজর দেয়—যেগুলো বাংলাদেশকে শক্তিশালী এবং আরও সমৃদ্ধিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টার ও ব্র্যাকের যৌথ অংশীদারত্বের এই প্রকল্প, এই দেশ, অঞ্চল এবং সারা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ডজন খানেক অর্থনীতিবিদকে নিয়োজিত করেছে। বাংলাদেশ কীভাবে এর উন্নয়ন প্রচেষ্টার পেছনে ব্যয়িত প্রতি টাকায় সর্বোচ্চ কল্যাণ সাধন করতে পারে, তা খুঁজে বের করতে ৭০টিরও বেশি সমাধানের খরচ এবং প্রাপ্ত সুবিধার ওপর গবেষণা করে এই প্রকল্প।

জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রস্তাবগুলোর মধ্যে প্রথমটির লক্ষ্য হচ্ছে কৃষিতে নিয়োজিত শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা। বিনিয়োগ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব। এ জন্য পরবর্তী দুই দশক ধরে প্রতি শ্রমিকের পেছনে ৭ লাখ টাকার মতো খরচ হবে এবং কৃষি উৎপাদনশীলতা ১০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে।



সাকল্যে আগামী ২০ বছরে ব্যয়িত প্রতিটি টাকা ৩ দশমিক ৭ টাকার সুবিধা দেবে। আরেকটি বিকল্প হলো শ্রমিকদের কৃষিকাজ থেকে সরিয়ে তাঁদের শিল্পকারখানা রয়েছে এমন শহরগুলোয় স্থানান্তরের মাধ্যমে আরও বেশি উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত করা।

তাহলে পরবর্তী এক দশকে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতির পরিমাণ কমাতে ম্যানগ্রোভ দ্বারা সুরক্ষিত নয়—এমন এলাকায় বসবাসকারী ১০ লাখ মানুষকে স্থানান্তর করা যেতে পারে। এটি এককভাবেই ব্যয়িত প্রতি টাকায় ১ টাকার সুফল বয়ে আনবে।
প্রতি ব্যক্তিকে প্রশিক্ষিত ও স্থানান্তর করতে ৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের প্রয়োজন হতে পারে।

কিন্তু উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও বিপজ্জনক উপকূলীয় অঞ্চল থেকে লোকজনকে সরানোর মাধ্যমে ব্যয়িত প্রতি টাকায় কেবল ২ দশমিক ৬ টাকার কল্যাণ সাধিত হবে।

ড. বিয়র্ন লোমবোর্গ: কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টারের প্রেসিডেন্ট। টাইম ম্যাগাজিনের মূল্যায়নে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির একজন।

সংগৃহীত – প্রথমআলো

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত