জলবায়ু পরিবর্তন রোধে পাঠ্যপুস্তকে পরিবেশগত শিক্ষার ভূমিকা
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশদূষণ আগামী পৃথিবীর জন্য এক অশনিসংকেত। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে শুধু একক কোনো দেশ বা অঞ্চল নয় বরং পৃথিবীর সব দেশই জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং হিমবাহের বরফ গলছে দ্রুতহারে।
পরিবেশের ওপর মানুষের সৃষ্ট চাপ ও যথেচ্ছ ব্যবহারে পরিবেশে বাড়তি তাপ তৈরি হচ্ছে। যার বেশির ভাগই সমুদ্র শুষে নিচ্ছে। ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে দ্বীপদেশ এবং নিচু অঞ্চলগুলো। বিশ্বের তাপমাত্রা শিল্পায়ন যুগের বেসলাইন থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১.১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বেড়েছে।
২০১৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জলতল ৫ মিলিমিটার পর্যন্ত বেড়ে গেছে। জাতিসংঘের আন্তসরকার জলবায়ু কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ২০৫০ সালে বিশ্বের সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা এক মিটার বাড়বে। এ কারণে বাংলাদেশের প্রায় ১৭ শতাংশ স্থলভাগ তলিয়ে যাবে। বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের ভুক্তভোগী তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে সপ্তম স্থানে।
গত বিশ বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের প্রায় ৫৭৭ লোক মারা গিয়েছেন এবং প্রায় ১৬৮ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বড় দূষিত বায়ুর দেশ।
রাজধানী ঢাকা দূষিত বায়ুর শহরের মধ্যে দ্বিতীয়। ক্রমাগত খাদ্য চাহিদা বাড়ায় ও শিল্পকারখানা বৃদ্ধির কারণে আমাদের বনভূমির পরিমাণও দিনে দিনে কমে যাচ্ছে।
বায়ুদূষণ, পানিদূষণ ও বনভূমি উজাড়ের কারণে বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি, বন্য প্রাণী, জলজ প্রাণী, উদ্ভিদরাজি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনেক মানুষ বাস্তুচ্যূত হচ্ছে। ফলে অভ্যন্তরীণ শরণার্থী ও ভাসমান জনগোষ্ঠীর সংখ্যাও বাড়ছে।
মানষের আচরণ, সামাজিক সচেতনতা, পরার্থপরতা শিক্ষার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। স্কুল থেকেই মানুষ মর্যাদাবোধ, আচরণের শিক্ষা লাভ করে, যা তাদের ব্যক্তিত্ব নির্ধারণ করে থাকে।
তাই শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের সময় থেকেই পরিবেশ বিষয়ে আগ্রহী করে তোলার এটা একটা উপযুক্ত সময়। পরিবেশের ওপর যত্নশীল হওয়া, বাস্তুসংস্থানগত জ্ঞান লাভ করানোই হচ্ছে শিশুদের পরিবেশগত শিক্ষা দেওয়ার অন্যতম একটা উদ্দেশ্য।
পরিবেশগত শিক্ষা হলো এমন একটি শিখনপ্রক্রিয়া, যা দ্বারা ব্যক্তি পরিবেশগত সমস্যাগুলো অন্বেষণ করতে পারবে। সমস্যা সমাধানে জড়িত হতে এবং পরিবেশের উন্নতির জন্য পদক্ষেপ নিতে পারে।
ফলস্বরূপ একজন পরিবেশগত বিষয়ে বোঝার সক্ষমতা গভীরভাবে অর্জন করে ও দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত অর্জন করে। ইউনেসকোর মতে, পরিবেশগত শিক্ষা হলো এমন একটি শিখনপ্রক্রিয়া, যা মানুষের জ্ঞান ও সচেতনতা বাড়ায় এবং প্রয়োজনীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষতা, অনুপ্রেরণা, মনোভাব, অবহিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবং দায়বদ্ধ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধও করে তোলে।
ইউনেসকো বলছে, ৪ টি কারণে শিশুদের পরিবেশগত শিক্ষা দেওয়া উচিত। কারণগুলো হচ্ছে ১. তাদের সচেতনতাবোধ বাড়ানো ও চেতনাবোধ জাগ্রত করা, ২. তাদের আগ্রহবোধ জাগিয়ে তোলা, ৩. আমাদের চারপাশের পরিবেশ সম্পর্কে বোঝার সক্ষমতা বাড়ানো এবং ৪. বাস্তুসংস্থানগত জ্ঞান বৃদ্ধি করা।