গ্রীষ্মের ধাক্কায় টিকে থাকতে জার্মানিতে নতুন ধরনের গাছপালা
তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় জার্মানির শহরগুলিতে অনেক গাছপালা আর টিকে থাকতে পারছে না৷ প্রচন্ড উত্তাপ সহ্য করতে পারে এমন গাছ লাগানোর প্রবণতা বাড়ছে৷ বৃষ্টির পানি অপচয় কমাতেও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে৷
নার্সারি থেকে চারাগাছ নিয়ে এসে হামবুর্গ শহরের এক আবাসনে বসানো হচ্ছে৷ কয়েকটি চারাগাছে উজ্জ্বল সবুজ রংয়ের পাতা দেখা যাচ্ছে ৷ বিচ গাছের চারার তুলনায় সেগুলি অনেক বেশি সুন্দর৷ জাপানি এবং ককেশীয় আল্ডার জাতের সংমিশ্রণের মাধ্যমে এক শঙ্কর প্রজাতি সৃষ্টি করা হয়েছে৷
এটির অনেক গুণাগুণ রয়েছে৷ ব্যার্নহার্ড ফন এয়ারেন বলেন, গরম বাড়লে গাছের পাতার ছিদ্রগুলি বন্ধ হয়ে যায়৷ যার ফলে ভেতরে আর্দ্রতা বজায় থাকে৷ নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা এখনো স্পেট’স আল্ডার গোত্রের গাছ বেশি লাগাইনি৷
জলবায়ু পরিবর্তনকে উপেক্ষা করে ভবিষ্যতের গাছ হিসেবে এই গাছ এসে পড়েছে৷ শহুরে পরিবেশে এসব গাছ কেমন থাকে আমাদের তা দেখতে হবে৷ আমার ধারণা অনুযায়ী, প্রচলিত গাছপালার চেয়ে এগুলির গুণাগুণ অনেক বেশি৷
গত মৌসুমে লাগানো কয়েকটি স্পেট’স আল্ডার গাছ রয়েছে৷ গ্রীষ্মকাল শুকনা হওয়া সত্ত্বেও সেগুলি এখনো দেখতে খুব সুন্দর লাগছে৷ স্থানীয় গাছপালাগুলির তুলনায় সেগুলির দেখতে অনেক ভালো৷
এমন উদ্যোগের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ব্যার্নহার্ড ফন এয়ারেন বলেন, ২০ বছর আগে আমরা বলতে শুরু করেছিলাম যে, বিশেষ করে শহরের জন্য উপযুক্ত ভিন্ন ধরনের নতুন এবং ভালো গাছ লাগাতে হবে৷ সেখানে গাছের উপর অনেক চাপ পড়ে৷ মানুষের নড়েচড়ে বসতে কিছুটা সময় লেগেছে৷
পুরো বিশ্বের শহরগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে৷ কংক্রিটের আধিক্যের কারণে অনেক শহর প্রবল বৃষ্টিপাত ও বন্যার ধাক্কা সামলাতে পারছে না৷ পানি সেখানে মাটির ভেতরে প্রবেশের জায়গা পায় না৷
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা অভিযোগ করে বলেছেন, এর ফলে জঙ্গল কিংবা মাঠের তুলনায় বৃষ্টিপাতের প্রায় অর্ধেক পরিমাণ হারিয়ে যায়৷ মানুষ বা প্রকৃতি তার সদ্ব্যবহার করতে পারে না৷ পরিবেশ বিজ্ঞানী আন্দ্রেয়াস মাৎসিঙার বলেন, বৃষ্টির পানি ড্রেনে চলে গেলে পুরোপুরি হারিয়ে যায়৷ সেই পানি বাষ্পীভূত হতে পারে না৷
এর ফলে পানির প্রাকৃতিক চক্র থেকে সেটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ বাষ্পীভবনের কারণে বাতাস ঠাণ্ডা হয় এবং আমরা সেটা বুঝতে পারি৷ সারফেস বা ভূমি পুরোপুরি ঢাকা থাকলে সেখানে গরম বেড়ে যায়৷ বাষ্পীভবন না ঘটলে ঠাণ্ডাও হতে পারে না৷ শহরের কিছু কিছু অংশে বিচ্ছিন্ন উত্তাপের অন্যতম কারণ এটি৷
বার্লিনের দক্ষিণে এক এলাকায় বিকল্প এক ভাবনা দেখা যাচ্ছে৷ সেখানে ‘স্পঞ্জ সিটি’ নামের পানি ব্যবস্থাপনার নীতি প্রয়োগ করা হচ্ছে৷ সেখানে ফাঁকা জমি ও ছাদের উপর বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে স্থানীয় পুলে পাঠানো হচ্ছে৷ ফলে সেই পানি ড্রেনে উধাও হয়ে নিশ্চিহ্ন হতে পারছে না৷
হাইড্রোলজিস্ট হানা ক্র্যুগার বার্লিনের নিজস্ব পানি সরবরাহকারী কোম্পানির থিংক ট্যাংকে সক্রিয় রয়েছেন৷ তিনি মনে করেন, বৃষ্টির পানি আসলেই অত্যন্ত মূল্যবান একটি সম্পদ৷ জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের শহরকেও মানিয়ে নিতে হবে৷ সে কারণে আমরা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে সেই পানি ব্যবহার করতে চাই৷