করোনাভাইরাস ও তরুণদের ঝুঁকি
-আশফাকুর রহমান নিলয়
এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনা করে এটি স্পষ্টত যে বয়স যাদের বেশি, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তাদের বেশি। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) তরুণদেরকে এই বিপদ থেকে নিজেদেরকে নিরাপদ নয় – তা ভাবতে সতর্ক করে দিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের শ্রমিক দলের সাংসদ এবং দুঘর্টনা ও জরুরীবিভাগের ডাক্তার (A doctor of accident & emergency department – A&E) ডাঃ রোজেনা অ্যালিন বিবিসিকে জানিয়েছে, “এই অসুস্থতাটি বয়স্ক ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়” ।
তিনি ইংল্যান্ডে ১৮ বছর বয়সী একজন তরুণ এই ভাইরাসে মারা যাওয়ার একদিন পর এই কথাগুলো বলেন। ইংল্যান্ডে একজন তরুণ মারা যাওয়ার পর তারা এটিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মারা যাওয়া সর্বকনিষ্ঠ মানুষ বলে মনে করছেন।
ডাঃ অ্যালিন খান বলেন যে তিনি ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী যেসব সুস্থ এবং সবল ব্যক্তিদের চিকিৎসা করিয়েছেন তারা আজ নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছে এবং জীবনের সঙ্গে তারা লড়াই করছে।
তাহলে ভিন্ন ভিন্ন বয়সের মানুষদের ঝুঁকিগুলো কি কি?
এটি এখনও বুঝা যাচ্ছে যে, সামগ্রিকভাবে বয়স্ক লোকজনরাই বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের গবেষণায় বয়স এবং করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে একটি যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে। বয়স্ক ব্যক্তিরা যখন হাসপাতালে রোগটি নিয়ে ভর্তি হয়েছে, তাদের নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন হয়েছে।
৫০ বছরের কম বয়সী মানুষদের ৫ শতাংশেরও কম ভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন, কিন্তু ৭০ থেকে ৭৯ বয়সী মানুষদের ক্ষেত্রে তা বৃদ্ধি পেয়ে ২৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
একইভাবে, ৪০ বছরের কম বয়সী মানুষদের মধ্যে ৫ শতাংশ আছেন যাদের নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন। ৬০ বছর বয়সী আছেন ২৭ শতাংশ এবং ৭০ বছর বয়সী আছেন ৪৩ শতাংশ।
একটি অডিট গবেষণার পর জানিয়েছে, ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও নর্দান আয়ারল্যান্ডে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (critical care units) ভর্তি হওয়া রোগীদের গড় বয়স ৬৩ বছর।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (Centers for Disease Control and Prevention-CDC) জানিয়েছে, প্রাথমিক তথ্য বলছে ৫৩ শতাংশ মানুষ যারf হাসপাতালে ভর্তি তাদের বয়স ৫৫ এর উপরে, যার অর্থ হচ্ছে প্রায় অর্ধেকেরই বয়স কম।
কিন্তু নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (ICU) এর কথা যখন আসে, সেখানের ৮০ শতাংশ মানুষের বয়স ৬৫ এর অধিক।
WORLDOMETER এর তথ্য মতে বয়স আনুযায়ী নিন্মে কোবিদ -১৯ করোনায় মৃত্যুর হার দেয়া হল:
বয়স | মারা যাওয়ার হার |
৮০বছর ও উপরে | ১৪.৮% |
৭০-৭৯ | ৮.০% |
৬০-৬৯ | ৩.৬% |
৫০- ৫৯ | ১.৩% |
৪০-৪৯ | ০.৪% |
১০-৩৯ | ০.২% |
০-৯ | নাই |
প্রত্যেকের এককভাবে গড় হিসেবে বিবেচিত নয়
এখানে গড় দেখানো হলো, যেখানে কম বয়সী ব্যাক্তিরা দূর্ভাগ্যবশত অসুস্থতায় আরও বেশি দূর্ভোগে পড়বেন এবং কিছু ক্ষেত্রে ভয়াবহ বিপদেরও সম্মুখীন হয়েছে।
ইতালিতে ৪০ বছর বয়সী লোকদের মধ্যে ০.৪ শতাংশ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন, যেখানে ১৯.৭ শতাংশ লোকেরা ছিল ৮০ বছর বয়সী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ বছর বয়সীদের মাঝে আনুমানিক ০.৭ শতাংশ মানুষের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় এলার্জি ও সংক্রামক রোগ ইন্সটিটিউটের পরিচালক (National Institute of Allergy and Infectious Diseases) এর পরিচালক অ্যান্টনি ফৌসি বলেছেন, মোট মৃতের সংখ্যার বেশিরভাগই বয়স্ক বা যারা এমন অবস্থায় রয়েছেন। তিনি আরও বলেন যে, ভাইরাসটি কোনো গাণিতিক সূত্র অনুসরণ করছে না।
এমন কিছু মানুষ রয়েছেন যারা কম বয়সী এবং যারা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বলছে, “আমাদের কাছে থাকা তথ্যাদি বলছে ৬০ বছরের চেয়ে বেশি বছর বয়সীরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন, তরুণরা, এমনকি শিশুরাও মারা যাচ্ছে” ।
২,০০০ এরও অধিক ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে চীনের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, “চিকিৎসাগত ক্ষেত্রে Covid-19 এর প্রভাব প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের চেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে কম গুরুতর ছিল, তারপরও তারা সংক্রমিত হওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকিতে রয়েছে।
পূর্ব নির্ধারিত শর্তসমূহ
ইংল্যান্ডে ৪.৩ বিলিয়ন তরুণেরা হাঁপানিতে ভুগছেন। তাদের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে এবং তা অন্যান্য সকল বয়সের লোকদের জন্য ক্ষতিকর।
২০১৩ সালে, জাতীয় পরিসংখ্যানের একটি অফিস শেষবারের মত সাধারণ জীবনযাত্রার উপর সমীক্ষা চালিয়েছিল, যেখানে ২৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী মানুষদের মধ্যে ২১ শতাংশের দীর্ঘমেয়াদী কোনো না কোন একটি অসুস্থতার কথা বলা হয়েছিল। কিছু কিছু ব্যাপার সম্পর্কে তারা অবগত ছিলনা।
ভাইরাস ছড়িয়ে পড়াকে বন্ধ করুন
কম বয়সী মানুষদের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ থাকলেও তারা অন্যান্যদের মধ্যে ভাইরাসটিকে ছড়িয়ে দিতে পারে।
তাদের হয়ত কম বা নেই বা তারা জানেই না যে তারা ভাইরাসটির দ্বারা সংক্রমিত।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে, করোনাভাইরাস ফ্লুয়ের চেয়েও অধিক সংক্রামক একটি ভাইরাস। তারা মনে করছেন, ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তির দ্বারা আরো ২-৩ জন সংক্রমিত হন।
সেই ২-৩ জন আরও ২-৩ জনকে সংক্রমিত করেন এবং এভাবে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর মানে দাঁড়ায় কম সংখ্যক মানুষের থেকে খুবই দ্রুত শতাধিক এবং হাজারে হাজারে মানুষ আক্রান্ত হয়। সামাজিক দূরত্বই পারে সংক্রমণের এই শিকলকে ভাঙতে।
Source: BBC NEWS