প্রথম দফা এবং দ্বিতীয় দফার বন্যায় এখন পর্যন্ত দেশের ১৮ টি জেলা প্লাবিত হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাড়ে বাইশ লক্ষ মানুষ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজার হাজার হেক্টরের ফসলি জমি। ইতিমধ্যে বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাব ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া এবারের বন্যায় দেশের বিভিন্ন জেলায় মোট আটজনের প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানা যায়।
এদিকে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় পদ্মা অববাহিকায় পানি বাড়বে বলে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। আজ বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই ২০২০) সচিবালয়ে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান প্রতিমন্ত্রী।
এসময় তিনি বলেন, দেশের ১৮ টি প্লাবিত জেলাগুলোর উপজেলা ৯২টি ও ৫৩৫টি ইউনিয়নে বন্যায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ২২ লাখ ৪৬ হাজার ৪৭২ জন। এরমধ্যে পানিবন্দি হয়েছেন ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭৬টি পরিবার।
বন্যায় আটজনের প্রাণহানি সম্পর্কে তিনি জানান, এবারের বন্যায় ৮ জনের প্রানহানি ঘটেছে। এদের মধ্যে জামালপুরে চারজন এবং লালমনিরহাট, সুনামগগঞ্জ, সিলেট ও টাঙ্গাইলে একজন করে মোট আটজন মারা গেছেন।
বন্যা সম্পর্কে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আমরা আশা করছি এবারের বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। কারণ নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। যেসব নদীর পানি বাড়ছে সেগুলোর পানি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কমতে শুরু করবে বলে পূর্বাভাসে জানা যায়। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি স্থিতিশীল রয়েছে। অপরদিকে যমুনা নদীর পানি বাড়ছে। তবে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমতে শুরু করবে এবং যমুনা নদীর পানি স্থিতিশীল হবে।
এছাড়া গঙ্গা-পদ্মার নদীর পানি বাড়ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত এ পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। কুশিয়ারা ছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘনার প্রধান নদীগুলোর পানি কমছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
বন্যা পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট, সুনামগঞ্জ ও কুড়িগ্রাম জেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে। অপরদিকে গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, নাটোর ও নওগাঁ জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। এছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, রাজবাড়ী ও ঢাকার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ১২ জেলায় এক হাজার ৫৪৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ৩০ হাজার ৭০৫ জন মানুষ এবং ৫৬ হাজার ৩১টি গবাদিপশু আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আনসার, গ্রাম পুলিশ, স্বেচ্ছাসেবক ও এনজিও প্রতিনিধিরা কাজ করছেন।
এছাড়া করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে আশ্রয়কেন্দ্রে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সবাইকে মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমি সম্পর্কে তিনি বলেন, পাট, ডাল ও শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে। আমন ধানের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কৃষি মন্ত্রণালয় উঁচু জায়গায় আমনের বীজতলা করে কৃষকদের বিনামূল্যে তা সরবরাহ করবে।
ত্রাণ কার্যক্রম ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ৪ হাজার ৮৫০ টন চাল বিতরণ এবং এক কোটি ৯১ লাখ টাকা নগদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার ৮২২ প্যাকেট। শিশুখাদ্য কেনা বাবদ ২১ লাখ ও পশু খাদ্যের জন্য ২১ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে।