29 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
সকাল ৭:৫৮ | ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
প্রাকৃতিক দুর্যোগ

উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও মধ্যাঞ্চলে বন্যার অবনতি

উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও মধ্যাঞ্চলে বন্যার ব্যাপক অবনতি হয়েছে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্রের পানি যমুনা হয়ে পদ্মায় প্রবাহিত হওয়ায় মধ্যাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এছাড়া পানি কমতে শুরু করলেও এলাকাগুলোতে নদীভাঙন ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে। উত্তরাঞ্চল ও  মধ্যাঞ্চল দুই অঞ্চলেই ভাঙন দেখা দিয়েছে।  ভাঙনের করালগ্রাসে বসতভিটা আর জমিজমা হারিয়ে হাজার হাজার মানুষ আজ নিঃস্ব।

কুড়িগ্রাম থেকে গাইবান্ধা হয়ে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জসহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নদীভাঙন তীব্র হতে শুরু করেছে। নদী নিয়ে কাজ করা গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছর ধরে দেশে নদীভাঙনের পরিমাণ কমছে। কিন্তু এ বছর বন্যার কারণে তা বাড়তে পারে।

সংস্থাটি গত জুন মাসেই পূর্বাভাস দিয়েছিল, এ বছর ২ হাজার ৩৬৫ হেক্টর এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। নিঃস্ব হতে পারে ২৩ হাজার মানুষ। তবে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণে সংস্থাটির গবেষকেরা এখন বলছেন, পূর্বাভাসের তুলনায় ভাঙনের পরিমাণ ৩০ শতাংশ বাড়তে পারে এবং নিঃস্ব হতে পারে ৩০ হাজার মানুষ।

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে ভাঙন রোধে সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে সেখানে তিন বছর ধরে তেমন ভাঙন দেখা দেয়নি। কিন্তু গত দুই সপ্তাহে এ উপজেলার অন্তত চারটি চর যমুনার বুকে বিলীন হয়ে গেছে। এতে অন্তত চার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। গতকাল শুক্রবারই এই উপজেলায় ধনার চর নামের একটি বসতি ভাঙনের কারণে যমুনার বুকে বিলীন হয়ে গেছে। এর দুই দিন আগে গেছে আউচারপাড়া নামের আরেকটি চর।

আউচারপাড়া গ্রামের কৃষক ফরহাদ হোসেন খন্দকার ১০ বিঘা জমিতে পাট, ধান ও সবজি চাষ করেছিলেন। তাঁর ফসলি জমি তো গেছেই, বাড়িঘরও যমুনায় চলে গেছে। এখন পাশের গ্রামের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার আশ্রয়কেন্দ্রেই তাঁর সঙ্গে কথা হয়। হঠাৎই অসহায় হয়ে পড়া এই মানুষটি বললেন, এক মাস আগেও তাঁর বাড়িতে অভাবে পড়া লোকজন আসত। এখন তিনি নিজেই এই বন্যা–বৃষ্টির মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে কোনো রকমে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছেন।

গত সপ্তাহ থেকে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ি ইউনিয়নের বেলাহাটি গ্রামের ফসলি জমি ধীরে ধীরে যমুনার পেটে চলে যেতে থাকে। সেই ভাঙন তীব্র হয়ে এখন বসতভিটা এলাকাও গ্রাস করা শুরু করেছে। এমনকি ভাঙনের কারণে ঢাকার পাশের নবাবগঞ্জেও ২০০ পরিবারের বসতভিটা পদ্মার বুকে বিলীন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। গত দুই সপ্তাহে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের নদী অববাহিকাজুড়ে এই ভাঙন শুরু হয়েছে।

এ ব্যাপারে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক বলেন, ভাঙনের শিকার মানুষের জন্য সরকার বিশেষ সহায়তা দিচ্ছে। বিভিন্ন জেলায় নদীভাঙন বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ভাঙনপ্রবণ এলাকাগুলোর জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সিইজিআইএসের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, এ বছর ১২ থেকে ১৫টি জেলায় নদীভাঙন বেশি হবে। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, জামালপুর, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ঢাকার নবাবগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও শরীয়তপুর জেলা রয়েছে। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে এবার দুই দফায় বন্যা হওয়ায় সেখানে ভাঙন অন্যান্য জেলার চেয়ে বেশি হওয়ার আশঙ্কা আছে।

২০১৭ সালে শরীয়তপুরের নড়িয়াতে তীব্র ভাঙন দেখা দিলে সরকার বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়ে ওই ভাঙন রোধে পরিকল্পনা নেয় এবং তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে। গত বছর থেকে সেখানে তেমন ভাঙন নেই। কিন্তু এর আগে ভাঙনের ফলে ফসলি জমি ও বসতভিটা হারানো পরিবারগুলোর পুনর্বাসন হয়নি।

সিইজিআইএসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে দেশে বছরে ৬ হাজার ৬০০ হেক্টর এলাকা নদীভাঙনে তলিয়ে যায়। ২০১৮ সালে তা কমে ৩ হাজার ২০০ হেক্টরে নেমে আসে। চলতি বছর যে ১৬টি এলাকায় নদীভাঙন বেশি হবে, তার মধ্যে রয়েছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজীবপুর, টাঙ্গাইলের নাগরপুর ও সলিমাবাদ চরে, পদ্মা নদীর অংশে মাদারীপুরের শিবচর, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট ও পাংশা উপজেলা এবার তীব্র ভাঙনের কবলে পড়তে পারে। এসব এলাকার অনেক স্থানে ইতিমধ্যে ভাঙন শুরু হয়েছে।

জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, বন্যার মতো নদীভাঙনও প্রতিবছরের সমস্যা। বন্যা দেখা দিলে পানিবন্দী মানুষকে ত্রাণ ও অন্যান্য সহায়তা দেওয়া হয়। বন্যা চলে গেলে সবাই ওই মানুষদের কথা ভুলে যায়। তিনি বলেন, যে একবার নদীভাঙনে ফসলি জমি হারায় বা বসতভিটা যার নদীগর্ভে চলে যায়, সে প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়ে। এ ধরনের পরিবারগুলোর জন্য দীর্ঘমেয়াদে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। সূত্র: প্রথম আলো

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত