পাখি শিকার করতে আউশগ্রাম জঙ্গলে সশস্ত্র শিকারিরা, পরিকল্পনা বানচাল করল বনদপ্তর
কাটোয়া: কুয়াশায় মোড়া শীতের সকালে কয়েকশো সশস্ত্র মানুষ এগিয়ে চলেছে অজয় নদের চর ধরে। কারও হাতে তীরধনুক আবার কারও হাতে বর্শা। তাঁদের সামনের সারিতেই একদল হিংশ্র শিকারি কুকুর।
জঙ্গলের ভিতরে জবুথবু হয়ে বসে আছে অতিথি পাখির দল। গাছের নিচে কয়েকটা ময়ূর-ময়ূরী। সশস্ত্র বাহিনীর কোলাহল কানে পৌঁছতেই ভয়ে কাঠ হয়ে যায় সব পাখিরা। পাখা ঝাপটে ওড়া উড়ি শুরু করলেও অবশেষে শেষ পর্যন্ত প্রাণে রক্ষা পায় তারা।
মঙ্গলবার এই দৃশ্যের সাক্ষী থাকল পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রামের আদিবাসী জঙ্গলমহল। আদিবাসী সম্প্রদায়ের কয়েকশো লোকজন অস্ত্রশস্ত্র-সহ শিকারি কুকুরের দলকে সঙ্গে নিয়ে আউশগ্রাম জঙ্গলে ঢুকে পড়ে শিকারের উদ্দেশে। শেষ মুহূর্তে ওই শিকারি বাহিনীকে রুখতে সক্ষম হল বনদপ্তর।
বন্যপ্রাণী ও পক্ষীকূলের কার্যত ত্রাতা হয়ে দাড়ালেন আউশগ্রামের আদুরিরার বিট অফিসার আসরাফুল ইসলাম। এদিন তাঁর সক্রিয়তায় শিকারের উদ্দেশে আসা আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা জঙ্গল ছেড়ে পালিয়ে যায়।
অভিযোগ: বীরভূম জেলা থেকে অজয় নদ পেরিয়ে আউশগ্রাম জঙ্গলমহলে শিকারের উদ্দেশ্যে হানা দিয়েছিল প্রায় চার শত সশস্ত্র আদিবাসী শিকারি লোকজন। বনদপ্তর এবং স্থানীয়দের তৎপরতায় তারা একটি পশুপাখিকেও মারতে সক্ষম হয়নি এবং চাপের মুখে পালিয়ে গেছে সবাই।
জানা যায়, প্রতি বছর মাঘ মাসের প্রথম তিন মঙ্গলবার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ নিয়ম করে দলবেঁধে শিকারে বের হয়। সেই অনুযায়ী এদিন ছিল প্রথম মঙ্গলবার। সেই কারণে এদিন কাকভোরে আউশগ্রামের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের কাছে দেখা যায় অজয় নদের চর দিয়ে বীরভূম জেলা এলাকার কয়েকশো আদিবাসী সারি দিয়ে এগিয়ে আসছে। তাদের সঙ্গে প্রায় ২৫ টি শিকারি কুকুর।
তখন অতি অল্প সময়ের ভিতর ভূয়েরা বটতলার কাছে আউশগ্রাম এলাকার শতাধিক আদিবাসীও শিকারের উদ্দেশে জড়ো হয়ে গিয়েছে যার খবর মুহুর্তের মধ্যে পৌছে যায় আদুরিরার বিট অফিসার আসরাফুল ইসলামের কাছে। তিনি তার সহকর্মীদের নিয়ে পুলিশ জন্যে অপেক্ষা না করেই বীরভূমের ওই শিকারিদলের সামনাসামনি দাঁড়িয়ে পড়েন এবং তাদের বাঁধা দেন।
আসরাফুল ইসলামের কথায়, “আউশগ্রাম জঙ্গলে ইদানিং ময়ূরের সংখ্যা আনেক বেড়েছে। ময়ূরের বাচ্চারা মাঝেমধ্যেই আশপাশের গ্রামে ঢুকে পড়ে। এছাড়া প্যাঙ্গোলিন, সজারু, বনবিড়াল তো রয়েছেই। শিকারিরা একবার জঙ্গলে ঢুকে পড়লে প্রথমেই তারা ময়ূরগুলোকে টার্গেট করবে। নিঃশেষ হয়ে যাবে এইসব বন্য পশুপাখি। অনেক কষ্টে তাদের শিকার আটকে দিই।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে আসরাফুল ইসলাম এদিন শিকারি দলের সামনে গিয়ে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। বনরক্ষা কমিটির সদস্যদেরও ডাকেন বন আধিকারিক।
আসরাফুল ইসলাম সাফ জানিয়ে দেন এরপরও যদি বেআইনিভাবে কেউ বন্যপশু পাখি শিকার করার চেষ্টা করেন তাহলে চরম পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অবশেষে বীরভূম ফিরে যায় শিকারির দল।
ধীমান রায়, কাটোয়া: