অবশেষে স্বপ্ন পূরণ করছেন এরদোগান সুলতান সুলেমানের
দীর্ঘ দশ বছর ধরে নানা ধরণের জরিপ চালানোর পর অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণে কাজ শুরু করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান।
দেশটির বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলের ইউরোপীয় অংশকে ২ ভাগ করে একটি খাল খনন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তিনি। এর লক্ষ্য হচ্ছে কৃষ্ণ সাগর এবং মারমার ও ভূমধ্যসাগরের মধ্যে সংযোগ তৈরি করা। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনার ঝড় বইছে। কারন এটি সুলতান সুলেমানের স্বপ্ন ছিলো।
সুয়েজ বা পানামা খালের মতো করে কৃত্রিমভাবে খনন করা এই ‘ক্যানাল ইস্তাম্বুল’ বা ইস্তাম্বুল খালের লক্ষ্য হচ্ছে- বসফরাস প্রণালীর বিকল্প পথ তৈরি করে ওই দুই সাগরের মধ্যে আরও বেশি সংখ্যক জাহাজ চলাচলের পথ সুগম করা। অবশ্য তুরস্কের অনেকেই এই খাল খনন প্রকল্পের বিরোধিতা করেছেন।
প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, এই খাল তুরস্কের উন্নয়নে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তুর্কি প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, বসফরাস প্রণালী দিয়ে ১৯৩০-এর দশকে প্রতি বছর তিন হাজার জাহাজ পারাপার হতো, আর এখন প্রতি বছর প্রায় ৪৫ হাজার জাহাজ এই প্রণালী অতিক্রম করে।
এই শতকের মাঝামাঝি অর্থাৎ ২০৫০ সালের দিকে এই সংখ্যা ৭৮ হাজারে দাঁড়াবে বলে তিনি জানান। এতো বিপুল সংখ্যক জাহাজের চলাচল ইস্তাম্বুল শহরের পরিবেশের জন্য চরম ঝুঁকি তৈরি করবে বলে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
তবে শুধু খাল খননই নয়, বরং কথা রয়েছে যে এই প্রকল্পের আওতায় তৈরি হবে নতুন একটি আন্তর্জাতিক মানের সমুদ্র বন্দর, কন্টেইনার টার্মিনাল, কিছু কৃত্রিম দ্বীপ এবং খালের দুই পাশ বরাবর বেশ কয়েকটি আধুনিক শহর। এরদোয়ানের নেতৃত্বাধীন এ কে পার্টি ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে এক জনসভায় তিনি এই খাল খনন করার ঘোষণা করেছিলেন।
সে সময় অনেকেই এটাকে রাজনীতির চমক এবং কিছুদিন পর লোকে এর কথা ভুলে যাবে বলে মনে করলেও এরদোয়ানের সরকার ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই খাল খননের সম্ভাব্যতা নিয়ে নানা রকম পরীক্ষা চালায়।
কিন্তু বসফরাসের বিকল্প একটি খাল খনন নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছিল বেশ অনেক আগে থেকেই, সেই ওসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতান সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্টের আমলে।
সুলতান সুলেমানের আর্কিটেক্ট বা স্থপতি মিমার সিনান এই পরিকল্পনাটি তৈরি করলেও অজ্ঞাত কারণে সেটা বাতিল করা হয়। এরপর সুলতান তৃতীয় মুরাদের আমলে ১৬৯১ সালের ৬ মার্চ এই খাল খননের জন্য একটি রাজকীয় ফরমান জারি করা হয়, কিন্তু সেটিও পরে বাদ হয়ে যায়। এভাবে মোট ৭ বার খাল খননের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কখনোই বাস্তবে পরিণত হয়নি।